Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 08/29/2021 - 11:10

স্থানীয় বায়ু (Local Wind) : ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে বাযুর তাপ ও চাপের পার্থক্যের কারণে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে যে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, তাদের স্থানীয় বায়ু বলে । স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ দুই প্রকারের হয়ে থাকে, যথা— (১) উষ্ণ স্থানীয় বায়ু এবং (২) শীতল স্থানীয় বায়ু ।

(১) উষ্ণ স্থানীয় বায়ু : ফন, চিনুক (তুষার খাদক), সিরোক্ক, লু প্রভৃতি উষ্ণ স্থানীয় বায়ুর উদাহরণ ।

(i)  ফন (Fohn) : শীতকালে ইউরোপের আল্পস পার্বত্য অঞ্চল থেকে জার্মানির রাইন নদীর উপত্যকার দিকে এক রকমের আর্দ্র ও উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হয় । এর নাম ফন । এর প্রভাবে রাইন উপত্যকা ও আল্পস পর্বতের উত্তর ঢালের বরফ গলে যায় এবং হিমানী সম্প্রপাত ঘটে ।

(ii) চিনুক (তুষার খাদক) (Chinook) : চিনুক এক প্রকার উষ্ণ স্থানীয় বায়ু । শীতকাল ও বসন্তকালে উত্তর আমেরিকার রকি পার্বত্য অঞ্চল থেকে প্রেইরি অঞ্চলের দিকে এক রকমের উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু পর্বতের গা বেয়ে প্রবাহিত হয় ও নীচের দিকে নেমে আসে । এর নাম চিনুক । এর প্রভাবে প্রেইরি অঞ্চলের উষ্ণতা প্রায় ১৫° - ২০° সে. বেড়ে যায় এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জমা বরফ গলে যায় । এজন্য এই বায়ুপ্রবাহকে রেড ইন্ডিয়ানরা স্নো ইটার (Snow Eater) বা তুষার খাদক বলে ।

(iii) সিরোক্ক (Sirocco) : সিরোক্ক এক প্রকার উষ্ণ স্থানীয় বায়ু । গ্রীষ্মকালে আফ্রিকার লিবিয়া মরুভূমি থেকে এক ধরনের অতি উষ্ণ, শুষ্ক ও ধূলিপূর্ণ বায়ুপ্রবাহ উৎপন্ন হয়ে ভূমধ্যসাগরের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে, এই বায়ুপ্রবাহকে সিরিক্কো [Sirocco] বলে । ভূমধ্যসাগর অতিক্রম করার সময় এই বায়ু জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে আর্দ্র ও উষ্ণ বায়ুতে পরিণ হয় এবং সিসিলি দ্বীপ, দক্ষিণ ইটালি প্রভৃতি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে । ইউরোপের দক্ষিণ প্রান্তের কোনো কোনো অংশে লাল বা হলুদ ধূলিপূর্ণ বায়ুর জন্য লাল বা হলুদ বৃষ্টিপাত হয় । এর ফলে ইটালির জলপাই চাষে যথেষ্ঠ ক্ষতি হয় । 

(iv) লু (Loo) : উত্তর-পশ্চিম ভারতের এক প্রকার উষ্ণ স্থানীয় বায়ুর নাম 'লু' । গ্রীষ্মকালে বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে দিনের বেলা ভারতের উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার প্রভৃতি অঞ্চলে মাথার ওপর লম্বভাবে প্রচন্ড সূর্যকিরণের ফলে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হওয়ার জন্য শোঁ-শোঁ শব্দ করে যে উত্তপ্ত বায়ু প্রচন্ড বেগে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে লু বলে । এই বায়ু খুব উষ্ণ, শুষ্ক ও পীড়াদায়ক । লু-এর প্রভাবে বায়ুর তাপমাত্রা বাড়ে ।

(২) শীতল স্থানীয় বায়ু : মিস্ট্রাল, বোরা হল শীতল স্থানীয় বায়ুর উদাহরণ ।

(i) মিস্ট্রাল (Mistral) : শীতকাল ও বসন্তকালে ইউরোপের আল্পস পর্বত থেকে দক্ষিণ ফ্রান্সের রোন উপত্যকার দিয়ে ভূমধ্যসাগরের অভিমুখে একরকমের শীতল ও শুষ্কবায়ু প্রবল গতিতে প্রবাহিত হয়, এই বায়ুপ্রবাহকে মিস্ট্রাল বলে । এই বায়ুর প্রভাবে রোন উপত্যকার তাপমাত্রা যথেষ্ট কমে যায় ও পরিষ্কার ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়ার সৃষ্টি করে ।

(ii) বোরা (Bora) : শীতকালে ইউরোপের আল্পস পর্বত থেকে দক্ষিণ ইটালির আড্রিয়াটিক সাগরের উপকুলের দিকে এক রকমের শীতল ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়, এই বায়ুপ্রবাহকে বোরা বলে । এই বায়ু ঘন্টায় ১০০ কিমিরও বেশি গতিবেগে প্রবাহিত হয় । এই বায়ুর প্রভাবে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা কমে যায় শীতলতাকে বাড়িয়ে তোলে ।

****

 

 

 

Comments

Related Items

পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effect of wastes on environment)

পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effect of wastes on environment) : বর্জ্য পরিবেশকে নানাভাবে প্রভাবিত করে থাকে । যেমন — (ক) ভূপৃষ্ঠস্থ জলের কলুষিতকরণ, (খ) মৃত্তিকা সংক্রমণ, (গ) দূষণ, (ঘ) লিশেট ইত্যাদি ।

বর্জ্যের উৎস (Source of waste)

বর্জ্যের উৎস (Source of waste) : বর্তমান আধুনিক নাগরিক সভ্যতায় মানুষের নানাবিধ কার্যকলাপেরপরিধিই হল বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্র । বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্রগুলি হল — (১) গৃহস্থালির বর্জ্য, (২) শিল্প বর্জ্য, (৩) কৃষিজ বর্জ্য,  (৪) পৌর

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste)

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste) : বিভিন্ন কারণে পরিবেশে নানা প্রকারের বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে । বর্জ্য পদার্থ তিন প্রকার, যেমন— (ক) কঠিন বর্জ্য, (খ) তরল বর্জ্য ও (গ) গ্যাসীয় বর্জ্য ।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management)

বর্জ্যের ধারণা (Concept of Waste) : 'বর্জ্য' কথাটির অর্থ হল 'যা বর্জনযোগ্য' । যে-কোনো কঠিন, তরল অথবা গ্যাসীয় সম্পদকে প্রাথমিকভাবে ব্যবহারের পরে যে মূল্যহীন, নষ্ট বা খারাপ হয়ে যাওয়া অব্যবহার্য বস্তু পড়ে থাকে, যা সরাসরি মানুষের কাজে না লেগে পরিবেশ দূষণ

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?