বালিয়াড়ি (Sand Dunes) : বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, বালিয়াড়ি হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । মরু অঞ্চলে বালির পাহাড়গুলিকে বালিয়াড়ি বলে । বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে শিলাধূলি ও বালির সৃষ্টি হয়, সেগুলি আবার কোথাও কোথাও জমা হয়ে নতুন ভূমিরূপ গঠন করে । বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে কোনো বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে উঁচু ও দীর্ঘ বালির স্তূপ গঠিত হলে তাকে বালিয়াড়ি (Sand Dune) বলে । ভূবিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড -এর মতে মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতিপথে নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধকতা বা অসমতল ভূপ্রকৃতির নির্ভরতা ছাড়াই যে চলমান বালির স্তুপ গড়ে ওঠে, তাকে বালিয়াড়ি বলে । তবে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে স্থির বালির স্তুপকেও বালিয়াড়ি বলে থাকেন । মরুভূমি ছাড়া সমুদ্র উপকূলেও বালিয়াড়ি দেখা যায়, যেমন — দিঘা বালিয়াড়ি । তবে সমুদ্র উপকূলের বালিয়াড়ি সাধারনত আকারে ছোটো হয় । বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াড়ি গতিশীল হয় । বালিয়াড়ি কখনো ভাঙ্গে আবার কখনো গড়ে, আবার আকৃতির পরিবর্তন ঘটায় । রাজস্থানের মরুভূমিতে এরূপ চলন্ত বালিয়াড়িকে ধ্রিয়ান বলা হয় ।
বিখ্যাত বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড বালিয়াড়িকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন । যথা— (i) তির্যক বালিয়াড়ি বা বার্খান (Crescent Dunes or Barchans), (ii) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বা সিফ বালিয়াড়ি (Longitudinal Dunes or Seif Dunes)
(i) তির্যক বালিয়াড়ি বা বার্খান (Crescent Dunes or Barchans) : তুর্কি শব্দ বার্খান কথার অর্থ 'বালির পাহাড়' । মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতিপথে আড়াআড়িভাবে যে আধখানা চাঁদের মতো বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে তাকে বার্খান বা অর্ধচন্দ্রাকৃতি বালিয়াড়ি বলে । বার্খান বালিয়াড়ির বায়ুমুখী সামনের দিকটি উত্তল এবং পিছনের দিকটি অবতল ঢালবিশিষ্ট হয় । বার্খানের দুটি বাহুর দু-প্রান্তে শিং -এর মতো শিরা অবস্থান করে । বার্খানগুলির উচ্চতা সাধারণত ১৫ - ২০ মি. এবং বিস্তার ৪০ - ৮০ মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে । একাধিক বার্খান পরপর পাশাপাশি গঠিত হওয়ার ফলে যে আঁকাবাঁকা ও সারিবদ্ধ শৈলশিরার মতো বালিয়াড়িশ্রেণির সৃষ্টি হয় তাদের একত্রে অ্যাকলে বালিয়াড়ি বলা হয় । অনেকটা পিরামিডের মতো দেখতে তির্যক বালিয়াড়িগুলিকে রোর্ডস বালিয়াড়ি বলে । বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হলে বার্খানগুলি রোর্ডস বালিয়াড়িতে পরিণত হয় । পৃথিবীর সব উষ্ণ মরুভূমিতেই অসংখ্য বার্খান দেখা যায় ।
(ii) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বা সিফ বালিয়াড়ি (Longitudinal Dunes or Seif Dunes) : মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতি পথের সঙ্গে সমান্তরালে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলে । অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়িগুলির মধ্যে যেগুলি খুব দীর্ঘ কিন্তু সংকীর্ণ তাদেরকে সিফ বালিয়াড়ি বলে । এই বালিয়াড়ি দেখতে অনেকটা খোলা তরবারির মতো । এর সংকীর্ণ শৈলশিরার মতো শীর্ষদেশ ছুরির ফলার মতো হয়ে থাকে । বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড -এর মতে, বার্খানের এক বাহুর দিকে বায়ুর গতিবেগ বেশি হলে তা ক্রমশ অগ্রসর হয়ে সিফ বালিয়াড়ি গঠিত হয় । সাধারণত সিফ বালিয়াড়ির উচ্চতা ১০ - ৩৫ মি. হলেও বিস্তার তার উচ্চতার থেকে প্রায় ছ-গুণ বেশি হয় । তবে ইরান মরুভূমিতে প্রায় ২১০ মি. উঁচু সিফ বালিয়াড়ি দেখা যায় । দুটি সিফ বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী ফাঁক বা করিডোরগুলিকে সাহারায় 'গাসি' বলে । থর, সাহারা, কালাহারি প্রভৃতি মরুভূমিতে সিফ বালিয়াড়ি দেখা যায় ।
********