প্রাচীন ভারতের সাহিত্য

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 04/18/2012 - 10:11

প্রাচীন ভারতের সাহিত্য :

সাহিত্য : প্রাচীন ভারতে সংস্কৃত ভাষায় সাহিত্যের স্বর্ণভান্ডার ছিল । এ ছাড়া পালি, প্রাকৃত, বাংলা, হিন্দি, তামিল প্রভৃতি ভাষাতেও উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচিত হয়েছিল ।

(১) সংস্কৃত সাহিত্য : বৈদিক সাহিত্য, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, স্মৃতি প্রভৃতি কালজয়ী সাহিত্য সংস্কৃত সাহিত্যকে প্রভূতভাবে প্রভাবিত করেছিল । সেই ধারা পরবর্তী কালেও অব্যাহত ছিল । গুপ্তযুগকে সংস্কৃত সাহিত্যের স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করা হয় । সে জন্য কিন্তু সংস্কৃত সাহিত্যের ভান্ডার কোনো দিনও নিঃস্ব হয়ে যায় নি । মৌর্যযুগে যে সমস্ত গ্রন্থ রচিত হয় তার মধ্যে পাণিনির ‘অষ্ট্যাধ্যায়ী’,  কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’, সুবন্ধুর নাটক ‘বাসবদত্তা’ প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । মৌর্যদের পর শুঙ্গ শাসনকালে রচিত হয় অষ্ট্যাধ্যায়ীর ভাষ্য, পতঞ্জলির ‘মহাভাষ্য’ । সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ হিসাবে ‘অষ্ট্যাধ্যায়ী’ ও ‘মহাভাষ্য’ -র গুরুত্ব অপরিসীম । কুষাণ যুগে ‘বুদ্ধচরিত’ গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন অশ্বঘোষ । কবি মাতৃযেত আবির্ভূত হয়েছিলেন কুষাণ যুগেই । সাহিত্যিক, দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক নাগার্জুনও ছিলেন এই কুষাণ যুগের মানুষ । নাগার্জুন রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘শত-সহস্রিকা প্রজ্ঞা-পারমিতা’ ‘মাধ্যমিক সুত্র’ উল্লেখ্যযোগ্য । কুষাণ যুগের আর একজন বিখ্যাত কবি ছিলেন ভাস । ভাসের লেখা একটি অসাধারণ নাটক হল ‘স্বপ্নবাসবদত্তা’ । সংস্কৃত সাহিত্যে গুপ্তযুগের অবদান চিরস্মরনীয় । মহাকবি কালিদাস এই যুগে জন্মগ্রহন করেছেন । মহাকবি কালিদাস ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম’, ‘রঘুবংশম’, ‘মেঘদূতম’, ‘কুমারসম্ভম’, ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেছেন । শূদ্রক, বিশাখ দত্ত, অমর সিংহ ও সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি হরিষেন এই গুপ্তযুগেরই কৃতি সন্তান । ‘মৃচ্ছকটিকম’ গ্রন্থটি রচনা করেছেন শূদ্রক । ‘মুদ্রারাক্ষস’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন বিশাখ দত্ত । ‘অমরকোষ’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন অমর সিংহ । ‘ভট্টিকাব্য’ গ্রন্থটির রচয়িতা ভট্টি ছিলেন সংস্কৃত সাহিত্যের আর একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব । এছাড়া ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থটির রচয়িতা বিষ্ণুশর্মা, ‘কামসূত্র’ গ্রন্থটির রচয়িতা বাৎসায়ন গুপ্তযুগে আবির্ভূত হয়েছিলেন । কান্যকুব্জরাজ হর্ষবর্ধন ‘রত্নাবলী’, ‘প্রিয়দর্শিকা’এবং নাগার্জুন নামে তিনটি নাটক রচনা করেছিলেন বলে জানা যায় । ‘হর্ষচরিত’ ‘কাদম্বরী’ গ্রন্থ দুটির রচয়িতা হলেন হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্ট । ‘শিশুপাল বধ’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন মাঘ এবং ‘উত্তররামচরিত’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন ভবভূতি । দক্ষিণ ভারতের দুজন বিখ্যাত সাহিত্যিক হলেন ভারবি দন্ডিন‘কিরাতার্জুনিয়ম’ গ্রন্থটি রচনা করেন ভারবি । ভারবি পল্লবরাজ সিংহবিষ্ণু -র সভাকবি ছিলেন । ‘দশকুমারচরিত’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন দন্ডিন । দন্ডিন নরসিংহবর্মনের সভাকবি ছিলেন । ‘বিক্রমাঙ্কদেবরচিত’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন বিলহন । বিলহন চালুক্যরাজ ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের সভা অলংকৃত করতেন । দক্ষিণ ভারতের মতো বাংলাতেও সংস্কৃত ভাষার চর্চা হত । সন্ধ্যাকর নন্দী, শ্রীধর জীমূতবাহন প্রমুখ পাল যুগে আবির্ভূত হয়েছিলেন । ‘রামপালচরিত’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন সন্ধ্যাকর নন্দী । ‘ন্যায়কন্দরী’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন শ্রীধর । ‘দায়ভাগ’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন জীমূতবাহন । সেন আমলে বাংলায় জন্মগ্রহন করেন কবি জয়দেব । ‘গীতগোবিন্দম’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন কবি জয়দেব । এ ছাড়া ধোয়ী, শরণ, গোবর্ধন, উমাপতি, ধর এঁরা লক্ষণসেনের রাজসভা অলংকৃত করতেন । এঁদের একসঙ্গে বলা হত পঞ্চরত্ন । সেনরাজা বল্লালসেন ‘দানসাগর’ এবং ‘অদ্ভূতসাগর’ সহ চারটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন । সেন আমলে আরও দুজন উল্লেখযোগ্য পন্ডিত হলেন হলায়ুধ সর্বানন্দ ‘ব্রাহ্মণ-সর্বস্বত’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন হলায়ুধ । ‘টিকা-সর্বস্ব’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন সর্বানন্দ ।

