Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 06/28/2021 - 18:03

বদ্বীপ (Delta):- বদ্বীপ প্রবাহে বা নিম্নগতিতে নদীর প্রধান কাজ অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় । এই প্রবাহে ভূমির ঢাল ও নদীর গতিবেগ একেবারে কমে যায় বলে নদীবাহিত যাবতীয় পলি, বালি, নুড়ি, কাঁকর, কাদা প্রভৃতি বোঝাকে নদী আর বহন করতে পারে না । ফলে নদীবাহিত পদার্থসমূহ মোহানার কাছে অগভীর সমুদ্রবক্ষে সঞ্চিত হয় । সমুদ্রের লবণাক্ত জলের সংস্পর্শে এই সঞ্চয় ক্রমশ জোটবদ্ধ হয়ে উঁচু হতে থাকে । ফলে নদী শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয় । দুটি শাখার মধ্যবর্তী সঞ্চয়জাত ভূমি তখন মাত্রাহীন 'ব' বা গ্রিক অক্ষর 'Δ' -র মতো আকারের ভূমিরূপ গড়ে তোলে, এই ভূমিরূপকে বদ্বীপ বলে । পৃথিবীর বেশিরভাগ ব-দ্বীপই গ্রিক অক্ষর ডেল্টার মতো দেখতে হলেও, কোনো কোনো ব-দ্বীপ বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে ।

আকৃতি অনুসারে বদ্বীপ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, যেমন —

(i) ধনুকাকৃতি বদ্বীপ (Arcuate Delta) : যখন নদীর মোহানায় খুব বেশি পরিমাণ নদীবাহিত পলি, বালি, নুড়ি, কাঁকর, কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয় এবং দুর্বল সমুদ্রস্রোত সেগুলি অপসারণ করতে পারে না, তখন নদীবাহিত পদার্থগুলি সেখানে পাখার মতো ছড়িয়ে সঞ্চিত হয় । নদী মোহানায় গঠিত এইসব বদ্বীপগুলি সমুদ্রমূখী হয়ে ধনুকের মতো বেঁকে অবস্থান করে, বলে এদেরকে ধনুকাকৃতি বদ্বীপ বলে । ত্রিকোণাকার এই বদ্বীপগুলি 'ব্যজনী বদ্বীপ' নামেও পরিচিত । গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র, নীল, নাইজার প্রভৃতি নদীর মোহনায় ধনুকাকৃতি বদ্বীপ দেখা যায় ।

(ii) তীক্ষ্ণাগ্র বদ্বীপ (Cuspate Delta) : নদীর মোহানার কাছে সমুদ্রতরঙ্গ প্রবল হলে নদীবাহিত পলিরাশি নদীর মধ্যভাগে সঞ্চিত না হয়ে মোহনার দু'পাশে উপকূল বরাবর সঞ্চিত হয় । তখন নদী মোহনার অগ্রভাগ তীক্ষ্ণ ও সুঁচালো হয়ে সমুদ্রের দিকে অগ্রসর হয় । এর ফলে যে বদ্বীপ সৃষ্টি হয়, তার সমুদ্রের দিকের অগ্রভাগ বেশ তীক্ষ্ণ আকারের হয় । একে তিক্ষ্ণাগ্র বদ্বীপ বলে । স্পেনের এব্রো ও টাইবার নদীর মোহানায় এই প্রকারের বদ্বীপ গড়ে উঠেছে ।

(iii) পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ (Bird's foot Delta) : মূল নদী বহু দীর্ঘ ও সংকীর্ণ শাখানদীতে বিভক্ত হয়ে মোহানায় মিলিত হলে এবং মোহানার কাছে নদীর জলের ঘনত্ব যদি সমুদ্রজলের ঘনত্বের তুলনায় কম হয় ও নদীর গতিবেগ একটু বেশি থাকে, তাহলে নদীবাহিত পলি, বালি, নুড়ি, কাঁকর, কাদা প্রভৃতি পদার্থসমূহ মূল নদী ও তার সংকীর্ণ শাখানদীগুলির দুই পাশে সঞ্চিত হতে হতে সমুদ্রের যথেষ্ট দূর পর্যন্ত পৌঁছে অধঃক্ষিপ্ত হয়ে পাখির পায়ের মতো বদ্বীপের সৃষ্টি করে । এই বদ্বীপগুলি পাখির পায়ের মতো আকৃতি ধারণ করে বলে একে পক্ষীপাদ বদ্বীপ বলে । ভারতে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরী-মিসিসিপি নদীর বদ্বীপ অনেকটা পাখির পায়ের মতো দেখতে ।

*****

Comments

Related Items

উষ্ণতা হ্রাসের গড় (Lapse rate) কাকে বলে ? উষ্ণমণ্ডল সৃষ্টির কারণ কি ?

প্রশ্ন : উষ্ণতা হ্রাসের গড় (Lapse rate) কাকে বলেউষ্ণমণ্ডল সৃষ্টির কারণ কি ?

দিনের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে তাপের তারতম্য হয় কেন ?

প্রশ্ন : দিনের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে তাপের তারতম্য হয় কেন ?

উত্তর : সকালে এবং বিকালে কোনো স্থান থেকে সূর্য অনেক দূরে থাকে বলে সূর্যরশ্মি

(১) পৃথিবীপৃষ্ঠের সেই স্থানে তুলনামূলক ভাবে বেশি তির্যকভাবে পড়ে,

(২) বেশি পরিমাণ বায়ুস্তর ভেদ করে আসে এবং

পৃথিবীর বিভিন্ন বায়ুচাপ বলয়ের সীমা পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব কী কী ?

প্রশ্ন :- পৃথিবীর বিভিন্ন বায়ুচাপ বলয়ের সীমা পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব কী কী ?

অ্যালবেডো (Albedo) কাকে বলে ?

প্রশ্ন : অ্যালবেডো (Albedo) কাকে বলে ?

বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে ছিদ্র হলে কী ঘটতে পারে ?

প্রশ্ন:- বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে ছিদ্র হলে কী ঘটতে পারে ?