সিরাজদ্দৌলা — শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
[দরবার কক্ষ । সিরাজ সিংহাসনে উপবিষ্ট । কর্মচারীরা যথাস্থানে উপবিষ্ট । সভাসদদের মাঝে মীরজাফর, মোহনলাল, মীরমদন, রায়দুর্লভ একদিকে— অন্যদিকে রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, ওয়াটস, মঁসিয়ে লা দণ্ডায়মান । গোলাম হোসেন যথারীতি নবাবের পায়ের কাছে বসিয়া আছে ।]
সিরাজ । ওয়াটস !
ওয়াটস । Your Excellency !
সিরাজ । কলকাতা জয়ে যখন আমরা যাত্রা করি, তখন তুমি আমার সঙ্গে সঙ্গেই ছিলে । সুতরাং কলকাতা জয়ের ইতিহাস তুমি জান । তুমি জান যে কলকাতা জয় করে সেই নগরের নাম আমরা আলিনগর রাখি ।
ওয়াটস । জানে Your Excellency !
সিরাজ । আলিনগরে তোমাদের কোম্পানির সঙ্গে যে সন্ধি হয়, তার সব সর্তও তোমারদের জানা আছে । তোমাদের কোম্পানি সন্ধির সকল সর্ত যাতে রক্ষা করে তারই জন্যে প্রতিভূরূপে তোমাকে মুর্শিদাবাদে রাখা হয়েচে । কোম্পানি সন্ধি-সর্ত রক্ষা না করলে, যুদ্ধঘোষণার আগেই, তোমাকে আমরা তোপের মুখে উড়িয়ে দিতে পারি, জান ?
ওয়াটস । জানে Your Excellency !
সিরাজ । তুমি প্রস্তুত হও ।
ওয়াটস । আমি জানিলাম না আমাদের অপরাধ !
সিরাজ । তোমাদের অপরাধ, সভ্যতার, শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেচে । স্পর্দ্ধা তোমাদের আকাশস্পর্শী হয়ে উঠেচে । শুধু শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় আমি এতদিন তোমাদের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার করে এসেচি । কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা !
ওয়াটস । আপনার অভিযোগ বুঝিতে পারিলাম না !
সিরাজ । মুন্সিজি, অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্র !
[ মুন্সিজি একখানি পত্র বাহির করিয়া করিলেন ]
সিরাজ । এই পত্র সম্বন্ধে তুমি কিছু জান ?
[ মুন্সি পত্র ওয়াটসকে দিলেন । ওয়াটস পড়িতে লাগিলেন ]
শেষের দিকে কী লেখা আছে ?
ওয়াটস । I now acquaint you, that the remainder of the troops, which should have been here long since (and which I hear the Colonel told you he expected) will beat at Calcutta in a few days; that in a few days more I shall despatch a vessel for more ships and more troops and that I will kindle such a flame in your country as all the water in the Ganges hall not be able to extinguish.
সিরাজ । মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন ।
[ মুন্সি পত্র লইয়া বাংলা তর্জমা শুনাইলেন ]
মুন্সি । কর্নেল ক্লাইভ যে সৈন্যের কথা উল্লেখ করিয়াছিলেন, তাহা শীঘ্রই কলিকাতায় পৌঁছিবে । আমি সত্বর আর একখানা জাহাজ মাদ্রাজে পাঠাইয়া সংবাদ দিব যে, আরো সৈন্য এবং আরো জাহাজ বাংলায় আবশ্যক । বাংলায় আমি এমন আগুন জ্বালাইব, যাহা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়াও নিভানো যাইবে না ।
সিরাজ । ওয়াটস ! এ ভীতি প্রদর্শনের অর্থ কী ?
ওয়াটস । Admiral এ-কথা লিখিয়াছেন কেন, আমি বুঝি না ।
সিরাজ । বুঝিয়ে আমি দিচ্ছি । মুন্সিজি, ওয়াটসের পত্র !
[ মুন্সি পত্রখানা বাহির করিলেন ]
আপনিই পড়ুন, ওর হাতে দেবেন না । আচ্ছা, ওকে একবার দেখিয়ে নিন ।
[ ওয়াটস পত্র দেখিল ]
বলতে পার যে, তোমার হাতের লেখা নয় ?
ওয়াটস । হাঁ, আমি লিখিয়াছে ।
সিরাজ । পড়ুন মুন্সিজি !
মুন্সি । It is impossible to rely upon the Nabob and it will be wise to attack Chandernagore. নবাবের উপর নির্ভর করা অসম্ভব । চন্দননগর আক্রমণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ ।
সিরাজ । তোমাদের অভদ্রতার, ঔদ্ধত্যের আরো পরিচয় চাও ? জেনে রাখো, তাও আমি দিতে পারি । আমার সভাসদরা, আমার স্বদেশীয়রা তারস্বরে ঘোষণা করে—আমি নির্বোধ, অত্যাচারী, বিলাস-সর্বস্ব; কিন্তু আমি যে সকলের শয়তানির সন্ধান রাখি, তার সামান্য পরিচয় আজ দিয়ে রাখলাম । তুমি ওয়াটস, তুমি আমারই দরবারে স্থান পেয়ে আমার সভাসদদের আমারই বিরুদ্ধে উত্তেজিত কর, কলকাতায় ইংরেজদের উপদেশ দাও আমারই আদেশ লঙ্ঘন করে কাজ করতে । জান এর শাস্তি কী ?
ওয়াটস । Punish me, Your Excellency, if you will. I can only say that I have done my duty.
সিরাজ । এই মুহূর্তে তুমি আমার দরবার ত্যাগ করো । ভবিষ্যতে আর কখনো এ-দরবারে তুমি স্থান পাবে না । তোমার কোম্পানি যদি সদ্ব্যবহার দিয়ে আমাকে আবার খুশি করতে পারে, তা হলো কোম্পানির প্রতিনিধি হিসাবে কোনো সচ্চরিত্র ইংরেজকে আমি দরবারে স্থান দোব, তোমাকে নয়—আর তাও এখন নয় । যাও ।
ওয়াটস । Farewell, Your Excellency !
[ নবাবকে কুর্নিশ করিয়া ওয়াটস বাহির হইয়া গেলেন ]
রাজবল্লভ । জাঁহাপনা !
সিরাজ । একটু অপেক্ষা করুন রাজা ।—মঁসিয়ে লা !
মঁসিয়ে লা । At your command, Your Excellency.
[ সিংহাসনের সামনে গিয়া কুর্নিশ করিলেন ]
সিরাজ । তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত । তোমরা, ফরাসিরা, বহুদিন থেকেই বাংলা দেশে বাণিজ্য করচ । আমার সঙ্গে কখনো তোমারা অসদ্ব্যবহার করনি । ইংরেজদের সঙ্গে তোমাদের বিবাদ আজকাল নয়, আর এ-দেশের কোনো ব্যাপার নিয়েও নয় । সাগরের ওপারে তোমরা পরস্পর পরস্পরের টুঁটি চেপে মারলেও আমার কিছু বলবার থাকে না । আমার রাজ্যে তোমরা শান্ত হয়ে থাক, এই আমার কামনা । ইংরেজরা আমার সম্মতি না নিয়ে চন্দননগর অধিকার করেচে, সমস্ত ফরাসি বাণিজ্য কুঠি তাদের ছেড়ে দেওয়া হোক এই মর্মে দাবি উপস্থিত করেচে । তোমরা প্রতিকারের আশায় আমার কাছে উপস্থিত হয়েচ ।
মঁসিয়ে লা । We have always sought for your protection, Your Excellency.
সিরাজ । কলকাতা জয়ে আর পূর্ণিয়ার শওকতজঙ্গের সঙ্গে সংগ্রামে আমার বহু লোকক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়েচে । আমার মন্ত্রিমন্ডলও যুদ্ধের পক্ষপাতী নন । এরূপ অবস্থায়, তোমাদের প্রতি আমার অন্তরের পূর্ণ সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও, আমি তোমাদের জন্যে ইংরেজদের সঙ্গে বিবাদে প্রবৃত্ত হতে পারি না । আমার এই অক্ষমতার জন্যে তোমরা আমাকে ক্ষমা করো ।
[ সভা কিছুকাল স্তব্ধ রহিল । মঁসিয়ে-লা মাথা নত করিয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন । তাহার পর ধীরে মাথা তুলিয়া নবাবের দিকে চাহিলেন, ক্ষুব্ধকন্ঠে কহিলেন: ]
মঁসিয়ে লা । Your Excellency ! You refuse us your help, your protection— though with great reluctance. I appreciate your feelings. I understand the predicament you are in, I am sorry for you. And I am sorry for ourselves. We have no other choice than to leave this land, which we have learnt to love. Allow me, Your Excellency, to warn you that you are in a great danger. On our departure from this land, the smothered flame will burst forth and will destroy you kingdom and people.
[ সিরাজ সিংহাসন হইতে নামিয়া আসিলেন । মঁসিয়ে-লা'র সামনে দাঁড়াইয়া কহিলেন: ]
সিরাজ । আমার বিপদ সম্বন্ধে আমাকে সচেতন করে তুমি আমার প্রতি তোমার অন্তরের প্রীতিরই পরিচয় দিয়েচ । তোমার কথা আমার চিরদিনই মনে থাকবে । প্রয়োজন হলে আমি তোমাকে স্মরণ করব । তখন যেন আমাকে ভুলো না বন্ধু ।
মঁসিয়ে লা । । know we shall never meet.
[ দুইজনেই চুপ করিয়া রহিলেন ]
Farewell, Your Excellency !
[ কুর্নিশ করিয়া চলিয়া গেলেন । সিরাজ তাঁহার পিছু পিছু খানিকটা অগ্রসর হইয়া স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন । তারপর দ্রুত ফিরিয়া রাজা রাজবল্লভের নিকট অগ্রসর হইয়া কহিলেন ]
সিরাজ । আপনি যেন কী বলবার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন, রাজা ?
রাজবল্লভ । এখন সে কথা নিরর্থক ।
[ সিরাজ হাসিয়া কহিলেন ]
সিরাজ । জানেন তো ! আমাকে কোনো কথা বলেই লাভ নেই—সর্ব-চিকিৎসার বাইরে আমি !
[ সিংহাসনের দিকে অগ্রসর হইলেন ]
রাজবল্লভ । ওয়াটস সাহেবকে ওরকম করে বিদায় না দিলেও চলত ।
[ সিরাজ ফিরিয়া আসিলেন ]
সিরাজ । ওয়াটস-ক্লাইভ-ওয়াটসন কোম্পানির কথা থাক, ইংরেজ-ফরাসি-পর্তুগীজ প্রসঙ্গ পরিহার করুন । নিজেদের কথা বলুন রাজা, নিজেদের কথা ভাবুন ।
জগৎশেঠ । ভাবা যখন উচিত ছিল, তখন যে কিছুই ভাবেননি জাঁহাপনা !
[ সিরাজ দ্রুত তাহার দিকে ফিরিলেন ]
সিরাজ । সে অপরাধ কি বার বার আমি স্বীকার করিনি ! আপনাদের সকল অভিযোগ অবনত মস্তকে আমি গ্রহণ করিচি । কখনো কোনো কটূক্তির প্রতিবাদ করিনি । আপনাদের স্পর্দ্ধা নিয়ে কখনও প্রশ্নও তুলিনি । আপনারা সারা দেশে আমার দুর্নাম রটিয়েচেন, কর্মচারীদের মনে অশ্রদ্ধা এনে দিয়েচেন, আত্মীয়-স্বজনের মন দিয়েচেন বিষিয়ে । আর কত হেও আমাকে করতে চান আপনারা ?
জগৎশেঠ । আপনাকে হেও প্রতিপন্ন করে আমাদের লাভ ?
সিরাজ । স্বার্থসিদ্ধি ।
জগৎশেঠ । স্বার্থের সন্ধানে আমরা যদি নিযুক্ত থাকতাম—
সিরাজ । বলুন, তা হলে ?
জগৎশেঠ । তা হলে বাংলার সিংহাসনে এতদিনে অন্য নবাব বসতেন ।
সিরাজ । এত বড়ো কথা আমার মুখের ওপর বলতে আপনার সাহস হয় ।
জগৎশেঠ । আপনার উপদ্রবই আমাদের মনে এই সাহস এনে দিয়েচে ।
সিরাজ । আমার উপদ্রব নয়, শেঠজি, আমার সহিষ্ণুতাই আপনাদের স্পর্দ্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে !
মীরজাফর । জাঁহাপনা মানী-লোকের মানহানি করে আপনি আমাদের সকলেরই অপমান করেচেন ।
সিরাজ । সকলে মিলে আপনারাই কি আমার কম অপমান করেচেন !
রাজবল্লভ । আমরা কেউ মিথ্যা কলঙ্ক রটাইনি ।
সিরাজ । সত্যাশ্রয়ী রাজা ! বলুন, সিংহাসনে আরোহণ করবার পরে, এই এক বছরের মধ্যে, কী অনাচার আমি করিচি ?
বলুন কটা রাত আমি নিশ্চিন্তে কাটিয়েচি, কটা দিন আপনারা আমাকে বিশ্রামের অবসর দিয়েচেন ? বলুন !
রাজবল্লভ । আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপন-প্রণালী আমাদের কণ্ঠস্থ থাকবার কথা নয় ।
সিরাজ । অথচ কবে, কোথায়, কখন, কোন অনাচার আমি করিচি, তা আপনারা নির্ভুল বলে দিতে পারেন !