(২) আঞ্চলিক ভাষার সাহিত্য : আঞ্চলিক ভাষায় রচিত সাহিত্যের মধ্যে বাংলা ভাষায় রচিত ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য । ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ প্রাচীন বাংলার গ্রন্থটি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় নেপাল থেকে উদ্ধার করেন । চর্যাপদগুলি যাঁরা রচনা করেছিলেন তাঁদের মধ্যে লুই-পা বা লুইপাদ, গোরক্ষ, কাহ্নপা প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য । দক্ষিণ ভারতে পল্লব যুগে তামিল ভাষায় ‘কুরাল’ ‘নলদিয়ের’ রচিত হয় । পল্লব যুগে ‘শিলপদিগরম’ ‘মণিমেগলাই’ নামে দুটি মহাকাব্য রচিত হয় । চোল যুগের বিখ্যাত কবি কম্বন তামিল সাহিত্যে স্বর্ণযুগের সুত্রপাত করেন । কবি কম্বন রচিত রামায়ন তামিল সাহিত্যের একটি রত্ন । অন্যান্য সাহিত্যিকদের মধ্যে পুগলেন্দি, কুট্টান, জয়েনগোন্দুর প্রভৃতির নাম করা যায় । কবি কবিরত্ন রান্না কন্নড়ি ভাষায় লেখেন ‘অজিতপুরাণ’‘আইহোল প্রশস্তি’ -র রচয়িতা ছিলেন রবিকীর্তি নামে একজন বিখ্যাত কবি । পালি ভাষায় রচিত একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘মিলিন্দপনহো’, জাতক ইত্যাদি । এছাড়া ত্রিপিটকও পালি ভাষায় লেখা ।

*****

Related Items

সুলতানা রাজিয়া (Razia)

ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা রাজিয়া দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন । রাজিয়া ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । ইলতুৎমিসের পুত্ররা অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় ইলতুৎমিস নিজেই কন্যা রিজিয়াকে দিল্লির সুলতান পদে মনোনীত করেন । তাঁর সিংহাসন লাভ ...

ইলতুৎমিস (Iltutmish)

দিল্লি সুলতানির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইলতুৎমিস । তিনি ১২১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । কুতুবউদ্দিন তাঁকে ক্রীতদাস হিসাবে ক্রয় করেন । পরে তাঁর প্রতিভায় আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে বদাউনের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন ও নিজ কন্যার সঙ্গে বিবাহ দেন । ...

কুতুবউদ্দিন আইবক (Qutb-ud-din Aibak)

১১৯১ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ ভারতের অন্যান্য রাজপুত রাজাদের সাহায্য নিয়ে মহম্মদ ঘুরিকে পরাস্ত করেন । পরের বছর অর্থাৎ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথ্বীরাজকে পরাজিত নিহত করে দিল্লী ও আজমীর দখল করেন ...

সুলতানি আমল (Delhi Sultanate)

সুলতানি আমলে পর পর পাঁচটি রাজবংশ দিল্লির সিংহাসনে ক্ষমতাসীন ছিল । সেই পাঁচটি রাজবংশ হল - ইলবেরি তুর্কি বংশ বা দাসবংশ, খলজি বংশ, তুঘলক বংশ, সৈয়দ বংশ, লোদী বংশ। সুলতানি আমলে বলপূর্বক ও হত্যা করে সিংহাসন দখল করা ছিল অতি স্বাভাবিক ঘটনা ...

মহম্মদ ঘুরি (Muhammad Ghori)

আফগানিস্তানের গজনী ও হিরাটের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল ঘোর রাজ্য । সেই সময় উত্তর ভারতের হিন্দু রাজাদের মধ্যে কোনো ঐক্য ছিল না । এই সব হিন্দু রাজাদের মধ্যে আজমীর ও দিল্লির অধিপতি পৃথ্বীরাজ চৌহান ও কনৌজ-রাজ জয়্চাঁদ ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী ...