উদ্ভিদ হরমোন - জিব্বেরেলিন

Submitted by arpita pramanik on Thu, 12/06/2012 - 08:24

জিব্বেরেলিন (Gibberelin)

অক্সিনের মতো জিব্বেরেলিনও উদ্ভিদের একরকম গুরুত্বপূর্ণ হরমোন । এটি একরকমের টারপিনয়েড জাতীয় নাইট্রোজেনবিহীন জৈব অম্ল । জিব্বেরেলিন প্রধানত কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন নিয়ে গঠিত । জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক নাম জিব্বেরেলিক অ্যাসিড [GA বা Gibberelic acid] । এরা বর্ণহীন ও গন্ধহীন জৈব অ্যাসিড । GA1, GA2, GA3, GA4 ....    ইত্যাদি রূপে পাওয়া যায়, তার মধ্যে GA3 কে বেশি কাজে লাগানো হয় । 

সংজ্ঞা:- উদ্ভিদের পরিপক্ক বীজ, অঙ্কুরিত চারা, মুকুল, বীজপত্র, বর্ধিষ্ণু পাতা ইত্যাদি থেকে উত্পন্ন টারপিনয়েড জাতীয় যে জৈব অম্ল সমস্ত বিজের সুপ্ত দশা ভঙ্গ করতে, উদ্ভিদের দীর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটাতে এবং ফুল ফোটাতে সাহায্য করে তাদের জিব্বেরেলিন বলে ।  

উৎসস্থল :-  জিব্বেরেলিন উদ্ভিদের পরিপক্ক বীজে বেশি উত্পন্ন হয় । তাছাড়া মুকুল, অঙ্কুরিত চারাগাছ, বীজের বীজপত্র এবং পাতার বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে এই হরমোন পাওয়া যায় । 

কাজ :- জিব্বেরেলিনের প্রধান শারীরবৃত্তীয় কাজগুলি হল :

(১) জিব্বেরেলিন খর্বাকার উদ্ভিদের দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে ।

(২) জিব্বেরেলিন সমস্ত রকম উদ্ভিদের ফুল ফোটাতে সাহায্য করে ।

(৩) জিব্বেরেলিন মুকুল এবং বীজের সুপ্ত অবস্থা ভঙ্গ করতে সাহায্য করে ।

(৪) পাতা, ফুল, ও ফলের আয়তন বৃদ্ধিতে এবং বীজহীন ফল উত্পাদনে সহায়তা করে ।

(৫) পুষ্পমুকুল ও কাক্ষিক মুকুলের পরিস্ফুটন ঘটায় ।

(৬) আঙ্গুর, আপেল, ন্যাসপাতি প্রভৃতি উদ্ভিদের ফল গঠনে জিব্বেরেলিন কার্যকর ।

(৭) জিব্বেরেলিন বীজ-মধ্যস্থ অ্যামাইলেজ নামক শ্বেতসার বিশ্লিষ্টকারী উৎসেচকের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে ।

(৮) উন্নত উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে ।

অক্সিন, জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন -এর পার্থক্য

 

বৈশিষ্ট্য অক্সিন জিব্বেরেলিন সাইটোকাইনিন
১. প্রকৃতি এটি নাইট্রোজেনঘটিত জৈব যৌগ । এটি নাইট্রোজেনবিহীন জৈব যৌগ । এটি নাইট্রোজেনঘটিত জৈব যৌগ ।
২. উত্পত্তিস্থল  এটি প্রধানত কান্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলায় উত্পন্ন হয় । এটি প্রধানত পরিণত বীজ, অঙ্কুরিত চারা গাছ এবং     বীজপত্রে উত্পন্ন হয়  । এটি প্রধানত শস্য কলায় এবং ফুল ও ফলের নির্যাসে পাওয়া যায় ।
৩. কাজ এটি প্রধানত উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে । এটি প্রধানত উদ্ভিদের ফুল সৃষ্টিতে এবং বীজের সুপ্ত অবস্থা ভঙ্গ করে অঙ্কুরোদগমে      সাহায্য করে  । এটি প্রধানত উদ্ভিদের কোষ বিভাজন ঘটায় ।

৪. বিশেষ ভূমিকা

ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে এই হরমোনের বিশেষ ভূমিকা আছে

ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে এই হরমোনের কোনো ভূমিকা নেই ।

ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে এর কোনো ভূমিকা নেই ।

*****

Related Items

উদ্ভিদ হরমোন বা ফাইটোহরমোন

উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলা উদ্ভিদ-হরমোনের প্রধান উত্সস্থল । এছাড়া বীজপত্র, মুকুলিত পত্র, ভ্রূণ মুকুল, ভ্রূণমুকুলাবরণী অর্থাৎ কোলিওপটাইল, শস্য, ফল ইত্যাদিতে উদ্ভিদ হরমোন থাকে । উদ্ভিদ হরমোনগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা ...

হরমোনের উৎপত্তিস্থল ও কর্মস্থল এবং সাধারণ কাজ

উদ্ভিদদেহে হরমোন ভাজক কলায়, বিশেষ করে কান্ডও মূলের অগ্রভাগে অবস্থিত তরুণ কোষের মধ্যে উত্পত্তি লাভ করে । প্রাণীদেহে হরমোন অনাল গ্রন্থি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কোষে উত্পন্ন হয় । সুতরাং উদ্ভিদদেহে ভাজক কলা এবং প্রাণীদেহে অনাল গ্রন্থি হরমোনের প্রধান উত্সস্থল ...

হরমোনের সাধারণ ধারণা - সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য

জীবদেহের যে জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সারা দেহে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে তাকেই হরমোন বলা হয় । হরমোন সাধারণত বিশেষ ধরনের কোষ, কলা এবং অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় । ওই জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সাধারণত প্রাণীদের ক্ষেত্রে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে এবং উদ্ভিদের ...

জিভ, ত্বক ও নাসিকা

জিহ্বার সাহায্যে আমরা প্রধানত স্বাদ গ্রহন করি । এইজন্য জিহ্বাকে স্বাদেন্দ্রিয় বলে। যে আচ্ছাদন আমাদের দেহের কোমল অংশকে ঢেকে রাখে এবং চাপ, তাপ, স্পর্শ, বেদনা ইত্যাদি অনুভব করতে সাহায্য করে, তাকে ত্বক বা চর্ম বলে । নাসিকা বা নাক হল আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় । নাসা-গহ্বরের ছাদে ...

কর্ণ বা কান (Ear)

যে জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাহায্যে মানুষ বহিরাগত শব্দ শোনে তাকে কর্ণ বা কান বলে । মানুষের কানের প্রধান তিনটি অংশ হল - বহিঃকর্ণ, মধ্য কর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ । মানুষের বহিঃকর্ণটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত; যথা- কর্ণছত্র, কর্ণকুহর, এবং কর্ণপটহ । কর্ণছত্র দুটি মাথার দু'পাশে অবস্থিত এবং অনৈচ্ছিক ...