আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ (Sudden or Irregular Wind)

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 08/19/2012 - 18:28

আকস্মিক বায়ুপ্রবাহ:- (Sudden or Irregular wind)  চাপের সমতা রাখার জন্য বায়ুপ্রবাহ উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয় । বায়ুচাপের তারতম্য হল বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ । বায়ুর চাপ আবার নির্ভর করে উষ্ণতর উপর । কোনো স্থানের বায়ু উত্তপ্ত হলে সেখানে বায়ুচাপ কমে যায় এবং আংশিক স্থান বায়ুশূন্য হয় । এই শূন্যস্থান পূরণের জন্য শীতল উচ্চচাপ যুক্ত স্থান থেকে বাতাস নিম্ন চাপের দিকে ধাবিত হয় । এইভাবে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় । ভূপৃষ্ঠের বেশিরভাগ অংশে বায়ুপ্রবাহ নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয় । কখনো কখনো ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানে বায়ুচাপের হঠাৎ হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটলে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রবল বেগে যে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তাকে আকস্মিক বায়ু বলে । পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে যে সব আকস্মিক বায়ু প্রবাহিত হয় তাদের মোটামুটি দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:- (১) ঘূর্ণবাত ও (২) প্রতীপ ঘূর্ণবাত ।

(১) ঘূর্ণবাত (Cyclones) : ভূপৃষ্ঠের কোনো স্বল্পপরিসর স্থান হঠাৎ কোনো কারণে বেশি মাত্রায় উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেখানে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় । তখন চারপাশের অপেক্ষাকৃত শীতল ও উচ্চচাপের স্থানগুলি থেকে বায়ু প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে । এই নিম্নচাপের কেন্দ্রমুখী ঊর্ধ্বগামী প্রবল ঘূর্ণিবায়ু ঘূর্ণবাত নামে পরিচিত ।

(i)  ঘুর্ণবাতের বায়ুপ্রবাহ উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে অর্থাৎ বামাদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে অর্থাৎ ডানদিকে ঘুরপাক খায় এবং ঘুরতে ঘুরতে ঘূর্ণবাত-কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয় ।

(ii)  একটি প্রবল ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের ব্যাস প্রায় ২০০-৫০০ কিমি. এবং গতিবেগ ঘন্টায় ১২০ কিমি. -র বেশি হয়ে থাকে ।

(iii)  ঘূর্ণবাত স্বল্পকাল ধরে স্থায়ী হয়, কিন্তু ওই অল্পসময়েই প্রবল বেগে প্রবাহিত হয় ।

(iv)  ঘূর্ণবাতের সঙ্গে ঝড়, বৃষ্টি এবং বজ্রপাত হয় ।

(v)  ঘূর্ণবাত দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে ।

(vi)  ঘূর্ণবাতের ধ্বংস ক্ষমতা অতি ভয়ংকর ।

ঘূর্ণবাত দু-প্রকারের হয় (ক) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও (খ) নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত ।

(ক) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত (Tropical Cyclones) : নিরক্ষরেখার উভয় দিকে ৫° থেকে ২০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে কখনও কখনও গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে শক্তিশালী ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় । একে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলে । এই প্রকার ঘূর্ণবাত স্বল্পস্থায়ী হলেও প্রচন্ড ঝড়ঝঞ্ঝাপূর্ণ হয় ও বিধ্বংসী রূপ ধারণ করে । এই ঘূর্ণবাতে সমচাপরেখাগুলি নিম্নচাপকে কেন্দ্র করে ঘন সন্নিবদ্ধভাবে অবস্থান করে । এই ঘূর্ণবাত ক্যারিবিয়ান উপসাগরে হারিকেন, চিন সাগরে টাইফুন, অস্ট্রেলিয়ায় উইলি, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে বাগুইও এবং ভারত মহাসাগরে সাইক্লোন নামে পরিচিত ।

