আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 02/08/2021 - 22:48

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women's Participation in the Civil Disobedience Movement):-

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সারা বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় । এই অর্থনৈতিক মন্দা ঔপনিবেশিক ভারতের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে । ভারতের কৃষিজাত পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক হারে কমে যায় । কৃষকদের ওপর ধার্য কর ও রাজস্ব দেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে । উপরুন্তু জমিদার ও সরকার কেউই সমানুপাতিক হারে কর বা খাজনার পরিমান হ্রাস না করায় কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে । এই পরিস্থিতিতে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৬ই এপ্রিল গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করে । 

আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে বোম্বাই, বাংলা ও মাদ্রাজ ছাড়াও উত্তর ভারতের এলাহাবাদ, লখনউ, দিল্লি, লাহোর ইত্যাদি অঞ্চলে নারীরা সক্রিয়ভাবে আইন অমান্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন । বাংলায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশাপাশি কৃষক পরিবারের মেয়েরাও এই আন্দোলনে যোগদান করেন । গান্ধিজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় -এর নেতৃত্বে ১৫ হাজার সত্যাগ্রহী ওয়াদালা লবণ কারখানায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন । সরোজিনী নাইডু ধারসানার লবনগোলা সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন । অবন্তিকা বাঈ গোখেল সহ বহু মহিলা স্বেচ্ছাসেবিকা সমুদ্রের জল দিয়ে লবণ বানিয়ে লবণ আইন ভঙ্গ করেন । নারী সত্যাগ্রহ কমিটি, নিখিল জাতীয় নারীসংঘ, মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘ ইত্যাদি একাধিক নারী সংগঠন বাংলায় গড়ে ওঠে । কলকাতায় শান্তি দাসের নেতৃত্বে ইন্দুমতি গোয়েঙ্কা, সজ্জন দেবী প্রমূখ বাঙালি, অবাঙালি মহিলা সভা-সমিতি, শোভাযাত্রা ও পিকেটিং -এ যোগদান করেন । কস্তুরবা গান্ধি, সরোজিনী নাইডু, বাসন্তী দেবী, কমলা নেহেরু, স্বরূপরানি নেহেরু, উর্মিলা দেবী, সরলাবালা দেবী, লীলা নাগ, রাজকুমারী অমৃত কাউর, নেলী সেনগুপ্তা প্রমূখ নারী এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন । মুসলিম নারীরাও উৎসাহের সঙ্গে এই আন্দোলনে শামিল হন । মুসলিম মহিলা জোবেদা খাতুন -এর নেতৃত্বে শ্রীহট্ট মহিলা সংঘ রাষ্ট্রীয় সম্মেলনের আয়োজন করে । এই সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বসু, উর্মিলা দেবী, শান্তি দাশ প্রমূখ যোগদান করেন । এ ছাড়াও দৌলত উন্নিসা খাতুন, রাজিয়া খাতুন, হালিমা খাতুন, হোসেনারা বেগম প্রমুখ মুসলিম মহিলারা আইন অমান্য আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ।

ভারতের নারীসমাজ ব্যাপকভাবে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় কেউ কেউ এই আন্দোলনকে ভারতের নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রথম ধাপ বলে উল্লেখ করেছেন । এই আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় অংশ গ্রহণের প্রেক্ষাপটে গান্ধিজি তাঁর 'ইয়ং ইণ্ডিয়া' পত্রিকায় লেখেন—নারীদের দুর্বল ভাবা মূর্খামি ।

*****

Comments

Related Items

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন (The anti-Partition Movement and the Peasant):-

ভারতবর্ষের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষদের জীবিকা ছিল কৃষির ওপর নির্ভরশীল । ঔপনিবেশিক শাসনকালে ব্রিটিশদের কৃষিনীতি ভীষণভাবে কৃষক স্বার্থবিরোধী ছ

বিশ শতকের ভারতে কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য (The Peasants Movements in the Twentieth Century):- বিশ শতকের ভারতে সংঘটিত কৃষক আন্দোলনগুলি পর্যালোচনা করলে আন্দোলনগুলির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় । যেমন —

বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা (Peasant, Working Class and Left Movements in Twentieth Century):-

ভারতবর্ষ কৃষিনির্ভর দেশ । ভারতবর্ষের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষদের জীবিকা ছিল কৃষির ওপর নির্ভর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শান্তিনিকেতন ভাবনা এবং বিশ্বভারতীর উদ্যোগ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শান্তিনিকেতন ভাবনা এবং বিশ্বভারতীর উদ্যোগ — প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় (Education in Harmony with Nature) :-

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতির কঠোর সমালোচনা করলেও তিনি ইংরেজি বা পাশ্চাত্য শিক্ষার বিরোধী ছিলেন না

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা (Critique of Colonial Ideas Regarding Education):-

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাপর্বে বাংলা তথা ভারতের শিক্ষার্থীরা পাঠশালা, টোল, মক্তব ও মাদ্রাসা থেকে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি -র মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করত । এসব প্রতি