Submitted by arpita pramanik on Wed, 12/12/2012 - 22:15

জিন (Gene)

এক কথায় জিন হল বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক, বাহক ও নিয়ন্ত্রক

1950 খ্রিস্টাব্দের পর থেকেই জিন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারনা বাধ্য হয়ে বার বার পাল্টাতে হয়েছে । ক্রোমোজোম ও জিন সম্পর্কে আধুনিক গবেষণাই প্রমাণিত হয়েছে যে, জিন হল জীবকোশের ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকা DNA -এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ যা DNA -এর একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করে । জিনকে ক্রোমোজোমের কার্যগত একক [functional unit of Chromosome] বলা হয় ।

সংজ্ঞা [Defination]:- প্রধানত ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোমে অবস্থিত, DNA দ্বারা গঠিত এবং জীবের বংশানুক্রমে প্রবাহিত বৈশিষ্ট্য নির্ধারক একককে জিন বলে

গঠন [Structure]:-  DNA নিউক্লিক অ্যাসিড দিয়ে গঠিত । DNA -র নির্দিষ্ট সংখ্যক 'বেস', যা কোনও একটি প্রোটিন (এনজাইম) সংশ্লেষের সংকেত বহন করে, তা নিয়েই জিন গঠিত হয় । জিনকে ক্রোমোজোমের রাসায়নিক একক হিসেবেও অভিহিত করা হয় ।

জিনের বৈশিষ্ট্য:-

[ক]  জিন নিউক্লিক অ্যাসিড দ্বারা গঠিত ।

[খ]  জিন ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোমে অবস্থান করে ।

[গ]  জিন জীবের বিশেষ কোনও বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমিকভাবে বহন করে ।

[ঘ] এটি জীবের প্রকরণ এবং পরিব্যক্তি বা মিউটেশনে মুখ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে । 

জিনের কাজ:-

[ক] জিনকে বংশগতির ধারক ও বাহক বলা যায়, কারণ : ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান DNA -ই জিনের রাসায়নিক রূপ । DNA অণুই জীবের বংশগতির বৈশিষ্ট্যাবলী পুরুষানুক্রমে এক জনু থেকে অপর জনুতে বহন করে । এই কারণে DNA অণুকেই জিন বলে মনে করা হয় । যে সব জীবদেহে DNA থাকে না, কেবল RNA থাকে, সেক্ষেত্রে RNA জিন হিসেবে কাজ করে (যেমন উদ্ভিদ ভাইরাসের ক্ষেত্রে) ।

[খ] জীবের এক-একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জিন কাজ করে, অর্থাৎ এক-একটি বৈশিষ্ট্য একাধিক জিনের সম্মিলিত ক্রিয়ার ফল । যেমন : ড্রসোফিলা নামে মাছির চোখের রং প্রায় 20টি জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । মানুষের চামড়ার রং -এর ক্ষেত্রেও আছে বেশ কয়েক জোড়া জিন । আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে একটি মাত্র জিন বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যকে নিয়ন্ত্রিত করে । উদাহরণস্বরূপ, অ্যালবিনো (albino) মানুষের দেহের চর্ম, চুলের রং ইত্যাদি একটি মাত্র জিনের মিউটেশনের ফলে সৃষ্টি হয় ।  অর্থাৎ, এক্ষেত্রে একটি মাত্র জিন দেহের বিভিন্ন অংশের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে ।

অ্যালবিনো (albino):- যে সমস্ত মানুষের দেহে কোনও রঞ্জক না থাকার, ফলে চুল, চামড়ার রং, চোখের তারার রং ইত্যাদি সাদা বা ফ্যাকাশে বা বর্ণহীন বর্ণের হয়, তাদের অ্যালবিনো (albino) বলে ।

[গ] আকৃতি ও সংযুক্তি অপরিবর্তিত রেখে জিনের স্ব-প্রতিরূপ [self duplication] গঠনের ক্ষমতা আছে । অবশ্য মাঝে মাঝে জিনের গঠনগত পরিবর্তনের ফলে তাদের আচরণগত পরিবর্তন-ও ঘটে, অর্থাৎ নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব হয় । জিনের এই গঠনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাবকে পরিব্যক্তি বা মিউটেশন [mutation] বলা হয় ।

এক কথায় জিন হল বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক, বাহক ও নিয়ন্ত্রক

*****

Related Items

ছত্রাক (Fungi)

ক্লোরোফিলবিহীন পরভোজী পুষ্টিসম্পন্ন ও ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদদের ছত্রাক বলা হয় । ছত্রাকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম । মানবজীবনে ছত্রাকের উপকারিতা ও অপকারিতা । পেনিসিলিয়াম, ঈস্ট প্রভৃতি উপকারী ছত্রাক । পেনিসিলিয়াম এক রকমের বহুকোশী মৃতজীবী ...

জীবাণু বা মাইক্রোবস (Microbes)

যে সমস্ত অতি ক্ষুদ্র এবং এককোশী বা বহুকোশী জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কেবলমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়, তাদেরই সাধারণভাবে জীবাণু বলে । অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবদের এককথায় জীবাণু বা অণুজীব বা মাইক্রোবস বলা হয় ।

রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাসের রোগ সংক্রমণ প্রক্রিয়া

ভাইরাস বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে, যেমন - ইনফ্লুয়েঞ্জা, AIDS, পোলিও, জল বসন্ত, মাম্পস, হাম, এনকেফালাইটিস, জলাতঙ্ক, পা ও মুখের ঘা, জন্ডিস, ডেঙ্গু জ্বর প্রভৃতি । ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রধানত মানুষের শ্বসনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে রোগীর হাঁচি, কাশি ও নির্গত মিউকাসের মাধ্যমে ...

ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ

1917 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী দ্য হেরেলী ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাসদের ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ বা ফাজ নামে অভিহিত করেন । এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাকটিরিওফাজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভালো করে জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে 'T' শ্রেণির অন্তর্গত ব্যাকটিরিওফাজই প্রধান । ...

ভাইরাসে জড়ের ও প্রাণের লক্ষণ

ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে না । ভাইরাস কোনো বহিঃস্থ উদ্দীপকে সাড়া দেয় না । ভাইরাসের চলন ক্ষমতা নেই । ভাইরাসের দেহে কোনোরকম বিপাক ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না । পোষকের দেহ-কোশে ভাইরাস বংশবিস্তারে সক্ষম । ভাইরাসের দেহে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিডের ...