নেফ্রন (Nephron)

Submitted by arpita pramanik on Sat, 11/24/2012 - 22:58

নেফ্রন : কিডনির বা বৃক্কের গঠনগত এবং কার্যগত একক (Human Nephron as structural and functional unit of kidney)

নেফ্রন (nephron) হল কিডনি বা বৃক্কের গঠনগত ও কার্যগত একক, যা প্রধানত ম্যালপিজিয়াম করপাসল এবং বৃক্কীয় নালিকা নিয়ে গড়ে ওঠে এবং মুত্র তৈরিতে প্রধান ভূমিকা নিয়ে থাকে । প্রতিটি মানব বৃক্কে প্রায় দশ লক্ষ করে নেফ্রন থাকে । প্রতিটি নেফ্রন প্রধানত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত; যথা: [১] ম্যালপিজিয়ান করপাসল, [২] বৃক্কীয় নালিকা এবং  [৩] সংগ্রাহী নালিকা

[1] ম্যালপিজিয়ান করপাসল (Malpighian Corpuscle):- এটি বৃক্কের কটেক্স অঞ্চলে অবস্থিত ফানেল-আকৃতি বিশিষ্ট অংশ । এটি ব্যাওমানের ক্যাপসুল [Bowman's capsule] এবং গ্লোমেরিউলাস নামে দুটি অংশ নিয়ে গঠিত । গ্লোমেরিউলাস হল ক্যাপসুল মধ্যস্থ কুণ্ডলীকৃত রেনাল ধমনীর জালক বিশেষ । রেনাল ধমনীর একটি শাখা ক্যাপসুলের মধ্যে প্রবেশ করে কুণ্ডলীকৃত জালক সৃষ্টি করে ক্যাপসুল থেকে আবার নির্গত হয়েছে । ব্যাওমানের ক্যাপসুল হল, গ্লোমেরিউলাসকে আবৃত করে অবস্থিত একটি আবরণ বিশেষ । গ্লোমেরিউলাস অভিমুখী রেনাল ধমনীর শাখাটিকে অন্তর্মুখী ধমনিকা বলে । গ্লোমেরিউলাস থেকে দূরগামী শাখাটিকে বহির্মুখী ধমনিকা বলে ।

কাজ:- ম্যালপিজিয়ান করপাসল পরা-পরিস্রাবকরূপে কাজ করে । গ্লোমেরিউলাস রক্তের দূষিত পদার্থগুলিকে পরিস্রুতকরে । ব্যাওমানের ক্যাপসুল গ্লোমেরিউলাসকে আবৃত করে রাখে এবং পরিস্রুত তরলকে বৃক্কীয় নালিকায় প্রেরণ করে ।

[2] বৃক্কীয় নালিকা (Renal tubule):- এই নালিকাটি ব্যাওমানের ক্যাপসুলের তলদেশ থেকে উত্পন্ন হয়ে সংগ্রাহী নালিকা পর্যন্ত বিস্তৃত । এটি সুক্ষ্ম পেঁচানো বা কুণ্ডলীকৃত নালিকা বিশেষ । এর প্রথম অংশকে নিকটবর্তী সংবর্ত নালিকা বা পরসংবর্ত নালিকা বলে । মাঝখানের U-আকৃতি বিশিষ্ট অংশকে হেনলীর লুপ [Henle's loop] বলে । শেষ অংশকে দূরবর্তী সংবর্ত নালিকা বা দূরসংবর্ত নালিকা বলে । বহির্মুখী ধমনিকা গ্লোমেরিউলাস ত্যাগ করার পর সংবর্ত নালিগুলির মধ্যে জালক সৃষ্টি করার পর আবার যুক্ত হয়ে একটি শিরা গঠন করে, এই শিরাটি বৃক্কীয় শিরার [renal vein] সঙ্গে যুক্ত হয় ।

কাজ:- বৃক্কীয় নালিকার প্রধান কাজ হল পরিস্রুত তরলের প্রয়োজনীয় অংশের পুনঃশোষণ করা । নিকটবর্তী সংবর্ত নালিকার কাজ হল গ্লুকোজ, সোডিয়াম আয়ন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ক্রিয়েটিন, সালফেট, ফসফেট  ইত্যাদিকে বিশোষণ করে । হেনলীর লুপ জল ও সোডিয়াম আয়ন বিশোষণ করে । দূরসংবর্ত নালিকা জলের বিশোষণে সাহায্য করে । 

