অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 02/03/2021 - 22:55

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Non Co-operation Movement and the Working Class):- 

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় সারা ভারতে শ্রমিকরা আন্দোলনে শামিল হয় । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী ওঠে । শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো, বেতন বৃদ্ধি করা, ভারতীয়দের হাতে স্বায়ত্তশাসন দান প্রভৃতি অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানকারী শ্রমিকদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রায় সমস্ত শিল্পক্ষেত্রেই শ্রমিক ধর্মঘট পালিত হয় । শুধু বাংলাতেই প্রায় ১৩৭টি শ্রমিক ধর্মঘট হয় । টাটা লৌহ ও ইস্পাত কারখানায় প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে । অসমের চা বাগানের কুলিদের ওপর কুমিল্লা চাঁদপুরে গোর্খা সেনারা গুলি চালালে ইস্টবেঙ্গল রেল ও স্টিমার কোম্পানির শ্রমিকরা চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলে । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে এবং ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কলকাতার ট্রাম কোম্পানির কর্মীরা ধর্মঘট পালন করে । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, দিল্লী ও সিমলার সরকারি প্রেসে ধর্মঘট পালিত হয় । কোনো এক ইউরোপীয় অফিসার শ্রমিকের মাথা থেকে গান্ধি টুপি খুলে নিলে তার প্রতিবাদে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ডিসেম্বর কলকাতা ডকের প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করে ধর্মঘটে শামিল হয় । ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে প্রিন্স অব ওয়েলস ভারতে এলে জাতীয় কংগ্রেস বয়কটের ডাক দেয় এবং এর সমর্থনে শ্রমিকরা ভারতব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয় । বোনাসের দাবিতে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের সুরাটে প্রায় ৩ হাজার সুতাকল শ্রমিক ধর্মঘটে শামিল হয় । আমেদাবাদের বস্ত্রশিল্পে ২০ শতাংশ মজুরি কমিয়ে দেওয়া হলে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করে । ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে মজুরি কমানোর প্রতিবাদে বোম্বাই -এ বস্ত্রশিল্প কারখানাগুলিতে ১.৫ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক ধর্মঘট করে । বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে শ্রমিকরা একটানা ২৬ দিন ধর্মঘট চালায় । লিলুযার রেলশ্রমিকরা এবং চেঙ্গাইল বাউরিয়ার চটকল শ্রমিকরাও ধর্মঘটে শামিল হয় ।

১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে অক্টোবর নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস বা AITUC (All India Trade Union Congress) প্রতিষ্ঠিত হয় । নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি হন লালা লাজপত রায় ও সহ-সভাপতি হন জোসেফ ব্যাপ্তিস্তা এবং দেওয়ান চমনলাল প্রথম সাধারণ সম্পাদক হন । বোম্বাইতে নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে লালা লাজপত রায় ভারতীয় শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান এবং জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আবেদন জানান । পরবর্তী তিনটি অধিবেশনে শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় ও শ্রমিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে শ্রমিকদের ওপর পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের প্রতিবাদ করা হয় । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রমিক সংগঠনে পূর্ণ সমর্থন জানানো হয় । ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হলে কমিউনিস্টের নেতৃত্বে শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপক প্রসার ঘটে । সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে ভারতীয় শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করে নিজেদের আর্থিক দাবিদাওয়ার বাইরে বেরিয়ে এসে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদেরকে যুক্ত করে ।

*****

Comments

Related Items

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (U.N.O) প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোচনা কর । জাতিপুঞ্জের প্রধান সংস্থাগুলির নাম কর ।

প্রশ্ন : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (U.N.O) প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোচনা কর । জাতিপুঞ্জের প্রধান সংস্থাগুলির নাম কর ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংক্ষেপে লেখ ।

প্রশ্ন : ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংক্ষেপে লেখ ।

প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা

সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর ।

ভারতের বিচারব্যবস্থার শীর্ষে আছে সুপ্রিমকোর্ট । এই সুপ্রিমকোর্ট একাধারে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত এবং আপিল আদালত হিসেবে কাজ করে ।

রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা কর ।

প্রশ্ন :  রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা কর ।

(১) রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেন রাজ্যপাল । রাজ্য প্রশাসনের সমস্ত ক্ষমতা তাঁর ওপর ন্যস্ত থাকে ।

ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তাৎপর্য ও জাতীয় কংগ্রেসের সাফল্য সম্পর্কে লেখ ।

প্রশ্ন : ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তাৎপর্য ও জাতীয় কংগ্রেসের সাফল্য সম্পর্কে লেখ ।