মানবদেহের রেচন ক্রিয়া (Excretion in Man)
মানব দেহের রেচন অঙ্গ হল বৃক্ক । এছাড়া চর্ম, ফুসফুস, যকৃৎ ইত্যাদি রেচনে সাহায্য করে বলে এদের সহায়ককারী রেচন অঙ্গ বলে ।
মানবদেহের রেচন তন্ত্র (Excretory system of Man):- মানবদেহের রেচন তন্ত্র এক জোড়া বৃক্ক, এক জোড়া গবিনী, একটি মুত্রাশায়, এবং একটি মুত্রনালী নিয়ে গঠিত । মানুষের বৃক্ক দুটি দেখতে শিমের বীজের মতো এবং ওজনে প্রায় 125-170 gm. । বৃক্ক দুটি মানবদেহের উদর গহ্বরের কটি অঞ্চলে (lumber region), মেরুদন্ডের উভয় পাশে ও পেরিটোনিয়ামের নীচে পৃষ্ঠপ্রাচীর সংলগ্ন অবস্থায় অবস্থিত । প্রতিটি বৃক্ক থেকে একটি করে সরু নালী নির্গত হয়ে মেরুদন্ডের দু'পাশ দিয়ে নীচের দিকে বিস্তৃত থাকে, এই নালী দু'টিকে গবিনী বা ইউরেটার (Ureter) বলে । এদের মাধ্যমে বৃক্ক থেকে নিঃসৃত মুত্র নির্গত হয় । গবিনী দুটি বস্তি গহ্বরে বা শ্রোণি গহ্বরে অবস্থিত একটি পেশিময় থলির সঙ্গে যুক্ত থাকে । এই থলিকে মুত্রথলি (urinary bludder) বলে । মুত্রথলির মধ্যে মুত্র সাময়িকভাবে সঞ্চিত থাকে । মুত্র থলিটি একটি মুত্রনালীর (urethra) সাহায্যে দেহের বাইরে উন্মুক্ত থাকে । মুত্রথলি ও মুত্রনালীর সংযোগ স্থলে একটি স্ফিংটার পেশি (sphincter muscle) থাকে, যার ফলে আমরা ইচ্ছানুযায়ী মুত্রত্যাগ করতে পারি ।
বৃক্কের গঠন ও কাজ (Structure and function of kidney)
মানবদেহের বৃক্কের গঠন : গঠন অনুযায়ী মানব দেহের বৃক্ককে দু'ভাগে ভাগ করা যায়, যথা: বহির্গঠন ও অন্তর্গঠন ।
[i] বহির্গঠন:-
[a] মানুষের বৃক্ক দেখতে অনেকটা শিম বীজের মতো । পরিণত মানুষের ক্ষেত্রে এটি লম্বায় 11 cm. প্রস্থে 5 cm. এবং 3 cm. পুরু হয়ে থাকে ।
[b] প্রতিটি বৃক্ক তন্তুময় যোগকলা নিয়ে গঠিত 'ক্যাপসুল' দিয়ে ঢাকা থাকে ।
[c] বৃক্কের পিঠের দিকটি উত্তল এবং ভিতরের দিকটি অবতল । বৃক্কের অবতল খাঁজটিকে বৃক্কীয় নাভী বা হাইলাম বলে ।
[d] হাইলাম অংশটি বৃক্কীয় ধমনী, বৃক্কীয় শিরা ও গাবিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকে ।
[ii] অন্তর্গঠন:-
[a] লম্বচ্ছেদ করলে প্রতিটি বৃক্কের দুটি অংশ লক্ষ করা যায় —বাইরের গাঢ় লাল রং -এর অংশটিকে বহিঃস্তর বা কর্টেক্স এবং ভিতরের অপেক্ষাকৃত হালকা লাল অংশটিকে অন্তঃস্তর বা মেডালা বলে ।
[b] বৃক্কের কর্টেক্স অংশটি স্থানে স্থানে মেডালার গভীরে প্রবেশ করে পিরামিডের মতো গঠন রচনা করে, এগুলিকে বৃক্কীয় পিরামিড বলে ।
[c] বৃক্কের কর্টেক্স ও মেডালা প্রায় সম্পূর্ণভাবে একটি গহ্বরকে ঘিরে অবস্থান করে । এই গহ্বরটিকে বৃক্কীয় পেলভিস বলে ।
[d] ফানেলের মতো দেখতে এই অংশ থেকে গবিনী উত্পন্ন হয়েছে । গবিনী পেলভিসে ঢোকার পর কয়েকটি মেজর ক্যালিক্স বা প্রধান বৃতি গঠন করে । প্রতিটি মেজর ক্যালিক্স আবার কিছু মাইনর ক্যালিক্স বা শাখা বৃতিতে বিভক্ত হয় ।
[e] মাইনর ক্যালিক্স যে অংশে বৃক্কীয় পিরামিডের সঙ্গে যুক্ত হয় তাকে বিক্কীয় পীড়কা বলে ।
[f] প্রতিটি বৃক্ক অসংখ্য সুক্ষ্ম চুলের মতো কুণ্ডলীকৃত নালিকা নিয়ে গঠিত, এদের নেফ্রন বলে । এই নেফ্রনই হল বৃক্কের গঠনগত ও কার্যগত একক । এক একটি বৃক্কে প্রায় দশ লক্ষ নেফ্রন থাকে ।
*****
- 4296 views