বায়ুর উষ্ণতা (Air Temperature) : বায়ুর উষ্ণতা বলতে বায়ুর তাপমাত্রাকে বোঝায় । বায়ুর উষ্ণ এবং শীতল অবস্থার তুলনামূলক পরিমাপকেই বায়ুর উষ্ণতা বলা হয় । সূর্যকিরণ হল বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার প্রধান উৎস । সূর্যের তাপ গ্রহণ বা তার প্রতিফলন ঘটিয়ে বায়ু উষ্ণ বা শীতল হয়ে ওঠে ।
সূর্য রশ্মির তাপীয় ফল বা ইনসোলেশন (Insolation) : সূর্যের বহিঃপৃষ্ঠের উষ্ণতা প্রায় ৬০০০° সে. । সূর্যপৃষ্ঠ থেকে যে তাপশক্তি বিকিরিত হয় তার প্রায় ২০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ মাত্র ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে আলোক তরঙ্গের গতিবেগে পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় । আলোক তরঙ্গের গতিবেগ হল প্রতি সেকেণ্ডে ২,৯৭,০০০ কিমি. । সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত এই তাপশক্তিকে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বা ইনসোলেশন বলে । আর এই তাপশক্তিই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে ।
ইনসোলেশন বন্টন : সূর্য থেকে পৃথিবীতে যে তাপশক্তির এসে পৌঁছয় তার শতকরা ১৯ ভাগ বায়ুমণ্ডল প্রত্যক্ষভাবে শোষণ করে নেয় এবং শতকরা ৪৭ ভাগ ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায় । অর্থাৎ সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত তাপশক্তির শতকরা ৬৬ ভাগ তাপশক্তি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে তোলে । একে কার্যকরী সৌর বিকিরণ (Effective Solar Radiation) বলে । ইনসোলেশনের অবশিষ্টাংশ অর্থাৎ শতকরা ৩৪ ভাগ তাপশক্তির ২৫ ভাগ মেঘপুঞ্জ থেকে, ৭ ভাগ বায়ুমণ্ডল থেকে এবং ২ ভাগ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতিফলিত ও বিচ্ছুরিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায় । এই ৩৪ ভাগ সূর্যশক্তি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করতে পারে না । একে পৃথিবীর অ্যালবেডো (Albedo) বলে ।
পৃথিবীর উত্তাপের সমতা : ইনসোলেশনের দ্বারা পৃথিবীতে যে সৌরশক্তি এসে পৌঁছয় এবং পৃথিবী থেকে বিকিরিত সৌরশক্তির মধ্যে যে প্রকৃত ভারসাম্য রক্ষিত হয়, তাকে পৃথিবীর উত্তাপের সমতা বলে । সূর্য থেকে আগত সৌর বিকিরণের শতকরা ৩৪ ভাগ তাপশক্তি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত না করেই মহাশূন্যে ফিরে যায় । বাকি শতকরা ৬৬ ভাগ সৌরশক্তি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে থাকে । ঠিক সমপরিমাণ তাপশক্তি আবার পৃথিবী থেকে বৃহৎ তরঙ্গরূপে বিকিরিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায় । ফলে পৃথিবীর গড় বার্ষিক উত্তাপের তেমন হ্রাস-বৃদ্ধি হয় না ও পৃথিবীর উত্তাপের সমতা বজায় থাকে ।
*****