মানবদেহের রেচন ক্রিয়া

Submitted by arpita pramanik on Sat, 11/24/2012 - 14:05

মানবদেহের রেচন ক্রিয়া (Excretion in Man)

মানব দেহের রেচন অঙ্গ হল বৃক্ক । এছাড়া চর্ম, ফুসফুস, যকৃৎ ইত্যাদি রেচনে সাহায্য করে বলে এদের সহায়ককারী রেচন অঙ্গ বলে ।

মানবদেহের রেচন তন্ত্র (Excretory system of Man):- মানবদেহের রেচন তন্ত্র এক জোড়া বৃক্ক, এক জোড়া গবিনী, একটি মুত্রাশায়, এবং একটি মুত্রনালী নিয়ে গঠিত । মানুষের বৃক্ক দুটি দেখতে শিমের বীজের মতো এবং ওজনে প্রায় 125-170 gm. । বৃক্ক দুটি মানবদেহের উদর গহ্বরের কটি অঞ্চলে (lumber region), মেরুদন্ডের উভয় পাশে ও পেরিটোনিয়ামের নীচে পৃষ্ঠপ্রাচীর সংলগ্ন অবস্থায় অবস্থিত । প্রতিটি বৃক্ক থেকে একটি করে সরু নালী নির্গত হয়ে মেরুদন্ডের দু'পাশ দিয়ে নীচের দিকে বিস্তৃত থাকে, এই নালী দু'টিকে গবিনী বা ইউরেটার (Ureter) বলে । এদের মাধ্যমে বৃক্ক থেকে নিঃসৃত মুত্র নির্গত হয় । গবিনী দুটি বস্তি গহ্বরে বা শ্রোণি গহ্বরে অবস্থিত একটি পেশিময় থলির সঙ্গে যুক্ত থাকে । এই থলিকে মুত্রথলি (urinary bludder) বলে । মুত্রথলির মধ্যে মুত্র সাময়িকভাবে সঞ্চিত থাকে । মুত্র থলিটি একটি মুত্রনালীর (urethra)    সাহায্যে দেহের বাইরে উন্মুক্ত থাকে । মুত্রথলি ও মুত্রনালীর সংযোগ স্থলে একটি স্ফিংটার পেশি (sphincter muscle) থাকে, যার ফলে আমরা ইচ্ছানুযায়ী মুত্রত্যাগ করতে পারি ।

বৃক্কের গঠন ও কাজ (Structure and function of kidney)

মানবদেহের বৃক্কের গঠন : গঠন অনুযায়ী মানব দেহের বৃক্ককে দু'ভাগে ভাগ করা যায়, যথা: বহির্গঠন ও অন্তর্গঠন ।

[i] বহির্গঠন:-

[a]  মানুষের বৃক্ক দেখতে অনেকটা শিম বীজের মতো । পরিণত মানুষের ক্ষেত্রে এটি লম্বায় 11 cm. প্রস্থে 5 cm. এবং 3 cm. পুরু হয়ে থাকে ।

[b]  প্রতিটি বৃক্ক তন্তুময় যোগকলা নিয়ে গঠিত 'ক্যাপসুল' দিয়ে ঢাকা থাকে ।

[c]  বৃক্কের পিঠের দিকটি উত্তল এবং ভিতরের দিকটি অবতল ।  বৃক্কের অবতল খাঁজটিকে বৃক্কীয় নাভী বা হাইলাম বলে ।

[d]  হাইলাম অংশটি বৃক্কীয় ধমনী, বৃক্কীয় শিরা ও গাবিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকে ।

 

[ii]  অন্তর্গঠন:-

[a]  লম্বচ্ছেদ করলে প্রতিটি বৃক্কের দুটি অংশ লক্ষ করা যায় —বাইরের গাঢ় লাল রং -এর অংশটিকে বহিঃস্তর বা কর্টেক্স এবং ভিতরের অপেক্ষাকৃত হালকা লাল অংশটিকে অন্তঃস্তর বা মেডালা বলে ।

[b]  বৃক্কের কর্টেক্স অংশটি স্থানে স্থানে মেডালার গভীরে প্রবেশ করে পিরামিডের মতো গঠন রচনা করে, এগুলিকে বৃক্কীয় পিরামিড বলে ।

[c]  বৃক্কের কর্টেক্স ও মেডালা প্রায় সম্পূর্ণভাবে একটি গহ্বরকে ঘিরে অবস্থান করে । এই গহ্বরটিকে বৃক্কীয় পেলভিস বলে । 

[d]  ফানেলের মতো দেখতে এই অংশ থেকে গবিনী উত্পন্ন হয়েছে । গবিনী পেলভিসে ঢোকার পর কয়েকটি মেজর ক্যালিক্স বা প্রধান বৃতি গঠন করে । প্রতিটি মেজর ক্যালিক্স আবার কিছু মাইনর ক্যালিক্স বা শাখা বৃতিতে বিভক্ত হয় ।

[e]  মাইনর ক্যালিক্স যে অংশে বৃক্কীয় পিরামিডের সঙ্গে যুক্ত হয় তাকে বিক্কীয় পীড়কা বলে ।

[f]  প্রতিটি বৃক্ক অসংখ্য সুক্ষ্ম চুলের মতো কুণ্ডলীকৃত নালিকা নিয়ে গঠিত, এদের নেফ্রন বলে । এই নেফ্রনই  হল বৃক্কের গঠনগতকার্যগত একক । এক একটি বৃক্কে প্রায় দশ লক্ষ নেফ্রন থাকে ।

*****

 

 

Related Items

ছত্রাক (Fungi)

ক্লোরোফিলবিহীন পরভোজী পুষ্টিসম্পন্ন ও ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদদের ছত্রাক বলা হয় । ছত্রাকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম । মানবজীবনে ছত্রাকের উপকারিতা ও অপকারিতা । পেনিসিলিয়াম, ঈস্ট প্রভৃতি উপকারী ছত্রাক । পেনিসিলিয়াম এক রকমের বহুকোশী মৃতজীবী ...

জীবাণু বা মাইক্রোবস (Microbes)

যে সমস্ত অতি ক্ষুদ্র এবং এককোশী বা বহুকোশী জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কেবলমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়, তাদেরই সাধারণভাবে জীবাণু বলে । অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবদের এককথায় জীবাণু বা অণুজীব বা মাইক্রোবস বলা হয় ।

রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাসের রোগ সংক্রমণ প্রক্রিয়া

ভাইরাস বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে, যেমন - ইনফ্লুয়েঞ্জা, AIDS, পোলিও, জল বসন্ত, মাম্পস, হাম, এনকেফালাইটিস, জলাতঙ্ক, পা ও মুখের ঘা, জন্ডিস, ডেঙ্গু জ্বর প্রভৃতি । ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রধানত মানুষের শ্বসনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে রোগীর হাঁচি, কাশি ও নির্গত মিউকাসের মাধ্যমে ...

ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ

1917 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী দ্য হেরেলী ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাসদের ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ বা ফাজ নামে অভিহিত করেন । এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাকটিরিওফাজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভালো করে জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে 'T' শ্রেণির অন্তর্গত ব্যাকটিরিওফাজই প্রধান । ...

ভাইরাসে জড়ের ও প্রাণের লক্ষণ

ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে না । ভাইরাস কোনো বহিঃস্থ উদ্দীপকে সাড়া দেয় না । ভাইরাসের চলন ক্ষমতা নেই । ভাইরাসের দেহে কোনোরকম বিপাক ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না । পোষকের দেহ-কোশে ভাইরাস বংশবিস্তারে সক্ষম । ভাইরাসের দেহে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিডের ...