মানুষের হৃৎপিণ্ডের মধ্যে দিয়ে রক্ত সংবহন

Submitted by arpita pramanik on Sun, 04/28/2013 - 22:05

মানুষের হৃৎপিণ্ডের মধ্যে দিয়ে রক্ত সংবহন (Blood circulation through human heart)

 

Blood Circulation

মানব দেহের হৃৎপিণ্ড একটি ছন্দে সংকোচিত ও প্রসারিত হয়ে সংবহন তন্ত্রের রক্তকে সচল রাখে । হৃৎপিণ্ডের সংকোচনকে সিস্টোল ও প্রসারন কে ডায়াস্টোল বলে । হৃৎপিণ্ডের একটি সিস্টোল ও ডায়াস্টোল কে এক সঙ্গে একটি হৃৎস্পন্দন বলে । হৃৎপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াটি নিম্নলিখিত কতগুলি কার্যে বিভক্ত -

১৷ অলিন্দ দ্বয় প্রসারিত হলে সারা শরীরের দুষিত রক্ত ঊর্ধ্ব ও মহা শিরা দিয়ে ডান অলিন্দে আসে । একি সময় ফুসফুস থেকে বিশুদ্ধ রক্ত ফুসফুসীয় শিরা দিয়ে বাম অলিন্দ আসে ।

২৷ অলিন্দ দ্বয় রক্তে পূর্ণ হলে সংকুচিত হয় এবং নিলয় দ্বয় প্রসারিত হয় । তখন ডান অলিন্দের রক্ত ত্রিপত্র কপাটিকার ভিতর দয়ে ডান নিলয়ে আসে এবং বাম অলিন্দের রক্ত দ্বিপত্র কপাটিকার ভিতর দিয়ে বাম নিলয়ে প্রবেশ করে ।

৩৷ নিলয় দ্বয় সম্পূর্ণ রক্তে পূর্ণ হলে সংকোচিত হয় এবং ডান নিলয় থেকে ফুসফুসীয় ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে । বাম নিলয় থেকে মহা ধমনীর মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে । এই সময় অর্ধচন্দ্রাকৃতি কপাটিকা খুলে যায় এবং দ্বিপত্র ও ত্রিপত্র কপাটিকা বন্ধ থাকে ।

৪৷ এর পর আবার অলিন্দ দ্বয় প্রসারিত হলে রক্ত অলিন্দে প্রবেশ করে । এইভাবে সংকোচন ও প্রসারনের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের পদ্ধতিটি অব্যহত থাকে ।

 

হৃৎপিণ্ডের গঠন (Structure of Human Heart)

 

Human Heartমানুষের হৃৎপিণ্ডটি বক্ষ গহ্বরে ফুসফুস দ্বয়ের মাঝখানে ও মধ্যছদার উপরে অবস্থিত। ইহা ত্রিকোণাকার পেশী বহুল সক্রিয় যন্ত্র বিশেষ । মানব দেহের হৃৎপিণ্ডটি লম্বালম্বি ছেদ করলে নিম্নলিখিত অংশ গুলি দেখা যায়-

১৷ প্রকোষ্ঠ (Closet)

মানুষের হৃৎপিণ্ডে প্রকোষ্ঠের সংখ্যা চারটি যথা- ক) ডান অলিন্দ, খ) ডান নিলয়, গ) বাম অলিন্দ, ঘ) বাম নিলয়

অলিন্দ (Atrium)- ইহা হৃৎপিণ্ডের সংগ্রাহক প্রকোষ্ঠ । অলিন্দের সংখ্যা দুটি- যথা- ডান অলিন্দ, বাম অলিন্দ। উভয় অলিন্দ অন্ত অলিন্দ প্রাচীর দ্বারা বিভেদিত ।

ক) ডান অলিন্দ (Right Atrium) - ডান অলিন্দে ঊর্ধ্ব মহাশিরা ও নিম্ন মহাশিরা যুক্ত থাকে । ইহার মাধ্যমে দুষিত রক্ত ডান অলিন্দে প্রবেশ করে । ডান অলিন্দের প্রাচীরে অবস্থিত স্পেস মেকার হৃৎপিণ্ডের ছন্দ গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে ।

খ) বাম অলিন্দ (Left Atrium) - এই অলিন্দে চারটি ফুসফুসীয় শিরা যুক্ত থাকে । এর মাধ্যমে বিশুদ্ধ রক্ত বাম অলিন্দে প্রবেশ করে ।

নিলয় (Ventricle) - ইহা হৃৎপিণ্ডের প্রেরক প্রকোষ্ঠ। ইহার অন্তঃ প্রাচীর পেশী বহুল খাঁজ যুক্ত । এই খাঁজ গুলিকে কলামনি কারনি বলে। নিলয় দুটি পরস্পর আন্ত নিলয় প্রাচীর দ্বারা বিভেদিত ।

