তাপমন্ডল (Temperature Belt of the World)

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 08/07/2021 - 09:38

তাপমন্ডল (Temperature Belt of the World) : ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র তাপমাত্রা সমান নয় । বছরের গড় তাপমাত্রা নিম্ন অক্ষাংশে সবচেয়ে বেশি, মাঝামাঝি অঞ্চলে মাঝামাঝি ধরনের এবং মেরু অঞ্চলে সবচেয়ে কম । অক্ষাংশ অনুসারে বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে পৃথিবীকে প্রধানত তিনটি তাপমন্ডলে ভাগ করা হয়েছে । যেমন —(ক) উষ্ণমণ্ডল (Torrid Belt), (খ) নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল (Temperate Belt), (গ) হিম মণ্ডল (Frizid Belt) ।

(ক) উষ্ণমন্ডল (Torrid Belt) : নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে উভয় দিকে ২৩½ অক্ষাংশ পর্যন্ত কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখাদ্বয়ের মধ্যবর্তী ৫,২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত অঞ্চলে সারা বছর সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পতিত হয় । ফলে এই অঞ্চলে বার্ষিক গড় উষ্ণতা বেশি হয় । তাই এই অঞ্চলটি উষ্ণমন্ডল নামে পরিচিত । এই অঞ্চলের গড় উষ্ণতা প্রায় ২৭ ° সে. ।

এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য :—

(i) দিনের দৈর্ঘ্যের বিশেষ পার্থক্য হয় না এবং প্রত্যেক স্থানে সূর্যরশ্মি বছরে অন্তত দু’দিন ২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর মধ্যাহ্নে লম্বভাবে পতিত হয় এবং অন্যান্য সময়েও প্রায় সোজাভাবে পড়ে । সে জন্য সারা বছর ধরে এই অঞ্চল, পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে উষ্ণ থাকে ।

(ii) এখানে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য কম ।

(iii) এই অঞ্চলের যে-কোনো জায়গায় বার্ষিক গড় উষ্ণতা ২৭ সেলসিয়াস বা তার বেশি ।

(iv) যদিও সূর্যের আপাত গতি সাধারণভাবে কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩½ উত্তর অক্ষরেখা) ও মকরক্রান্তি রেখার (২৩½ দক্ষিণ অক্ষরেখা) মধ্যেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু তার প্রভাব আরও কিছু উত্তর ও দক্ষিণে পৌঁছায়, তাই উষ্ণমণ্ডলের প্রকৃত সীমানা নিরক্ষরেখার উভয় পাশে ২৭ সেলসিয়াস সমোষ্ণরেখা পর্যন্ত ধরা হয় ।

(খ) নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল (Temperate Belt) : উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩½° উত্তর অক্ষাংশ) থেকে সুমেরুবৃত্ত রেখা (৬৬½° উত্তর অক্ষাংশ) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকর ক্রান্তি রেখা (২৩½° দক্ষিণ অক্ষাংশ) থেকে কুমেরুবৃত্ত রেখা (৬৬½° দক্ষিণ অক্ষাংশ) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে বায়ুর উষ্ণতা মাঝারি ধরনের হয় । সারা বছর মৃদু উষ্ণ ও মৃদু শীতভাব পরিলক্ষিত হয় বলে এই দুটি অঞ্চলকে নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল বলে । এই অঞ্চলটি উত্তর গোলার্ধে উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল (North Temperate Belt) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল (South Temperate Belt) নামে পরিচিত । এই অঞ্চলের গড় উষ্ণতা ১০° - ২৭° সে. হয়ে থাকে । নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের যে অংশটি উষ্ণমন্ডলের নিকটে অবস্থিত অর্থাৎ ২৩½° থেকে ৪৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলকে উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল (Warm Temperate Zone) বলে । আবার এই উষ্ণ মন্ডলের যে অংশটি মেরুবৃত্তের নিকটে অবস্থিত অর্থাৎ ৪৫° থেকে ৬৬½° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলটি শীতল নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল (Cool Temperate Zone) নামে পরিচিত । এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি খুব তির্যক ভাবে পড়ে না । তাই এই অঞ্চল গ্রীষ্মে খুব একটা উষ্ণ বা শীতে খুব একটা শীতল হয় না ।