(খ) নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত (Temperate Cyclones) : উভয় গোলার্ধের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ৩০° থেকে ৬৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতকে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত বলে । মেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল শুষ্ক বায়ু ও ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে আগত উষ্ণ-আদ্র বায়ু নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এসে পরস্পরের বিপরীতে মিলিত হলে উভয়ের সংঘর্ষে একটি সীমান্ত বা ফ্রন্টের সৃষ্টি হয় । এই সীমান্ত বরাবর উষ্ণ বায়ু শীতল বায়ুপুঞ্জকে সরিয়ে দিয়ে তরঙ্গের সৃষ্টি করে ও নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি হয় ।

(২) প্রতীপ ঘূর্ণবাত (Anti-cyclones) : হিমমন্ডল ও নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের স্বল্পপরিসর স্থানে কোনো কারণে বায়ু শীতল হয়ে গভীর উচ্চচাপের সৃষ্টি হলে, সেখান থেকে বায়ু ঘুরতে ঘুরতে চারপাশের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবলবেগে পাক খেতে খেতে প্রবাহিত হয় । এই নিম্নগামী, কেন্দ্রবহির্মুখী বায়ুপ্রবাহ প্রতীপ ঘূর্ণবাত নামে পরিচিত ।

(i) প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বায়ু উত্তর গোলার্ধে ডানাবর্তে (ঘড়ির কাঁটার দিকে) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামাবর্তে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে) বেঁকে প্রবাহিত হয় । এই ঘূর্ণবাতের প্রভাবে পরিষ্কার আকাশ ও রোদ ঝলমলে আবহাওয়ার সৃষ্টি হয় ।

(ii)  অনেক সময় দুটি ঘূর্ণবাতের মধ্যবর্তী স্থানে প্রতীপ ঘূর্ণবাত দেখা যায় ।

(iii)  প্রতীপ ঘূর্ণবাত, ঘূর্ণবাতের মতো ভয়ংকর নয় এবং দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে না ।

(iv)  প্রতীপ ঘূর্ণবাত দীর্ঘস্থায়ী কিন্তু ধীর গতি যুক্ত ।

(v)  প্রতীপ ঘূর্ণবাতের প্রভাবে ঝড়বৃষ্টি হয় না ।

‘ঘূর্ণবাত’ ও ‘প্রতীপ ঘূর্ণবাত’-এর তুলনা

ঘূর্ণবাত (Cyclones) প্রতীপ ঘূর্ণবাত (Anti-Cyclones)
(১) ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে নিম্নচাপ থাকে । (১) প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে উচ্চচাপ থাকে ।
(২) ঘূর্ণবাতের সময় চারিদিক থেকে বায়ু প্রচন্ড বেগে ঘুরতে ঘুরতে কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে । (২) প্রতীপ ঘূর্ণবাতের সময় বায়ু কেন্দ্র থেকে ঘুরতে ঘুরতে বাইরের দিকে ছুটে যায় ।
(৩) ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে বায়ু উষ্ণ ও ঊর্ধ্বগামী হয় । (৩) প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে বায়ু শীতল ও নিম্নগামী হয় ।
(৪) ঘুর্ণবাতে উত্তর গোলার্ধে বায়ু বামাদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ডানদিকে ঘুরতে থাকে । (৪) প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বায়ু উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে ঘুরতে থাকে ।
(৫) ঘূর্ণবাতের ক্ষেত্রে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে এবং প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হয় । (৫) প্রতীপ ঘূর্ণবাতের ক্ষেত্রে আকাশ নির্মল ও মেঘমুক্ত থাকে এবং বৃষ্টিপাত হয় না ।
(৬) ঘূর্ণবাত খুব শক্তিশালী ও বিধ্বংসী হলেও অল্পক্ষণ স্থায়ী হয় । (৬) প্রতীপ ঘূর্ণবাত বিশেষ শক্তিশালী ও বিধ্বংসী নয়, তবে দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় ।

*****

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।