গ) ডান নিলয় (Right Ventricle) - ইহার সাথে ফুসফুসীয় ধমনী যুক্ত থাকে । এর মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত দুষিত রক্ত ফুসফুসে প্রবেশ করে।

ঘ) বাম নিলয় (Left Ventricle) - ইহার সাথে যুক্ত থাকে মহা ধমনী, যার মাধ্যমে অক্সিজেন পূর্ণ বিশুদ্ধ রক্ত সজীব কোষে পৌঁছায় ।

২৷ কপাটিকা (Valve)

কপাটিকার নাম

অবস্থান

কাজ

ট্রাইকাসপিড বা ত্রিপক কপাটিকা

ডান অলিন্দ ও ডান নিলয়ের সংযোগস্থলে অবস্থিত ।

ডান অলিন্দ থেকে রক্তকে ডান নিলয়ে প্রেরন করা কিন্তু রক্তকে বিপরীত পথে যেতে বাধা দেওয়া ।

বাইকাস পিড বা মাইট্রাল বা দ্বিপত্র কপাটিকা

বাম অলিন্দ ও বাম নিলয়ের সংযোগস্থলে অবস্থিত ।

বাম অলিন্দ থেকে রক্তকে বাম নিলয়ে প্রেরন করা কিন্তু রক্তকে বিপরীত পথে যেতে বাধা দেওয়া ।

পালমনারি কপাটিকা

ডান নিলয় ও ফুসফুসীয় ধমনীর সংযোগস্থলে অবস্থিত ।

রক্তকে ডান নিলয় থেকে ফুসফুসীয় ধমনীতে প্রেরন করা, কিন্তু রক্তকে বিপরীত পথে যেতে বাধা দেওয়া ।

অ্যাওটিক কপাটিকা

বাম নিলয় ও মহা ধমনীর সংযোগস্থলে অবস্থিত ।

রক্তকে বাম নিলয় থেকে মহা ধমনীতে প্রেরন করা, কিন্তু রক্তকে বিপরীত পথে যেতে বাধা দেওয়া ।

*****

Related Items

উদ্ভিদ দেহে ট্যাকটিক চলন

ট্যাকটিক চলন - বহিঃস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে উদ্ভিদ বা উদ্ভিদ অঙ্গের স্থান পরিবর্তন কে আবিষ্ট চলন বা ট্যাকটিক চলন বলে। ট্যাকটিক চলনের প্রকারভেদ , ফটোট্যাকটিক, থার্মট্যাকটিক, কেমোট্যাকটিক, হাইড্রোট্যাকটিক।

উদ্ভিদের চলন (Movement of Plants)

উদ্ভিদের চলন - বেশির ভাগ উদ্ভিদের কোনো নির্দিষ্ট গমন অঙ্গ থাকে না, তারা মূলের সাহায্যে মাটিতে আবদ্ধ থাকে। কোনো কোনো দুর্বল কাণ্ড বিশিষ্ট ও লতানে উদ্ভিদের আকর্ষ থাকে। প্রকারভেদ , ট্যাকটিক চলন , ট্রপিক চলন , ন্যাস্টিক চলন।

পুষ্টি সম্পর্কিত কয়েকটি পার্থক্য

পুষ্টি সম্পর্কিত কয়েকটি পার্থক্য , স্বভোজী ও পরভোজী মধ্যে পার্থক্য; মৃতজীবী , পরজীবী ও মিথোজীবী মধ্যে পার্থক্য; উপচিতি বিপাক ও অপচিতি বিপাক মধ্যে পার্থক্য ; বিপাক ও পরিপাক মধ্যে পার্থক্য..

জীবদেহে খাদ্যের গুরুত্ব

যে সমস্ত আহার্য সামগ্রী গ্রহণের মাধ্যমে জীবদেহের পুষ্টি, বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ ঘটে এবং প্রয়োজনীয় তাপশক্তি যোগান পাওয়া যায়, তাদের খাদ্য বলে। খাদ্যর প্রকারভেদ, দেহ পরিপোষক খাদ্য, একটি মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য,

মানবদেহে উৎসেচকের প্রয়োজনীয়তা

সাধারণত প্রোটিন ধর্মী যে দ্রবণীয় জৈব অনুঘটক সজীব কোষে উৎপন্ন হয় কিন্তু ওই কোষের নিয়ন্ত্রণাধীনে না থেকে না না ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে এবং বিক্রিয়ার শেষে নিজে অপরিবর্তিত থাকে, তাদের উৎসেচক বলে। উৎসেচকর বৈশিষ্ট্য, উৎসেচকের শ্রেণীবিন্যাস ...