তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণিবিভাগ

Submitted by Nandarani Pramanik on Mon, 07/26/2021 - 16:14

তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণিবিভাগ— কারক ও অকারকের বিভক্তি অনুযায়ী তৎপুরুষ সমাসকে ছটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে ।

(ক) কর্ম তৎপুরুষ সমাস :- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের কর্ম বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে কর্ম তৎপুরুষ বলে । যেমন— মাছকে ধরা = মাছ ধরা । ধানকে কাটা = ধানকাটা । গাড়িকে চালানো = গাড়িচালানো । ফুলকে তোলা = ফুলতোলা ।

(খ) করণ তৎপুরুষ সমাস:-  যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের তৃতীয় বা করণের বিভক্তি/অনুসর্গ লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে করণ তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন— ঢেঁকি দ্বারা ছাঁটা = ঢেঁকিছাঁটা । মায়া দ্বারা কান্না = মায়াকান্না । শ্রী দ্বারা হীন = শ্রীহীন । সীমা দ্বারা বদ্ধ = সীমাবদ্ধ ।

(গ) নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস:- যে তৎপুরুষ সমাসে নিমিত্ত কারকের বিভক্তি বা অনুসর্গ লোপ পায় তাকে নিমিত্ত তৎপুরুষ বলে । যেমন— লোকের নিমিত্ত হিত = লোকহিত । বিদ্যার নিমিত্ত আলয় = বিদ্যালয় । ছাত্রদের জন্য আবাস = ছাত্রাবাস । দেবতার জন্য আলয় = দেবালয় প্রভতি ।

বি: দ্র: :- নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাসে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় এবং অনুসর্গ লোপ পায় ।

(ঘ) অপাদান তৎপুরুষ সমাস:- যে সমাসে অপাদান কারকের অনুসর্গ লোপ পায় সেই তৎপুরুষ সমাসকে অপাদান তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন— সত্য থেকে ভ্রষ্ট = সত্যাভ্রষ্ট । জন্ম হতে অন্ধ = জন্মান্ধ । পদ থেকে চ্যুত = পদচ্যুত । শাপ থেকে মুক্ত = শাপমুক্ত । এখানে 'থেকে', 'হতে', হল অনুসর্গ । এক্ষেত্রে অনুসর্গ লোপ পায় ।

(ঙ) অধিকরণ তৎপুরুষ :- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের অধিকরণ কারকের বিভক্তি, অনুসর্গ লোপ পায় তাকে অধিকরণ তৎপুরুষ বলে । যেমন— অকালে বোধন = অকালবোধন (এ) । অগ্রে গণ্য = অগ্রগণ্য (এ) । কারায় বদ্ধ = কারাবদ্ধ (য়) । লাটদের মধ্যে বড় = বড়লাট (মধ্যে) । এখানে 'এ', 'য়' 'মধ্যে' গুলি লোপ পেয়েছে এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে ।

(চ) সম্বন্ধ তৎপুরুষ :- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের সম্বন্ধ পদের বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে সম্বন্ধ তৎপুরুষ বলে । যেমন— রাজার পুত্র = রাজপুত্র (র) । পথের রাজা = রাজপথ (এর) । বিশ্বের মিত্র = বিশ্বামিত্র (এর) । এখানে 'র' 'এর' বিভক্তি লোপ পেয়েছে ।

এছাড়াও আরও কতকগুলি তৎপুরুষ সমাস রয়েছে । যেমন—

(ছ) নঞ তৎপুরুষ সমাস:- যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদ নঞর্থ অব্যয়, তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন— নয় শুভ = অশুভ । নয় সভ্য = অসভ্য । নয় ব্যক্ত = অব্যক্ত । নয় লাজ = নিলাজ । নয় দেশ = বিদেশ । নয় মিল = গরমিল ।

(জ) উপপদ তৎপুরুষ সমাস :- ধাতুর সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় যোগ করে কৃদন্ত পদ গঠিত হয় । আর এই কৃদন্ত পদের পূর্ববর্তী নামপদকে বলা হয় উপপদ । সুতরাং যে তৎপুরুষ সমাসে উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের সমাস হয় তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন— ইন্দ্রকে জয় করেছেন যে = ইন্দ্রজিৎ । গৃহে বাস করে যে = গৃহস্থ । অগ্রে জন্মেছে যে = অগ্রজ । সব জানে যে = সবজান্তা ইত্যাদি । এখানে 'জয়', 'বাস', 'অগ্রে', এবং 'সব' পদগুলি হল উপপদ ।

(ঝ) উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস :- বিভিন্ন উপসর্গ যোগে যে শব্দ সৃষ্টি হয় অর্থাৎ তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস বলে । এ ক্ষেত্রে উপসর্গের অর্থই প্রাধান্য পায় । যেমন— দ্বীপের সদৃশ = উপদ্বীপ । নদীর সদৃশ = উপনদী । অক্ষির প্রতি = প্রতিপক্ষ । বে হিসাব = বেহিসাবী । ভাতের অভাব = হাভাত । কন্ঠের সমীপে = উপকণ্ঠ ইত্যাদি ।

(ঞ) ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাস:-  যে তৎপুরুষ সমাসে ব্যাপ্তির ভাব স্পষ্ট হয়, তাকে ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন— আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত = আগাগোড়া । চিরকাল ধরে শত্রু = চিরশত্রু । চিরকাল ধরে স্মরণীয় = চিরস্মরণীয় । চিরকাল ব্যাপী স্থায়ী = চিরস্থায়ী । আদি থেকে অন্ত = আদ্যন্ত ।

*****

Comments

Related Items

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - আফ্রিকা

১. আদিম যুগে স্রষ্টার কার প্রতি অসন্তোষ ছিল ? — (ক) দয়াময় দেবতার প্রতি (খ) কবির সংগীতের প্রতি (গ) নিজের প্রতি (ঘ) ধরিত্রীর প্রতি ২. "সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পূর্ণবাণী"— 'সভ্যতার শেষ পূর্ণবাণী'— (ক) বিদ্বেষ ত্যাগ করো (খ) ক্ষমা করো (গ) ভালোবাস (ঘ) মঙ্গল করো

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - হারিয়ে যাওয়া কালি কলম

১. পালকের কলমের ইংরেজি নাম হল — (ক) স্টাইলাস (খ) ফাউন্টেন পেন (গ) কুইল (ঘ) রিজার্ভার পেন ২. কানে কলম গুঁজে দুনিয়া খোঁজেন — (ক) প্রাবন্ধিক (খ) দার্শনিক (গ) গল্পকার (ঘ) নাট্যকার

সিরাজদ্দৌলা

[দরবার কক্ষ । সিরাজ সিংহাসনে উপবিষ্ট । কর্মচারীরা যথাস্থানে উপবিষ্ট । সভাসদদের মাঝে মীরজাফর, মোহনলাল, মীরমদন, রায়দুর্লভ একদিকে— অন্যদিকে রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, ওয়াটস, মঁসিয়ে লা দণ্ডায়মান । গোলাম হোসেন যথারীতি নবাবের পায়ের কাছে বসিয়া আছে ।]

পথের দাবী

পুলিশ-স্টেশনে প্রবেশ করিয়া দেখা গেল, সুমুখের হলঘরে জন-ছয়েক বাঙালি মোট-ঘাট লইয়া বসিয়া আছে, জগদীশবাবু ইতিমধ্যেই তাহাদের টিনের তোরঙ্গ ও ছোটৈ-বড়ো পুঁটলি খুলিয়া তদারক শুরু করিয়া দিয়াছেন । শুধু যে লোকটির প্রতি তাঁহার অত্যন্ত সন্দেহ হইয়াছে তাহাকে আর একটা ঘরে আটকাইয়া রাখা হইয়াছে ।

অদল বদল

হোলির দিনের পড়ন্ত বিকেল । নিম গাছের নীচে গাঁয়ের একদল ছেলে জড়ো হয়ে ধুলো ছোড়াছুড়ি করে খেলছিল । হাত ধরাধরি করে অমৃত ও ইসাব ওদের কাছে এল । দুজনের গায়েই সেদিনকার তৈরি নতুন জামা ।