অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 02/08/2021 - 20:05

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women and the Non Co-operation Movement):-

মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দমনমূলক রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড প্রভৃতির প্রতিবাদে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলে নারীসমাজও এই আন্দোলনে যোগদান করে । অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে প্রাথমিকভাবে জাতীয় কংগ্রেসের তরফ থেকে নারীদের ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দিয়ে বলা হয় নারীসমাজ কেবলমাত্র বিদেশি দ্রব্য বয়্কট ও স্বদেশি দ্রব্য গ্রহণে অংশ গ্রহণ করবেন । নারীসমাজ জাতীয় কংগ্রেসের এই ঘোষণায় সন্তুষ্ট না হয়ে জাতীয় আন্দোলনে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণের দাবি জানিয়ে দেশের নানা প্রান্তে সভা, শোভাযাত্রা ও পিকেটিং -এ যোগদান করে । এমনকি নারীরা স্বেচ্ছায় কারাবরণও করেন । অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন চলাকালীন বিলাতি পণ্য বয়কট, বিলাতি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং, মিছিল ও মিটিং -এ অংশ নিয়ে হিন্দু মহিলাদের সঙ্গে মুসলমান মহিলারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স অব ওয়েলস ভারত সফরে এলে বোম্বাই -এ হাজার হাজার মহিলারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন । চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তীদেবী দাশ, ভাইঝি সুনীতি দেবী দাশ, বোন্ উর্মিলা দেবী দাশ প্রমুখ চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে কলকাতার রাস্তায় প্রকাশ্যে বিক্ষোভ দেখিয়ে কারাবরণ করেন । ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে নেলী সেনগুপ্তের নেতৃত্বে স্টিমার ধর্মঘট হয় । জাতীয় কংগ্রেস প্রস্তাবিত 'তিলক স্মৃতি তহবিল' -এ গ্রামের মহিলারা নিজেদের অর্থ এবং গহনা দান করে আন্দোলনকে সফল করার উদ্যোগ নেন । তারা চরকায় সুতা কেটে এবং কাপড় বুনে দেশাত্মবোধের নিদর্শন তুলে ধরেন । উর্মিলা দেবী দাশের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় 'নারী কর্মমন্দির' । রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন অহিংস অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে স্বাদেশিকতার আদর্শ প্রচার করেন ।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করে । আন্দোলনে নারীদের সক্রিয়তায় উৎসাহিত হয়ে জাতীয় কংগ্রেস এই সময় নারীদের জন্য সদস্যপদ গ্রহণের দরজা খুলে দেয় । 

*****

Comments

Related Items

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (The Civil Disobedience Movement and the Working Class) :-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শ্রমিকরা এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট শ

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (Workers and Peasants Party) :-

কুতুবুদ্দিন আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক হেমন্ত সরকার, সামসুদ্দিন হোসেন প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর বাংলায় 'লেবার স্বরাজ পার্টি অব দা ইন্ডিয়ান

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Non Co-operation Movement and the Working Class):- 

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় সারা ভারতে শ্রমিকরা আন্দোলনে শামিল হয় । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী ওঠে । শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো, ব

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Anti-Partition Movement and the Working Class):-

ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা না করলেও ভারতের নিম্নবর্গের মানুষ বিশেষত শ্রমিক

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য (Working Class Movement in the Twentieth Century):-

দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা চলার পর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ই নভেম্বর জার্মানি আত্মসমর্পণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান  ঘটে । বিশ শ