মাটি কাকে বলে এবং মাটির উৎপত্তি কীভাবে হয় ?

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 12/27/2021 - 15:38

প্রশ্ন:- মাটি কাকে বলে এবং মাটির উৎপত্তি কীভাবে হয় ?

মাটি :- ভূত্বকের উপরিভাগের ক্ষয়ে যাওয়া শিলাচূর্ণের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের জৈব্য ও অজৈব বস্তুর সংমিশ্রণে গঠিত যে নরম ও অসমসত্ত্ব আবরণ স্তরে গাছপালা জন্মায়, তাকেই মাটি বলে ।

মাটির উৎপত্তি :-  ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে, সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর পৃথিবী প্রথমে গ্যাসীয় বা বায়বীয় অবস্থায় ছিল । পরে তাপ বিকিরণের ফলে পৃথিবী তরল অবস্থায় আসে এবং ক্রমাগত তাপ বিকিরণের ফলে ঠান্ডা হয়ে শক্ত পিণ্ডে পরিণত হয় । এই শক্ত পিণ্ডকে শিলা বলে । কঠিন শিলা প্রাকৃতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক বিক্রিয়ায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে অবশেষে মাটিতে পরিণত হয় । আসলে চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া শিলার সঙ্গে জৈব পদার্থ মিশ্রিত হয়েই প্রকৃত মাটি সৃষ্টি হয় । ভূ-পৃষ্ঠে মাটি সৃষ্টির পদ্ধতিগুলিকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা— (১) প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ও (২) জৈব প্রক্রিয়া (উদ্ভিদ ও প্রাণীর দ্বারা) ।

(১) যেসব প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় মাটি সৃষ্টি হয় সেগুলি হল-  (i) আবহবিকার, (ii) ক্ষয়ীভবন, (iii নগ্নীভবন, (iv) অপসারণ এবং (v) অবক্ষেপণ ।

(২) জৈবিক প্রক্রিয়া- উদ্ভিদ ও প্রাণীর দ্বারা মাটির উৎপত্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খনিজ পদার্থের রূপান্তর ঘটিয়ে মাটি সৃষ্টি করে ।

যে সব প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় মাটি সৃষ্টি হয় সেগুলি হল—

(i) আবহবিকার : শীতের প্রচন্ড শৈত্য, গ্রীষ্মের প্রচন্ড উত্তাপ কিংবা দিন বা রাতের উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য ভূপৃষ্ঠের শিলার ক্রমাগত সংকোচন ও প্রসারণের ফলে শিলা ত্বকে ফাটল ধরে এবং শিলার ওপরের অংশ ক্রমশ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে ও কালক্রমে মাটির সৃষ্টি হয় ।

(ii) ক্ষয়ীভবন : বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, জলস্রোত, হিমবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে কিংবা আবহবিকারের জন্য ভূত্বকের উপরিভাগ ক্রমশ ক্ষয় পেয়ে মাটির সৃষ্টি করে । এই প্রক্রিয়াকে ক্ষয়ীভবন বলে ।

(iii) নগ্নিভবন : বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ভূত্বকের উপরিভাগ চূর্ণবিচূর্ণ ও ক্ষয়প্রাপ্ত হলে শিলার ওপরের অংশ আলগা হয়ে যাওয়ায় ঠিক তার নীচের স্তরটি উন্মুক্ত বা নগ্ন হয়ে পড়ে, এই প্রক্রিয়াকে নগ্নীভবন বলে ।

(iv) অপসারণ :- এই প্রক্রিয়ায় ভূত্বকের উপরিভাগের চূর্ণবিচূর্ণ এবং ক্ষয়প্রাপ্ত অংশগুলি প্রাকৃতিক বাহক, যথা-  জলস্রোত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ ইত্যাদির দ্বারা একস্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয় এবং কালক্রমে সঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের জৈবিক, রাসায়নিক এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূর্ণবিচূর্ণ উপাদানগুলি বিশ্লিষ্ট ও স্তরীভূত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে ।

(v) অবক্ষেপণ:- এই প্রক্রিয়ায় ভূত্বকের উপরিভাগের চূর্ণবিচূর্ণ এবং ক্ষয়প্রাপ্ত অংশগুলি পরিবাহিত হয়ে অন্য কোনও স্থানে সঞ্চিত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে ।

মাটির উৎপত্তির জৈব প্রক্রিয়া (উদ্ভিদ ও প্রাণী দ্বারা) :-

(i) ছোটো বড়ো উদ্ভিদ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে খনিজ পদার্থের রূপান্তর ঘটিয়ে মাটি সৃষ্টি করে ।

(ii) শিলার ফাটলের মধ্যে উদ্ভিদের মূল প্রবেশ করলে ফাটলের আয়তন বাড়ে এবং উদ্ভিদের মূলের বৃদ্ধির ফলে শিলা ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় ।

(iii) শিলার ওপর শৈবাল, ছত্রাক ইত্যদি জন্মালে শিলা নরম ও আলগা হয়ে মাটিতে পরিণত হয় ।

(iv) মাটিতে থাকা বিভিন্ন জীবাণু, মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহকে পচিয়ে জৈব পদার্থে পরিণত করে এবং পরোক্ষভাবে মাটি সৃষ্টিতে সাহায্য করে ।

(v) মাটিতে বসবাসকারী কেঁচো, উঁই, পিঁপড়ে, ইঁদুর প্রভৃতি প্রাণীরা মাটিকে ওলটপালট করে দিয়ে রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে জৈব উপাদানের মিশ্রণ ঘটিয়ে মাটি সৃষ্টিতে সাহায্য করে ।

*****

Comments

Related Items

উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল (The Coastal Plains)

উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল (The Coastal Plains) : দক্ষিণ ভারতের পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমদিকে আরব সাগরের উপকূল বরাবর গড়ে ওঠা সংকীর্ণ সমভূমি অঞ্চল দুটি উপকূলীয় সমভূমি নামে পরিচিত । এই অঞ্চলকে দু-ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (১) পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি

উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল (The Peninsular Plateau)

(গ) উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল (The Peninsular Plateau or The Deccan Plateau): উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের দক্ষিণ দিকে পশ্চিমে আরাবল্লি পর্বত থেকে শুরু করে পূর্বে রাজমহল পাহাড় এবং উত্তরে গঙ্গা সমভূমি থেকে শুরু করে দক্ষিণে উপকূলীয় সমভূমির মধ্যবর্তী অংশে উপদ্ব

উত্তরের সমভূমি অঞ্চল (The Northern Plains)

উত্তরের সমভূমি অঞ্চল (The Northern Plains) : উত্তরে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চলে সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এবং এদের বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীগুলি পলি সঞ্চয় করে যে বিস্তৃত সমতলভূমি গঠন করেছে তাকে উত্তরের সমভূমি

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (The Northern Mountains)

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (The Northern Mountains) : ভারতের সমগ্র উত্তর অংশ জুড়ে উত্তরে তিব্বত মালভূমি এবং দক্ষিণে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের মাঝে অবস্থান করছে উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল । প্রায় নিরবিচ্ছিন্ন পর্বতশ্রেণি নিয়ে গড়ে ওঠা এই অঞ্চলটি পশ্চিমে কাশ

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Physical Emvironment of India)

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Physical Environment of India) : ভারত একটি সুবিশাল দেশ ও এর ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় । উত্তর ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত পামীর গ্রন্থি থেকে বের হওয়া হিন্দুকুশ, সুলেমান, খিরথর কারাকোরাম, হিমালয় প্রভৃতি কয়েক