(গ) হিমমন্ডল (The Frigid Belt) : উত্তর গোলার্ধে সুমেরুবৃত্ত রেখা অর্থাৎ ৬৬½° উত্তর অক্ষাংশ থেকে সুমেরু অর্থাৎ ৯০° উত্তর অক্ষাংশ এবং দক্ষিণ গোলার্ধে কুমেরুবৃত্ত রেখা অর্থাৎ ৬৬½° দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে কুমেরু অর্থাৎ ৯০° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে বায়ুর উষ্ণতা সারা বছর অত্যন্ত কম থাকে বলে এই দুই অঞ্চলকে হিমমন্ডল বলে । উত্তর গোলার্ধে এই অঞ্চলকে উত্তর হিমমণ্ডল (North Frigid Belt) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে এই অঞ্চলকে দক্ষিণ হিমমণ্ডল (South Frigid Belt) বলে । এই অঞ্চলের গড় উষ্ণতা 0° সে. -এরও কম এবং প্রায় সারা বছর বরফাবৃত থাকে । সমোষ্ণরেখা অনুসারে 0 সেলসিয়াস সমোষ্ণরেখা থেকে উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত অঞ্চলকে হিমমণ্ডল ধরা হয় ।  

এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য:-

(i) এই অঞ্চলে সূর্যের অবনতি বছরের সব সময় ৪৩ -র বেশি থাকে এবং সূর্যরশ্মি একেবারে তির্যকভাবে পড়ে ।

(ii) এই অঞ্চলের সর্বত্রই বছরের অন্তত একদিন আকাশে সূর্যকে দেখাই যায় না ।

(iii) উত্তর ও দক্ষিণ মেরুবিন্দুতে একসঙ্গে ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত্রি হয় ।

(iv) এই সমস্ত কারণে এই স্থান দুটি অত্যন্ত শীতল ।

(v) এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ২৪ ঘন্টা থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সূর্য একেবারেই অস্ত যায় না, তাই এই অঞ্চলকে ‘নিশীথ সূর্যের দেশ’ বলে ।

(vi) মেরু অঞ্চলে ছয় মাস ব্যাপী অন্ধকারের সময় আকাশে মাঝে মাঝে রামধনুর মতো অস্পষ্ট আলো দেখা যায় যাকে সুমেরু অঞ্চলে সুমেরু প্রভা ও কুমেরু অঞ্চলে কুমেরু প্রভা বলে ।

****

Comments

Related Items

ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effects of waste disposal on Bhagirathi-Hooghly river)

ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effects of waste disposal on Bhagirathi-Hooghly river) : প্রায় 2500 কিমি দীর্ঘ গঙ্গা নদী ভারতের জীবন রেখা । গঙ্গা নদীর পার্শ্ববর্তী কলকারখানার বর্জ্য, পৌরসভার বর্জ্য, কৃষি ক্ষেত্রের কীটনাশক বাহিত জল ইত্যাদি এই নদ

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা (Role of Students in Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা (Role of students in waste management) : সুন্দর ও স্বচ্ছ মন এবং সুস্থশিক্ষা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল । পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সুন্দর না থাকলে, সুন্দর স্বচ্ছ মন ও সুস্থশিক্ষা সম্ভব নয় । তাই বর্জ্য ব্যবস্

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা (Need for Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা (Need for waste management) : ভূপৃষ্ঠস্থ জলের কলুষিতকরণ, মৃত্তিকা সংক্রমণ, দূষণ, লিশেট ইত্যাদির মাধ্যমে বর্জ্য পরিবেশকে প্রভাবিত করে থাকে । বর্জ্যপদার্থ কঠিন বা তরলরূপে জলাশয়ে এসে পড়লে তা জলের রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি (Method of Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি (Method of waste management) : বর্জ্যপদার্থ সংগ্রহ, বর্জ্যের পরিবহন, আবর্জনার বিলিব্যবস্থা, নর্দমার জল ও অন্যান্য বর্জ্যের নিকাশ প্রভৃতি হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্যতম দিক । বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান পদ্ধতিগুলি হল— (১) বর্জ্য

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management) : যে কার্যকরী পরিচালন পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থের সংগ্রহ, অপসারণ, পরিবহণ, শোধন, ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস ও পুনরায় বর্জ্য পদার্থকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়, তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলা হয় । অন্যভাবে বলা যায়, বর্জ