রাজবল্লভ । পারি এই জন্যই যে পাপা কখনও চাপা থাকে না !
সিরাজ । পাপ যে চাপা থাকে না, হোসেনকুলী প্রাণ দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়ে গেছে ।
[ রাজবল্লভের সম্মুখে গিয়া ]
নিজের জীবনকে দিয়ে কি আবার তা বুঝতে চান ?
[ রাজবল্লভ মাথা নীচু করলেন ]
শেঠজি, জাফর আলি খাঁ, আপনাদের শ্রদ্ধেয় বন্ধুর মুখের দিকে একবার চেয়ে দেখুন !
মীরজাফর । এই তরবারি স্পর্শ করে আমি শপথ করচি জাঁহাপনা, আপনি যদি মানী-লোকের এইরূপ অপমান করেন, তা হলে আপনার স্বপক্ষে কখনো অস্ত্র ধারণ করব না ।
মোহনলাল । আজ পর্যন্ত কদিন তা ধারণ করেচেন, সিপাহসালার ?
মীরজাফর । পূর্ণিয়ার যুদ্ধে অপদার্থ শওকতকে হত্যা করে বুঝি এই স্পর্দ্ধা তোমার হয়েচে মোহনলাল ?
মীরমদন । কোনো যুদ্ধে কৃতিত্ব না দেখিয়েও আমি জিজ্ঞাসা করচি, কলকাতা জয় থেকে শুরু করে পূর্ণিয়া বিজয় পর্যন্ত কবে সিপাহসালার নবাবকে সাহায্য করেচেন ?
মীরজাফর । জাঁহাপনা ! নীচের এই স্পর্দ্ধা !
মোহনলাল । নীচপদস্থ কর্মচারীদের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের কাজের সমালোচনা করা উচিত নয়, এ-কথা যেমন আপনাদের সব সময়েই মনে থাকে, তেমন এ-কথাও মনে রাখা কি উচিত নয় যে, নবাবের কাজের সমালোচনাও সব সময়ে শোভন নয় ?
মীরমদন । এ রাজ্যের সকল প্রধান প্রধান সেনাপতি, আমির ওমরাহ, রইস রাজা, মনে করেচেন, নবাব একেবারে অসহায়; সিংহাসন রক্ষা ত নয়ই—আত্মরক্ষার শক্তিও তাঁর নেই । আমরা নবাবের নিমক বৃথাই খাই না, এ কথা তাঁদের মনে রাখা উচিত ।
মীরজাফর । এই সব অর্বচীনকে দিয়েই যখন নবাবের কাজ চলবে, তখন চলুন রাজা রাজবল্লভ, চলুন শেঠজি, চলুন দুর্লভরায়, এই দরবার আমরা ত্যাগ করি । নবাব থাকুন তাঁর কর্মক্ষম, শক্তিমান, পরম বিচক্ষণ মন্ত্রী আর সেনাপতিদের নিয়ে । গোলামহোসেন, মোহনলাল আর মীরমদন যখন রয়েচে, তখন আর ভাবনা কী ? চলুন !
[ রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, দুর্লভরায় প্রস্থানের উদ্যোগ করিলেন ]
সিরাজ । দাঁড়ান !
[ সকলে স্থির হইয়া দাঁড়াইলেন ]
দরবার ত্যাগ করতে হলে নবাবের অনুমতি নিতে হয়, এ কথাও আপনাদের মনে করিয়ে দিতে হবে ?
মীরজাফর । দরবার ত্যাগ করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি জাঁহাপনা ।
সিরাজ । বাধ্য হয়ে দরবার ত্যাগ করতে হবে আপনাদের তখন, যখন আপনাদের বন্দি করা হবে । মুন্সিজি, সিপাহসালারের কাছে ওয়াটস যে পত্র লিখেছিলেন, সেই পত্র ।
[ মুন্সিজি পত্র বাছিতে লাগিলেন ]
মীরজাফর । আমার কাছে ওয়াটস পত্র লিখেছিলেন !
সিরাজ । হাঁ, নবাবের সিপাহসালার ! খোজা পিদ্রুর মারফৎ ওয়াটস এই পত্রখানি আপনারই উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছিল; কিন্তু আপনার দুর্ভাগ্যবশত আমাদের হস্তগত হয়েচে । দেখতে চান ?
মীরজাফর । নবাবের অনুগ্রহ ।
সিরাজ । সভাসদদের শুনিয়ে দোব ?
মীরজাফর । পত্রের বিষয় ত আমি অবগত নই জাঁহাপনা ।
সিরাজ । সবাইকে শুনিয়ে আপনাকে লজ্জা দেবো না । কেন না আপনি আমার সিপাহসালার । পত্রখানা আপনাকে দেখতেও দোব না, কেন না তা হলে যে উদ্দেশ্যে এই পত্র প্রেরিত হয়েছিল, তাই সিদ্ধ হবে ।
মীরজাফর । জাঁহাপনা তা হলে কী করবেন স্থির করেচেন ?
সিরাজ । রাজদ্রোহে লিপ্ত প্রজা সম্বন্ধে কী ব্যবস্থা করা উচিত বিবেচনা করেন ?
[ মীরজফর কোন কথা কহিলেন না ]
রাজা রাজবল্লভ কী বলেন ?
রাজবল্লভ । আমারও কোনো গোপন-লিপি কি জাঁহাপনা আবিষ্কার করেচেন ?
সিরাজ । রাজা রাজবল্লভকে আমরা চিনি । তিনি কাঁচা কাজ করেন না । জাফর আলি খাঁ !
মীরজাফর । নবাব কি প্রকাশ্য দরবারেই আমার বিচার করতে চান ?
[ নবাব তাঁহার দিকে চাহিলেন । তিনি সিংহাসন হইতে নামিয়া আসিলেন ]
সিরাজ । জাফর আলি খাঁ ! আজ বিচারের দিন নয়, সোহার্দ্য স্থাপনের দিন ! অন্যায় আমিও করেচি, আপনারাও করেচেন । খোদাতালার কাছে কে বেশি অপরাধী তা তিনিই বিচার করবেন । আজ আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে, আমাকে শুধু এই আশ্বাস দিন যে, বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না ।
রাজবল্লভ । এই দুর্দিনের জন্য কে দায়ী জনাব ?
সিরাজ । আবারও বিচার রাজা !
রাজবল্লভ । বিচার নয় জাঁহাপনা । আমি বলতে চাই যে, এখনও সময় আছে । এখনও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আপোষে নিষ্পত্তি সম্ভবপর ।
সিরাজ । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আপোষ ! রাজা, ওয়াটসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেও কি অপনারা তাদের মনোভাব বুঝতে পারেননি ? কলকাতায় সৈন্যসমাবেশ, চন্দননগর আক্রমণ, কাশিমবাজার অভিমুখে অভিযান, সবই কি শান্তি স্থাপনের প্রয়াস ?
জগৎশেঠ । নবাব যদি কলকাতা আক্রমণ না করতেন, তা হলে এসব কিছুই হতো না ।
সিরাজ । কলকাতার দুর্গকে তারা যদি দুর্ভেদ্য করে তুলতে না চাইত, তা হলে আমাকেও কলকাতা আক্রমণ করতে হতো না ! বাংলাদেশে অরাজক ছিল না । কোম্পানির দুর্গ প্রতিষ্ঠার কী প্রয়োজন ছিল বলতে পারেন ?
মিরজাফর । আপনি আমাদের কী করতে বলেন জাঁহাপনা !
সিরাজ । সবার আগে বলি—বাংলার মান, বাংলার মর্যাদা, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়াসে আপনারা আপনাদের শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, সর্বরকমে আমাকে সাহায্য করুন । আপনাদের সকলের সমবেত চেষ্টার ফলে যদি এই বিপদ থেকে আমরা পরিত্রান পাই, তা হলে একদিন আপনারা আমার বিচারে বসবেন । সেদিন যে দণ্ড আপনারা দেবেন, আমি মাথা পেতে নোব । আমাকে অযোগ্য মনে করে আর কাউকে যদি এই সিংহাসনে বসাতে চান, আমি হৃষ্টমনে সিংহাসন ছেড়ে দোব ।
[ সকলে নীরব রহিলেন ]
জাফর আলি খাঁ, আপনি শুধু সিপাহসালার নন, আপনি আমার পরম আত্মীয় । বিপদে আপন-জন জেনে বুকে ভরসা নিয়ে যার কাছে দাঁড়ানো যায় সেই না আত্মীয় । লোভে পড়ে, অথবা মোহের বশে, মানুষ অনেক সময় অনেক অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত হয়; কিন্তু কর্তব্যের আহ্বানে লোভ মোহ জয় করে যে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারে, সেই ত পুরুষ । সে পৌরুষ আপনার আছে, আমি জানি ।
[ একটু চুপ করিয়া সকলের মুখভাব লক্ষ করিয়া দেখিলেন । তারপর আবার বলিতে লাগিলেন ]
রাজা রাজবল্লভ, ভাগ্যবান জগৎশেঠ, শক্তিমান রায়দুর্লভ, বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয়—মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা । অপরাধ আমি যা করিচি, তা মিলিত হিন্দু মুসলমানের কাছেই করিচি—আঘাত যা পেয়েচি তাও মিলিত হিন্দু-মুসলমানের কাছ থেকেই পেয়েচি । পক্ষপাতিত্বের অপরাধে কেউ আমরা অপরাধী নই । সুতরাং আমি মুসলমান বলে আমার প্রতি আপনারা বিরূপ হবেন না ।
[ আবার চারিদিকে চাহিয়া দেখিলেন । আবার বলিলেন; ]
বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা, তার শ্যামল প্রান্তরে আজ রক্তের আলপনা, জাতির সৌভাগ্য-সূর্য আজ অস্তাচলগামী; শুধু সুপ্ত সন্তান-শিয়রে রুদ্যমানা জননী নিশাবসানের অপেক্ষায় প্রহর গণনায় রত । কে তাঁকে আশা দেবে ? কে তাঁকে ভরসা দেবে ? কে শোনাবে জীবন দিয়েও রোধ করব মরণের অভিযান ?
মীরজাফর । জাঁহাপনা, জনাব !
সিরাজ । আপনি ! হাঁ আপনি সিপাহসালার, আপনিই তা পারেন ।
মীরজাফর । আমি শপথ করচি জাঁহাপনা, আজ থেকে সর্বসময়ে সর্বক্ষেত্রে, আপনার সহায়তা করব ।
মোহনলাল । আমিও শপথ করচি সিপাহসালারের সকল নির্দেশ মাথা পেতে নোব ।
মীরমদন । তাঁর আদেশে হাসিমুখেই মৃত্যুকে বরণ করব ।
সিরাজ । আমি আজ ধন্য ! আমি ধন্য !
গোলামহোসেন । জনাব, পলাশির কথা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে বলেছিলেন ।
সিরাজ । হাঁ, পলাশি ! সিপাহসালার, পলাশি-প্রান্তরে আমাদের সৈন্য সমাবেশ করতে হবে । ক্লাইভের নেতৃত্বে কোম্পানির ফৌজ সেই পথেই এগিয়ে আসছে । আপনার আদেশ পালন করবার জন্য রায়দুর্লভ, ইয়ারলতিফ, মোহনলাল, মীরমদন, সিনফ্রে, সবাই নিজ নিজ সৈন্যবাহিনী নিয়ে সেখানে উপস্থিত থাকবেন । আমিও আপনার আদেশবহ হয়ে থাকব । আপনাদের আর আমি দরবারে আবদ্ধ রাখব না । আপনারা পলাশি যাত্রার আয়োজন করুন !
[ প্রথমে সৈন্যাধ্যক্ষগণ এবং পরে সভাসদগণ দরবার ত্যাগ করিলেন । রহিলেন শুধু সিরাজ আর গোলামহোসেন । সিরাজ চারিদিকে চাহিলেন, তারপর ধীরে ধীরে সিংহাসনের দিকে অগ্রসর হইলেন, সামনে নুইয়া পড়িয়া সিংহাসনের দিকে চাহিয়া রহিলেন, ঘাড় ঘুরাইয়া অস্ফুট কন্ঠে ডাকিলেন ]
সিরাজ । গোলামহোসেন !
গোলামহোসেন । জাঁহাপনা !
সিরাজ । সিংহাসন কি টলছে ?
গোলামহোসেন । না, জাঁহাপনা ।
সিরাজ । ভালো করে দ্যাখ ত ।
[ দুইজনেই সিংহাসন দেখিতে লাগিলেন । ধীরে ধীরে ঘসেটিবেগম প্রবেশ করিলেন, দাঁড়াইয়া দেখিলেন । তারপর কহিলেন:]
ঘসেটি । ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো !
সিরাজ । কে !
[ দ্রুত ঘুরিয়া দাঁড়াইয়া ঘসেটিকে দেখিলেন । হাসিয়া কহিলেন ]
ও আপনি !
[ কাছে অগ্রসর হইলেন ]
কাজ আছে ? তা স্মরণ করলেই ত দেখা করতাম ।
ঘসেটি । নবাবের অবসরের বড়োই অভাব, না ?
সিরাজ । বিপদ এমনি ঘনিয়ে আসচে যে, একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়িচি ।
ঘসেটি । এখনও বিপদ ? ঘসেটি বেগম তোমার বন্দি, শওকতজঙ্গ রণক্ষেত্রে নিহত, প্রতিদ্বন্দ্বী আর কোথাও নেই, এখনও বিপদের ভয় !
সিরাজ । কোম্পানির ফৌজ কাশিমবাজার অভিমুখে অভিযান করেচে ।
ঘসেটি । করেচে !
সিরাজ । সেই সংবাদই পেয়েচি !
ঘসেটি । তা হলে মুর্শিদাবাদেও তারা আসবে ?
সিরাজ । তেমনি দুর্দিন কে কামনা করে মা !
ঘসেটি । দুর্দিন না সুদিন ?
সিরাজ । সুদিন !
ঘসেটি । সুদিন নয় ? ঘসেটির বন্ধন মোচন হবে, সিরাজের পতন হবে, সুদিন নয় ?
সিরাজ । আপনি বুঝতে পারচেন না, আপনি কী বলচেন !
ঘসেটি । বেশ বুঝতে পারচি । অন্তরে যে কথা দিন-রাত গুমরে গুমরে মরচে, তাই আজ ভাষায় প্রকাশ করচি । মাসিকে তুমি গৃহ-হারা করেচ, মাসির সর্ব্বস্ব লুটে নিয়েচ, মাসিকে দাসী করে রেখেচ । মাসি তা ভুলবে ?
সিরাজ । অকারণে অভাগাকে আর তিরস্কার করবেন না ।
ঘসেটি । অকারণে !
সিরাজ । নয় কি ?
ঘসেটি । মতিঝিল কে অধিকার করেচে ? আমার সঞ্চিত সম্পদ কে হস্তগত করেচে ? কে আমার পালিত পুত্রকে সিংহাসন থেকে দূরে রেখেচে ? তুমি নও, দস্যু ?
সিরাজ । মতিঝিল আপনারই রয়েচে মা ।
ঘসেটি । তা হলে সেখানে যাবার অধিকার কেন আমার নেই ?
সিরাজ । রাজনীতির কারণে ।
ঘসেটি । তোমার রাজনীতির সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ? আমার রাজ্য নাই, তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই—আছে শুধু প্রতিহিংসা । এই প্রতিহিংসা আমার পূর্ণ হবে সেইদিন—যেদিন তোমার এই প্রাসাদ অপরে অধিকার করবে, তোমাকে ঐ সিংহাসন থেকে ঠেলে ফেলে শওকতজঙ্গের মতো কেউ যেদিন তোমাকে.....
[ লুৎফা ছুটিয়া আসিল ]
লুৎফা । মা, মা, তোমার মুখের ও-কথা শেষ কোরো না মা ।
ঘসেটি । নবাব-মহিষী !
লুৎফা । নবাব-মহিষী নই মা, তোমার কন্যা ।
ঘসেটি । নবাব-মহিষী নও ? আজ ভাবচ খুবই বিনয় করলে, কিন্তু দুদিন বাদে ওই কথাই সত্য হবে । এই আমার মতো জীবন যাপন করতে হবে !
লুৎফা । নবাব !
ঘসেটি । নবাব-মহিষী এই বাঁদির বিরুদ্ধে অভিযোগ করচেন নবাব । বাঁদিকে দণ্ড দিয়ে মহিষীকে খুশি করুন !
লুৎফা । জাঁহাপনা, ওকে ওঁর প্রাসাদে ফিরে যেতে দিন ।
সিরাজ । দোব লুৎফা —সময় এলেই পাঠিয়ে দোব ।
ঘসেটি । এখনো আশা —সময় আসবে ?
লুৎফা । অমন করে ওকথা বলো না মা । বুক আমার কেঁপে ওঠে ।
ঘসেটি । তোমার বুক কেঁপে ওঠে । আর আমার বুক যে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে, তা কি তোমরা বুঝেচ, না কখনো বুঝতে চেয়েচ ? অনাথা বিধবা আমি, নিজের গৃহে দুঃখকে সাথি করে পড়েছিলাম, অত্যাচারের প্রতিকারে অক্ষম হয়ে ডুকরে কেঁদে সান্তনা পেতাম । তোমরা তাতেও বাদ সাধলে, ছল করে ধরে এনে পাপ-পুরীতে বন্দিনী করে রাখলে । তোমাদের আমি ক্ষমা করব !
সিরাজ । আর আমরাই বুঝি ক্ষমা করব বিদ্রোহিনীকে । মায়ের মতো সম্মান দিয়ে মায়ের বোনকে মায়ের পাশেই বসিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম । তোমার তা ভালো লাগচে না ! আজ ভয় হচ্ছে শেষটায় না বাধ্য হয়ে তোমাকে বন্দিনীর মতোই কারাগারে স্থান দিতে হয় ।
লুৎফা । নবাব ! জাঁহাপনা ।
সিরাজ । ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত এই বাক্যজ্বালা আমি আর সইতে পারি না লুৎফা ! এমন কোনো অপরাধ আমি করিনি, যার জন্যে সকলের কাছে সব সময়ে অপরাধীর মতো আমাকে করজোড়ে থাকতে হবে ।
[ দুই হাতে মাথা চাপিয়া ধরিলেন ]
ঘসেটি । অপরকে বঞ্চিত করে যে সিংহাসন পেয়েচ, সে সিংহাসন তোমাকে শান্তি দেবে ভেবেচ ?
সিরাজ । আমি জানি কেমন করে ওদের কণ্ঠ রোধ করা যায়, কেমন করে স্পর্দ্ধায় উন্নত ওদের শির আমার পায়ের তলায় নুইয়ে দেওয়া যায় । শুধু আমার মুখের একটি কথা, চোখের একটি ইঙ্গিত সাপেক্ষ । আমি তাও পারি না । পারি না শুধু আমি কঠোর নই বলে, পারি না শুধু পরের ব্যথায় আমার প্রাণ কেঁদে ওঠে বলে ।
[ ক্ষোভে দুঃখে সিরাজ প্রায় কাঁদিয়া ফেলিলেন । লুৎফা তাঁহার কাছে গিয়া কহিলেন ]
লুৎফা । নবাব, জাঁহাপনা, আপনার চোখে জল ? আমি যে সইতে পারি না ।
ঘসেটি । আজকার এ কান্না শুধুই বিলাস; কিন্তু এ কান্নায় বিরাম নেই । চোখের জলে নবাব পথ দেখতে পাবেন না । বেগমকে আজীবন আমারই মতো কেঁদে কাটাতে হবে । আমিনা কেঁদে কেঁদে অন্ধ হবে ! পলাশি-প্রান্তরে কোলাহল ছাপিয়ে উঠবে ক্রন্দন-রোল ! সিরাজের নবাবির এই পরিণম !
[ ঘসেটি চলিয়া গেলেন । নবাব তাহার দিকে অগ্রসর হইতেছিলেন, লুৎফা তাঁহাকে ধরিলেন ]
সিরাজ । বলতে পার লুৎফা, বলতে পার, ওই ঘসেটি বেগম মানবী না দানবী ?
লুৎফা । ওকে ওর প্রাসাদে পাঠিয়ে দিন জাঁহাপনা । ওর সঙ্গে থাকতে আমার ভয় হয় । মনে হয়, ওর নিঃশ্বাসে বিষ, ওর দৃষ্টিতে আগুন, ওর অঙ্গ-সঞ্চালনে ভূমিকম্প !
সিরাজ । মাত্র পনেরোটি মাস আমি রাজত্ব করচি, লুৎফা ! এই পনেরো মাসে আমার এমনি অভিজ্ঞতা হয়েছে, মানুষেরা এমনি নির্মমতার পরিচয় আমি পেয়েচি যে, কোনো মানুষকে শ্রদ্ধাও করতে পারি না, ভালোও বাসতে পারি না ।
লুৎফা । চলুন জাঁহাপনা, একটু বিশ্রাম করবেন ।
সিরাজ । বিশ্রাম ! বিশ্রামের অবসর হবে পলাশির পর ।
লুৎফা । পলাশি ! সে কি জাঁহাপনা ?
সিরাজ । তুমি এখনও শোনোনি ? পলাশির মাঠে আবার যুদ্ধের সম্ভাবনা ।
লুৎফা । আবার যুদ্ধ ! জাঁহাপনা ?
সিরাজ । পনেরো মাসের নবাবি লুৎফা, তার মাঝে পুরো একটি বছর যুদ্ধে, ষড়যন্ত্রভেদে, গুপ্তচর পরিচালনায় অতিবাহিত হয়েচে । এইবার হয় ত শেষ যুদ্ধ !
লুৎফা । শেষ যুদ্ধ !
সিরাজ । যদি জয়ী হই, তা হলে হয়তো আর যুদ্ধ হবে না—আর যদি পরাজিত হই, তা হলে তো নয়ই !
লুৎফা । পলাশি !
সিরাজ । পলাশি ! লাখে লাখে পলাশ-ফুলের অগ্নি-বরণে কোনোদিন হয়তো পলাশির প্রান্তর রাঙা হয়ে থাকত, তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষা । জানি না, আজ কার রক্ত সে চায় । পলাশি, রাক্ষসী পলাশি !
[ নবাব বাহির হইয়া গেলেন । মঞ্চ অন্ধকার হইয়া গেল । করুণ সুরে বাদ্য বাজিল । যবনিকা পড়িল ]
***