কোল বিদ্রোহের কারণ কী ? এই বিদ্রোহের ব্যাপ্তি ও ফলাফল আলোচনা কর ।

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 01/07/2022 - 20:35

প্রশ্ন:-  কোল বিদ্রোহের কারণ কী ? এই বিদ্রোহের ব্যাপ্তি ও ফলাফল আলোচনা কর ।

কোল বিদ্রোহের কারণ : উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যেসব আদিবাসী বিদ্রোহ ঘটে, তাদের মধ্যে কোল বিদ্রোহ ছিল অন্যতম । সুপ্রচীনকালেই ‘কোল’ নামে এক আদিম উপজাতি বর্তমান বিহারের সিংভূম, মানভূম, ছোটোনাগপুর প্রভৃতি অঞ্চলে বসবাস শুরু করে । কোলরা হো, মুন্ডা, ওরাওঁ প্রভৃতি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল । অন্যান্য আদিম জাতিগুলির মতো কোলরাও ছিল কৃষিজীবী । নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবে ইংরেজ সরকার বহিরাগত লোকদের কোল সম্প্রদায়ের জমিদার হিসাবে নিযুক্ত করেন । তারা চড়া হারে রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বিচার ও আইন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে কোল সমাজের ওপর আঘাত হানে । এইসব শোষণ ও বঞ্চনা থেকেই ১৮৩১ সালে কোল বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় ।

বিদ্রোহের ব্যাপ্তি ও দমন : রাঁচি, হাজারিবাগ, সিংভূম, পালামৌ প্রভৃতি অঞ্চলে কোল বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে । সিংরাই, বুদ্ধ ভগৎ, জোয়া ভগৎ প্রভৃতি নেতাগণ এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন । কোল বিদ্রোহের পাশাপাশি মানভূমের ভূমিহীন জনসাধারণ বিদ্রোহী হয়ে সরকারি কাছারি ও পুলিশ ঘাঁটিতে আগুন লাগিয়ে দেয় । শেষ পর্যন্ত সৈন্যবাহিনী নিয়োগ করে এই বিদ্রোহ দমন করতে হয় । কোল বিদ্রোহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, বিদ্রোহ চলাকালীন সময়ে কোলদের ঐক্যবদ্ধ রূপ । তাছাড়া বিদ্রোহীদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ ছিল ইংরেজ ও বহিরাগত জমিদারবর্গ । চার্লস মেটকাফের মতে তাদের উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটানো ।

ফলাফল : কোল বিদ্রোহের পরে উপজাতিদের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি নামে একটি ভূখন্ড নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় । এছাড়া এই ভূখন্ডে প্রচলিত ব্রিটিশ আইন কার্যকর করা হবে না বলে ঘোষণা করা হয় । এসব সত্ত্বেও খাজনার হার ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শোষণের মাত্রাও হ্রাস পায়নি ।

*****

Comments

Related Items

ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫

১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে লন্ডনে তৃতীয় গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় । কংগ্রেস যথারীতি ওই বৈঠকে যোগদান করেনি । অন্যান্য দল ও সম্প্রদায়ের অনেক কম সংখ্যক প্রতিনিধি এই বৈঠকে যোগদান করেছিলেন । তাঁরা ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রে কয়েকটি প্রগতিশীল ব্যবস্থা গ্রহণ ...

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তার কারণ (Causes of The Second World War)

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করলে জার্মানির প্রতি তোষণ নীতি ত্যাগ করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩রা সেপ্টেম্বর যুদ্ধ ঘোষণা করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় । বিশ্বের তাবৎ শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি এক এক পক্ষ নিয়ে এই যুদ্ধে যোগদান ...

জাতি সংঘের ব্যর্থতা (Failure of the League of Nations)

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান এবং সেই সঙ্গে বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ২৮শে এপ্রিল মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের ঘোষিত 'চৌদ্দ দফা' দাবির ভিত্তিতে লিগ অফ নেশনস বা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হয় । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই জানুয়ারি উড্রো উইলসনের ...

পরস্পর বিরোধী সামরিক জোট গঠন

জার্মানি, ইটালি ও জাপানের ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপে গণতন্ত্রের চরম বিপর্যয় ঘটে । জার্মানির কমিউনিস্ট বিরোধিতার সুযোগে জাপান ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে নভেম্বর জার্মানির সঙ্গে 'কমিণ্টার্ন বিরোধী চুক্তি স্বাক্ষর করে' । ...

গণতন্ত্রের বিপর্যয় (Collapse of Democracy)

১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে হিটলার চ্যান্সেলার হওয়ার পর থেকে ইউরোপে দ্রুত গতিতে গণতন্ত্রের বিপর্যয় ঘটতে থাকে । ঐতিহাসিক এরিখ হবসন এক পরিসংখ্যানে দেখিয়েছেন - ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বে ৩৫টির বেশি গণতান্ত্রিক সরকার ছিল । ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তা কমে ১৭টিতে দাঁড়ায় । ...