ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্প

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 12/02/2014 - 23:18

ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্প (Iron and Steel Industry of India) : লৌহ-ইস্পাত শিল্পের উল্লেখযোগ্য কাঁচামাল হল— (i) আকরিক লোহা, (ii) কয়লা, (iii) ম্যাঙ্গানিজ, (iv) চুনাপাথর, (v) ডলোমাইট, (vi) ক্রোমিয়াম, (vii) টাংস্টেন, (viii) নিকেল, (ix) প্রচুর বিদ্যুৎ, (x) অপর্যাপ্ত জল ।

লৌহ-ইস্পাত শিল্পের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থান : কোনও স্থানে বৃহদায়তন লৌহ-ইস্পাত কারখানা স্থাপনের জন্য প্রয়োজন— (i) লৌহ-ইস্পাত শিল্পের প্রধান উপাদান আকরিক লোহা ও কয়লা খনির নৈকট্য,  (ii) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ ম্যাঙ্গানিজ, চুনাপাথর, ডলোমাইট, ক্রোমিয়াম, টাংস্টেন ও নিকেল খনির নৈকট্য ও সহজ লভ্যতা, (iii) অপর্যাপ্ত জল সরবরাহ,  (iv) অত্যাধুনিক কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞান, (v) ভারী কাঁচামাল ও ইস্পাত পরিবহনের উপযোগী ভালো রাস্তাঘাট ও রেল যোগাযোগ,  (vi) সুলভ, দক্ষ ও শৃঙ্খলাপরায়ণ শ্রমিকের যোগান,  (vii) আমদানি ও রপ্তানির সুবিধার জন্য বন্দরের নৈকট্য, (viii) কঠোর শ্রমের উপযোগী জলবায়ু,  (ix) মূলধনের প্রাচুর্য,  (x) দক্ষ পরিচালক,  (xi) রাজনৈতিক পরিবেশের সুস্থিতি এবং  (xii) লৌহ-ইস্পাত শিল্পের চাহিদা ।

প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে অর্থাৎ ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পে বিশেষ উন্নতি হয় নি । এই সময় বেসরকারি মালিকানাধীন জামসেদপুর ও বার্ণপুর ইস্পাত কারখানা দুটির সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন করা হয়েছিল ।

দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে অর্থাৎ ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত ভারতের লৌহ-ইস্পাত শিল্পের প্রকৃত উন্নতি শুরু হয় । এই সময়েই ভারত সরকারের উদ্যোগে সরকারি মালিকানায় (i) পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর, (ii) ওড়িশার রাউরকেল্লা এবং (iii) ছত্রিশগড়ের ভিলাই কারখানা তিনটি স্থাপিত হয় ।

তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে অর্থাৎ ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে এবং সোভিয়েত রাশিয়ার সহযোগিতায় ঝাড়খন্ড রাজ্যের বোকারোতে আরও একটি লৌহ ইস্পাত কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও এই সময়কালের মধ্যে এটির নির্মাণ কার্য শেষ করা সম্ভব হয়নি ।

চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে অর্থাৎ ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত  (i) তামিলনাড়ুর সালেম, (ii) কর্ণাটকের বিজয়নগর এবং (iii) অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে তিনটি নতুন ইস্পাত কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয় । এই সময়ে বোকারো লৌহ-ইস্পাত কারখানায় উৎপাদন শুরু হয় ।

পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে অর্থাৎ ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত দুর্গাপুর, ভদ্রাবতী ও সালেমে সংকর ইস্পাতের উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয় ।

ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে অর্থাৎ ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বোকারোভিলাই ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণের কাজ হাতে নেওয়া হয় । এই সময়কালে ১৯৮২ সালে সালেমের সংকর ইস্পাত ও স্টেনলেস স্টিল কারখানাটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়, এছাড়া এই পরিকল্পনা কালে ওড়িশার দৈতারিতে নতুন একটি ইস্পাত কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও এটি এখনও গড়ে ওঠেনি ।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে অর্থাৎ ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বোকারো, ভিলাইজামসেদপুর কারখানা তিনটির সম্প্রসারণ এবং বিশাখাপত্তনম কারখানাটির প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয় ।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে অর্থাৎ ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সরকারি নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে দেশে লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্র স্থাপনে সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা বাতিল করা হয় এবং বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হয় । এই সময় দুর্গাপুর, রাউরকেল্লা এবং জামসেদপুর কারখানা তিনটির আধুনিকীকরণের কাজ হাতে নেওয়া হয় । এছাড়া এই পরিকল্পনা কালে ১৯৯২ সালে বিশাখাপত্তনম লৌহ-ইস্পাত কারখানাটি উৎপাদন শুরু করে ।

*****

Related Items

দ্বীপপুঞ্জ সমূহ (The Islands)

দ্বীপপুঞ্জ সমূহ (The Islands): ভারতের দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরে বহু আগ্নেয় দ্বীপ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে আরব সাগরে অসংখ্য প্রবাল দ্বীপের অবস্থান পরিলক্ষিত হয় । অবস্থান অনুসারে এই দ্বীপপুঞ্জগুলিকে দু'ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (১) বঙ্গোপসাগরের দ্বীপপুঞ্জ এবং (

উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল (The Coastal Plains)

উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল (The Coastal Plains) : দক্ষিণ ভারতের পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমদিকে আরব সাগরের উপকূল বরাবর গড়ে ওঠা সংকীর্ণ সমভূমি অঞ্চল দুটি উপকূলীয় সমভূমি নামে পরিচিত । এই অঞ্চলকে দু-ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (১) পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি

উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল (The Peninsular Plateau)

(গ) উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল (The Peninsular Plateau or The Deccan Plateau): উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের দক্ষিণ দিকে পশ্চিমে আরাবল্লি পর্বত থেকে শুরু করে পূর্বে রাজমহল পাহাড় এবং উত্তরে গঙ্গা সমভূমি থেকে শুরু করে দক্ষিণে উপকূলীয় সমভূমির মধ্যবর্তী অংশে উপদ্ব

উত্তরের সমভূমি অঞ্চল (The Northern Plains)

উত্তরের সমভূমি অঞ্চল (The Northern Plains) : উত্তরে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চলে সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এবং এদের বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীগুলি পলি সঞ্চয় করে যে বিস্তৃত সমতলভূমি গঠন করেছে তাকে উত্তরের সমভূমি

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (The Northern Mountains)

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (The Northern Mountains) : ভারতের সমগ্র উত্তর অংশ জুড়ে উত্তরে তিব্বত মালভূমি এবং দক্ষিণে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের মাঝে অবস্থান করছে উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল । প্রায় নিরবিচ্ছিন্ন পর্বতশ্রেণি নিয়ে গড়ে ওঠা এই অঞ্চলটি পশ্চিমে কাশ