[3] সংগ্রাহী নালিকা [Collecting tubule]:- প্রতিটি নেফ্রনের বৃক্কীয় নালিকার শেষ অংশগুলি অপেক্ষাকৃত যে মোটা নালির যুক্ত থাকে, তাকে সংগ্রাহী নালিকা বলে । পরিস্রুত তরল, পুনঃশোষনের পর, এই অংশে মুত্ররূপে সঞ্চিত হতে থাকে এবং গাবিনীর মধ্যে প্রবেশ করে । 

কাজ:- সংগ্রাহী নালিকা পরিস্রুত ও পুনঃবিশোষিত তরলকে মুত্ররূপে সংগ্রহ করে গবিনীতে প্রেরণ করে ।

ম্যালপিজিয়ান নালিকা এবং ম্যালপিজিয়ান করপাসল -এর পার্থক্য

S/L ম্যালপিজিয়ান নালিকা ম্যালপিজিয়ান করপাসল
1 ম্যালপিজিয়ান নালিকা হল পতঙ্গশ্রেণির প্রাণীদের রেচন অঙ্গ, যা মধ্য ও পশ্চাদ পৌষ্টিক নালীর সংযোগস্থলে অবস্থিত । ম্যালপিজিয়ান করপাসল হল মেরুদন্ডী প্রাণীদের বৃক্কস্থিত নেফ্রনের অংশবিশেষ ।
2 এগুলি হিমোলিম্ফে ভাসমান অবস্থায় থাকে । বৃক্কের কর্টেক্স অঞ্চলে থাকে ।
3 এগুলির আকৃতি নলের মতো । এগুলির আকৃতি কণিকার মতো ।
4 এরা হিমোলিম্ফ থেকে রেচন পদার্থ শোষণ করে পৌষ্টিক নালীর গহ্বরে প্রেরণ করে । দূষিত রক্তকে পরিস্রুত করে অর্থাৎ রক্ত থেকে দূষিত পদার্থগুলিকে ছেঁকে নিয়ে বৃক্কীয় নালিকায় প্রেরণ করে ।

*****

Related Items

ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোম, DNA, RNA ও জিন

1902 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী টি.বোভেরি ও ডব্লু. এস. সাটনের পরীক্ষা প্রমাণ করে যে, জিন হল ক্রোমোজোমের একটি অংশ । পরবর্তীকালে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে, জিন হল ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকা D.N.A. -র একটি অংশ। এরপর বিজ্ঞানী গ্রিফিথ, অ্যাভারি, ম্যাকলয়েড ...

ইউক্যারিওটিক কোশের সাইটোপ্লাজম

আদর্শ কোশ বা ইউক্যারিওটিক কোশের সাইটোপ্লাজমের অংশগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা- ভ্যাকুওল, সজীব কোশ-অঙ্গানু, নির্জীব বস্তু বা এরগ্যাস্টিক পদার্থ, সাইটোপ্লাজমের স্থানে স্থানে পর্দা ঘেরা গহ্বর দেখা যায়, এই গহ্বরগুলিকে ভ্যাকুওল বলে। উদ্ভিদ কোশের ভ্যাকুওলে ...

কোশ ও কোশের প্রকারভেদ

এককোশী জীব থেকে শুরু করে সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ এক বা একাধিক কোশ দিয়ে গঠিত, তাই কোশকে জীবদেহের গঠনমূলক একক বলা হয় । একটি মাত্র কোশ থেকেই প্রত্যেক জীবের জীবনযাত্রা শুরু হয় । এছাড়া জীবদেহের সমত জৈবিক ক্রিয়াগুলি কোশের মধ্যেই সম্পন্ন হয় ...

শুক্রাশয় নিঃসৃত হরমোন

শুক্রাশয়ের লেডিগের আন্তরকোষ থেকে টেস্টোস্টেরন নামক হরমোন নিঃসৃত হয় । টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষ দেহে যৌনাঙ্গের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে । এই হরমোন পুরুষদেহে দাঁড়ি-গোঁফ এবং বুক, তলপেট, ও বগলে কেশদ্গমসহ দেহে অন্যান্য গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের বিকাশে সাহায্য করে । ...

ডিম্বাশয় নিঃসৃত হরমোন

স্ত্রীলোকের ডিম্বাশয়ের পরিণত ডিম্বথলি থেকে ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসৃত হয় । স্টেরয়েডধর্মী এই হরমোন স্ত্রীদেহের যৌনাঙ্গের পরিবর্তন এবং যৌন বৈশিষ্ট্যের বিকাশে সাহায্য করে । ত্বকের নীচে স্নেহপদার্থের সঞ্চয় ঘটিয়ে এই হরমোন নারীসুলভ দেহগঠন করতে সাহায্য করে । নারীর দেহে ...