আটলান্টিক সনদ (Atlantic charter)

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 04/26/2012 - 17:52

আটলান্টিক সনদ (Atlantic charter)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল । ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়সীমাকে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে গণ্য করা যায় । এই সময়কার আন্তর্জাতিক ঘটনাপুঞ্জের নানা ঘাতপ্রতিঘাতের বিবর্তনের মধ্য দিয়েই সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের উৎপত্তি হয়েছে । ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আমেরিকার নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের কাছে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে 'প্রিন্স অফ ওয়েলস' নামে একটি যুদ্ধজাহাজে পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে একটি আট দফা সুত্র সম্বলিত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন । এই চুক্তিটি আটলান্টিক সনদ (Atlantic charter 1941 ) নামে পরিচিত । এই সনদে যুদ্ধ নীতি পরিত্যাগ করে পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি এবং সংঘর্ষ এড়িয়ে পারস্পরিক আলাপ আলোচনা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সকল আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত হয় ।

আটলান্টিক সনদের গুরুত্ব : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বে শান্তি প্রক্রিয়া ও বিশ্ব মানবের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সুদৃঢ় করতে আটলান্টিক সনদ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ । ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে 'লন্ডন ঘোষণা' -র পর এই সনদ প্রথম পৃথিবীর মানুষকে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠনের স্বপ্ন দেখিয়েছিল । এই সনদে বলা হয়েছিল—

(১) কোনো দেশ বা জাতি ভবিষ্যতে বিস্তার বা সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করবে না ।

(২) কোনো স্বনির্ভর জাতি তার জনগণের ইচ্ছা অনুসারে স্বাধীন সরকার গঠন করতে পারবে ।

(৩) প্রতিবেশী দেশের সম্মতি ছাড়া কোনো দেশের সীমারেখা চিহ্নিত করা যাবে না ।

(৪) বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের সমান বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থাকবে ।

(৫) নাৎসী ও ফ্যাসিস্ট শক্তির পতনের পর প্রতিটি দেশ নিজেদের উন্নতির জন্য দারিদ্র দূরীকরণ ও বিদেশি আক্রমণ মোকাবিলার জন্য কাজ করবে ।

(৬) প্রতিটি দেশ উন্নত জীবনযাত্রা ও সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে কাজ করবে ।

(৭) প্রতিটি দেশ সৈন্য, যুদ্ধজাহাজ, বিমান ও যুদ্ধের অন্যান্য উপকরণ কমাবে ।

(৮) সমুদ্রপথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের সুযোগ থাকবে ।

পৃথিবীর মোট ২৬টি দেশ এই আটলান্টিক সনদকে সমর্থন করেছিল ।

*****

Related Items

কাশ্মীর রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি

কাশ্মীর রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি (Annexation of Kashmir):-

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দু

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি (Annexation of Hyderabad):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' -এ বলা হয় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের সম্পাদিত চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটবে ।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক (Initiatives Undertaken and Controversies Related to the Accession of Princely State with India):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭ - ১৯৬৪)

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭ - ১৯৬৪) [Post-Colonial India : Second Half od the 20th Century (1947-1964)]:-

দীর্ঘদিনের ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আত্মবলিদানের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা

বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন

হিন্দু জাতিভুক্ত নিম্নবর্গীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নমঃশূদ্র সম্প্রদায় ছিল ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার উল্লেখযোগ্য দলিত হিন্দু সম্প্রদায় । নমঃশূদ্ররা হিন্দু জাতিভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত । নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছিল । ...