প্রাণীদেহে সংবহন (Circulation in Animals)
প্রাণীদেহে সংবহন তন্ত্র দুই প্রকার যথা- ১৷ রক্ত সংবহন তন্ত্র , ২৷ লসিকা সংবহন তন্ত্র
রক্ত সংবহন তন্ত্র - রক্ত সংবহনে সহায়ক যন্ত্র গুলি মিলিত হয়ে যে তন্ত্র গঠন করে তাকে রক্ত সংবহন তন্ত্র বলে।
রক্ত সংবহন তন্ত্রের প্রকারভেদ
প্রাণীদেহে প্রধানত দু রকমের রক্ত সংবহন তন্ত্র দেখা যায়। যথা ১৷ মুক্ত সংবহন তন্ত্র ( open vascular system ) , ২৷ বদ্ধ সংবহন তন্ত্র ( closed vascular system )
১৷ মুক্ত সংবহন তন্ত্র - যে সংবহন তন্ত্রে রক্ত কেবল মাত্র রক্ত বাহের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে দেহ গহ্বর বা সেলম নামে ফাঁকা স্থানে মুক্ত হয়ে থাকে তাকে মুক্ত সংবহন তন্ত্র বলে । যেমন চিংড়ি মাছের সংবহন তন্ত্র ।
২৷ বদ্ধ সংবহন তন্ত্র - যে সংবহন তন্ত্রে রক্ত সবসময় রক্তবাহে এবং হৃৎপিণ্ডের মধ্যে আবদ্ধ ভাবে সংবাহিত হয় কিন্তু কখনই দেহ গহ্বরে মুক্ত হয় না সেই সংবহন তন্ত্রকে বদ্ধ সংবহন তন্ত্র বলে । যেমন কেঁচো, মানুষের সংবহন তন্ত্র ।
সিস্টেমিক সংবহন - এই সংবহন হৃৎপিণ্ড এবং দেহকোষের মধ্যে ঘটে, অর্থাৎ হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত ধমনীর মাধ্যমে দেহকোষের জালকে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেহকোষের জালক থেকে শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে ।
পোর্টাল সংবহন - এই রকম সংবহনে হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত বিভিন্ন ধমনীর মাধ্যমে পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, প্লীহা ও অন্ত্রের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে । ঐ সব অংসের জালক থেকে রক্ত পোর্টাল শিরার মাধ্যমে যকৃতে অবস্থিত জালকে আসে। যকৃৎ থেকে রক্ত হেপাটিক শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে।
রক্ত সংবহন তন্ত্রের বিভিন্ন উপাদান গুলি পারস্পরিক সম্পর্ক কি ?
রক্ত সংবহন তন্ত্রের উপাদান গুলি হল
১৷ হৃৎপিণ্ড
২৷ রক্ত
৩৷ রক্তবাহ ধমনী, শিরা ও জালক ।
নিম্নে রক্ত সংবহন তন্ত্রের উপাদান গুলির মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা করা হল ।
১৷ হৃৎপিণ্ড অনবরত নির্দিষ্ট ছন্দময় গতিতে পাম্প করে রক্তকে সারা দেহে সঞ্চালিত করে ।
২৷ হৃৎপিণ্ডের সংকোচনের সময় রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে ধমনীর মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে ।
৩৷ হৃৎপিণ্ড যখন প্রসারিত হয় তখন দেহের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে।
৪৷ ধমনী ও শিরা পরস্পরের মধ্যে জালকের সাহায্যে সংযোগ স্থাপন করে ।
সুতরাং প্রাণীদেহের রক্ত সংবহনে হৃৎপিণ্ড, শিরা, ধমনী, জালক এবং রক্ত সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করে ।
মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরে রক্ত প্রবাহের কারণ কি ?
মেরুদণ্ডী প্রাণীর দেহে প্রধান সংবহন মাধ্যম হল রক্ত। হৃৎপিণ্ড পাম্পের ন্যায় কাজ করে দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহ ঘটায়। রক্ত প্রবাহের উদ্দেশ্য গুলি হল
১৷ প্রাণীদেহে পৌষ্টিক নালি থেকে শোষিত তরল খাদ্য উপাদান রক্তের মাধ্যমে সজীব কোষে পৌঁছায় ।
২৷ রক্তের মাধ্যমে শ্বাস অঙ্গ থেকে অক্সিজেন প্রতিটি কলা কোষে পৌঁছায় এবং প্রতিটি কলা কোষে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড রক্তের মাধ্যমে শ্বাস অঙ্গে পৌঁছায় ।
৩৷ বিভিন্ন অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হরমোন রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষে পৌঁছায় ।
৪৷ কোষে বিপাক জাত বর্জ্য পদার্থ রক্তের মাধ্যমে রেচন অঙ্গে পৌঁছায় ।
৫৷ রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষ সরাসরি রোগ জীবাণু কে ধ্বংস করে দেহের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।
ধমনী কেটে গেলে ফিনকি দিয়ে কিন্তু শিরা কেটে গেলে গলগল করে রক্ত বের হয় কেন ?
ধমনীর প্রাচীর পুরু ও গহ্বর ছোটো হয় এবং ধমনীর মধ্যে দিয়ে রক্ত বেগে প্রবাহিত হয়। এর ফলে ধমনীতে রক্তের চাপ খুব বেশি থাকে তাই ধমনী কেটে গেলে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয় ।
অপর দিকে শিরার প্রাচীর পাতলা ও গহ্বর বড় হয় এবং শিরার মধ্যে দিয়ে রক্ত ধীরে প্রবাহিত হয়। এর ফলে শিরাতে রক্তচাপ কম থাকে তাই শিরা কেটে গেলে গলগল করে। রক্ত বের হয় ।
রক্তচাপ কাকে বলে ? ইহা কয় প্রকার ও কি কি ? এক জন সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে রক্ত চাপ কত ? রক্তচাপ পরিমাপক যন্ত্রটির নাম কি ? মানব দেহের কোন ধমনীতে রক্ত চাপ মাপা হয় ?
রক্তচাপ রক্তবাহের মধ্যে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় রক্তবাহের প্রাচীরে যে পার্শ্বীয় চাপ দেয় তাকে রক্তচাপ বলে ।
রক্তচাপ দুই রকমের ১৷ সিস্টোলিক চাপ ২৷ ডায়াস্টোলিক চাপ
১৷ সিস্টোলিক চাপ হৃৎপিণ্ড যখন সংকুচিত অবস্থায় বা সিস্টোল অবস্থায় থাকে তখন যে সর্বাধিক চাপ সৃষ্টি করে তাকে সিস্টোলিক চাপ বলে। চাপ 120-130 ।
২৷ ডায়াস্টোলিক চাপ হৃৎপিণ্ড যখন শিথিল অবস্থায় থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টোল অবস্থায় থাকে তখন যে চাপসৃষ্টি করে তাকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে। চাপ 70-90 ।
রক্ত চাপ মাপক যন্ত্রটি হল স্ফিগমোম্যানোমিটার (Sphgmomanometer)। ব্রাকিয়াল ধমনীতে (Brachial Artery) মানুষের রক্ত চাপ নির্ণয় করা হয় ।
*****
- 21151 views