Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 07/29/2021 - 09:02

বালিয়াড়ি (Sand Dunes) : বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, বালিয়াড়ি হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । মরু অঞ্চলে বালির পাহাড়গুলিকে বালিয়াড়ি বলে । বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে শিলাধূলি ও বালির সৃষ্টি হয়, সেগুলি আবার কোথাও কোথাও জমা হয়ে নতুন ভূমিরূপ গঠন করে । বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে কোনো বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে উঁচু ও দীর্ঘ বালির স্তূপ গঠিত হলে তাকে বালিয়াড়ি (Sand Dune) বলে । ভূবিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড -এর মতে মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতিপথে নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধকতা বা অসমতল ভূপ্রকৃতির নির্ভরতা ছাড়াই যে চলমান বালির স্তুপ গড়ে ওঠে, তাকে বালিয়াড়ি বলে । তবে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে স্থির বালির স্তুপকেও বালিয়াড়ি বলে থাকেন । মরুভূমি ছাড়া সমুদ্র উপকূলেও বালিয়াড়ি দেখা যায়, যেমন — দিঘা বালিয়াড়ি । তবে সমুদ্র উপকূলের বালিয়াড়ি সাধারনত আকারে ছোটো হয় । বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াড়ি গতিশীল হয় । বালিয়াড়ি কখনো ভাঙ্গে আবার কখনো গড়ে, আবার আকৃতির পরিবর্তন ঘটায় । রাজস্থানের মরুভূমিতে এরূপ চলন্ত বালিয়াড়িকে ধ্রিয়ান বলা হয় ।

বিখ্যাত বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড বালিয়াড়িকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন । যথা— (i) তির্যক বালিয়াড়ি বা বার্খান (Crescent Dunes or Barchans), (ii) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বা সিফ বালিয়াড়ি (Longitudinal Dunes or Seif Dunes) 

(i) তির্যক বালিয়াড়ি বা বার্খান (Crescent Dunes or Barchans) : তুর্কি শব্দ বার্খান কথার অর্থ 'বালির পাহাড়' । মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতিপথে আড়াআড়িভাবে যে আধখানা চাঁদের মতো বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে তাকে বার্খান বা অর্ধচন্দ্রাকৃতি বালিয়াড়ি বলে । বার্খান বালিয়াড়ির বায়ুমুখী সামনের দিকটি উত্তল এবং পিছনের দিকটি অবতল ঢালবিশিষ্ট হয় । বার্খানের দুটি বাহুর দু-প্রান্তে শিং -এর মতো শিরা অবস্থান করে । বার্খানগুলির উচ্চতা সাধারণত ১৫ - ২০ মি. এবং বিস্তার ৪০ - ৮০ মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে । একাধিক বার্খান পরপর পাশাপাশি গঠিত হওয়ার ফলে যে আঁকাবাঁকা ও সারিবদ্ধ শৈলশিরার মতো বালিয়াড়িশ্রেণির সৃষ্টি হয় তাদের একত্রে অ্যাকলে বালিয়াড়ি বলা হয় । অনেকটা পিরামিডের মতো দেখতে তির্যক বালিয়াড়িগুলিকে রোর্ডস বালিয়াড়ি বলে । বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হলে বার্খানগুলি রোর্ডস বালিয়াড়িতে পরিণত হয় । পৃথিবীর সব উষ্ণ মরুভূমিতেই অসংখ্য বার্খান দেখা যায় ।

(ii) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বা সিফ বালিয়াড়ি (Longitudinal Dunes or Seif Dunes) : মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতি পথের সঙ্গে সমান্তরালে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলে । অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়িগুলির মধ্যে যেগুলি খুব দীর্ঘ কিন্তু সংকীর্ণ তাদেরকে সিফ বালিয়াড়ি বলে । এই বালিয়াড়ি দেখতে অনেকটা খোলা তরবারির মতো । এর সংকীর্ণ শৈলশিরার মতো শীর্ষদেশ ছুরির ফলার মতো হয়ে থাকে । বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড -এর মতে, বার্খানের এক বাহুর দিকে বায়ুর গতিবেগ বেশি হলে তা ক্রমশ অগ্রসর হয়ে সিফ বালিয়াড়ি গঠিত হয় । সাধারণত সিফ বালিয়াড়ির উচ্চতা ১০ - ৩৫ মি. হলেও বিস্তার তার উচ্চতার থেকে প্রায় ছ-গুণ বেশি হয় । তবে ইরান মরুভূমিতে প্রায় ২১০ মি. উঁচু সিফ বালিয়াড়ি দেখা যায় । দুটি সিফ বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী ফাঁক বা করিডোরগুলিকে সাহারায় 'গাসি' বলে । থর, সাহারা, কালাহারি প্রভৃতি মরুভূমিতে সিফ বালিয়াড়ি দেখা যায় ।

********

Comments

Related Items

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Physical Emvironment of India)

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Physical Environment of India) : ভারত একটি সুবিশাল দেশ ও এর ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় । উত্তর ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত পামীর গ্রন্থি থেকে বের হওয়া হিন্দুকুশ, সুলেমান, খিরথর কারাকোরাম, হিমালয় প্রভৃতি কয়েক

ভারতের বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমূহ

ভারতের বর্তমান রাজ্য সমূহ (২০২১ সাল পর্যন্ত ) :

১. অন্ধ্রপ্রদেশ : এই রাজ্যের আয়তন হল ১,৬০,২০৫ বর্গ কিমি. ও রাজধানী হল অমরাবতী ।

২. অরুণাচল প্রদেশ : এই রাজ্যের আয়তন হল ৮৩,৭৪৩ বর্গ কিমি. ও রাজধানী হল ইটানগর ।

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস : প্রায় ১০০ বছর প্রত্যক্ষভাবে ইংরেজ শাসনাধীন থাকার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এব

ভারতের ভৌগলিক অবস্থান

অবস্থান (Location) : ভারত পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত একটি দেশ । নিরক্ষরেখার উত্তরে অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে এবং মূলমধ্যরেখার পূর্বে অর্থাৎ পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত অর্থাৎ ভারত উত্তর-পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত । ভারতের মূল ভূখণ্ড দক্ষি

ভারত (India)

ভারত :- প্রাচীন পারসিক লিপিতে 'সপ্ত সিন্ধু' কে বলা হয়েছে হপ্ত হিন্দু । সিন্ধু তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষকে বিদেশীরা হিন্দু বলত এবং তার থেকেই হিন্দুস্থান কথাটি এসেছে । প্রাচীন পারসি শব্দ হিন্দুস (Hindus) থেকে উৎপন্ন ইণ্ডাস (Indus) থেকে ইণ্ডিয়া (INDIA) নামট