ভারতের বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চল

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 11/15/2014 - 10:38

ভারতের বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চল : বিশাল ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভুপ্রকৃতির জন্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং স্বাভাবিক উদ্ভিদের তারতম্যের ওপর ভিত্তি করে আবহাওয়াবিদ কোপেন -এর মত অনুসরণ করে ভারতকে আটটি জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে, যথা— (১) শীতল পার্বত্য জলবায়ু অঞ্চল, (২) উষ্ণ মরু অঞ্চল, (৩) ক্রান্তীয় অতি আর্দ্র মৌসুমি অঞ্চল, (৪) উপক্রান্তীয় আর্দ্র মৌসুমি ও শুষ্ক শীতপ্রধান অঞ্চল, (৫) নাতিশীতোষ্ণ স্বল্প গ্রীষ্ম ও শীতল আর্দ্র অঞ্চল, (৬) ক্রান্তীয় সাভানা অঞ্চল, (৭) মরুপ্রায় ক্রান্তীয় অঞ্চল এবং উপক্রান্তীয় স্টেপস অঞ্চল, (৮) ক্রান্তীয় শুষ্ক গ্রীষ্ম ও শীতকালীন বৃষ্টিপাত অঞ্চল ।

(১) শীতল পার্বত্য জলবায়ু অঞ্চল : হিমালয়ের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও জম্মু-কাশ্মীরের পার্বত্য অঞ্চল; হিমাচল প্রদেশের রোটাং পাস এবং লাহুল ও স্পিটি উপত্যকা; উত্তরাঞ্চলের কেদারনাথ, বদ্রী নারায়ণ, গঙ্গোত্রী-গোমুখ অঞ্চল প্রভৃতি শীতল পার্বত্য জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত । সারা বছরই এখানে তীব্র শৈত্য থাকে এবং শীতকালে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে -১° থেকে -৪০° সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায় ।

(২) উষ্ণ মরু অঞ্চল : পশ্চিম রাজস্থানের মরুস্থলী ও থর মরুভূমি এই অঞ্চলের অন্তর্গত । গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলের উষ্ণতা প্রায় ৫০° সে. পর্যন্ত পৌঁছায় । এছাড়া এই অঞ্চলের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১২ সেমি. থেকে ২০ সেমি । এই জন্য এই অঞ্চলকে শুষ্ক অঞ্চল বলা হয় ।

(৩) ক্রান্তীয় অতি আর্দ্র মৌসুমি অঞ্চল : এই জলবায়ু অঞ্চলের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১৮° – ২৭° সেলসিয়াস এবং বার্ষিক গড় বৃষ্টি পাতের পরিমাণ ২৫০ থেকে ৩০০ সেমিরও বেশি । ভারতের পশ্চিম উপকূলবর্তী কেরালা, কর্ণাটক এবং গোয়া রাজ্য এই অঞ্চলের অন্তর্গত । এই অঞ্চলগুলি অত্যধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চল ।

(৪) উপক্রান্তীয় আর্দ্র মৌসুমি ও শুষ্ক শীতপ্রধান অঞ্চল : মৌসুমি বাহুর প্রভাবে এই অঞ্চলে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে অর্থাৎ বর্ষাকালে মাঝারি থেকে ভারী ধরনের বৃষ্টিপাত হয় । এছাড়া এই অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত উষ্ণ ও শুষ্ক এবং শীতকালে শীতল আবহাওয়াযুক্ত হয় । উত্তর ভারতের সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে এই জলবায়ু দেখা যায় ।

(৫) নাতিশীতোষ্ণ স্বল্প গ্রীষ্ম ও শীতল আর্দ্র অঞ্চল : অসমের পূর্বাংশ ও অরুণাচল প্রদেশকে নিয়ে গঠিত এই জলবায়ু অঞ্চলের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অত্যধিক । প্রায় ২৪০ সেমি থেকে ৩০০সেমি । এছাড়া স্বল্প স্থায়ী গ্রীষ্মকাল এবং শীতের কিছু দিন বাদ দিলে সারাবছর ধরে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু এই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ।

(৬) ক্রান্তীয় সাভানা অঞ্চল : দক্ষিণবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ুর কিছু অংশ, গুজরাট প্রভৃতি অঞ্চলে এই ধরনের জলবায়ু দেখা যায় । শুকনো শীতকাল এবং অতি উষ্ণ গ্রীষ্মকাল হল ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্য । এই ধরনের জলবায়ুতে সাভানা তৃণভূমির সৃষ্টি হয়, তাই এই জলবায়ু অঞ্চলের নাম রাখা হয়েছে ক্রান্তীয় সাভানা অঞ্চল ।

(৭) মরুপ্রায় ক্রান্তীয় অঞ্চল এবং উপক্রান্তিয় স্টেপস অঞ্চল : পূর্ব রাজস্থান, দক্ষিণ-পশ্চিম পাঞ্জাব এবং ভারতের পশ্চিম উপকূলবর্তী পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাঝারি থেকে বেশ কম প্রায় ২০ থেকে ১০০ সেমি । জলবায়ু চরমভাবাপন্ন অর্থাৎ শীত ও গ্রীষ্ম দুই খুব বেশি ।

(৮) ক্রান্তীয় শুষ্ক গ্রীষ্মশীতকালীন বৃষ্টিপাত অঞ্চল : ভারতের পূর্ব উপকূলের দক্ষিণ অংশে প্রধানত করমণ্ডল উপকূল অবস্থিত এই জলবায়ু অঞ্চলের গ্রীষ্মকাল শুষ্ক প্রকৃতির এবং সাধারণত শীতকালেই বেশি বৃষ্টিপাত হয় । 

*****

Related Items

পলল ব্যজনী (Alluvial Cone)

পলল ব্যজনী (Alluvial Cone) : পার্বত্য অঞ্চল থেকে সমভূমিতে নেমে আসার সময়ে নদীর মাধ্যগতিতে গতিপথের ঢাল হঠাৎ কমে যাওয়ার কারণে নদীর গতিবেগ হ্রাস পায় । স্রোতের বেগ কমে যাওয়ায় পার্বত্য অঞ্চল থেকে বয়ে নিয়ে আসা নুড়ি, বালি, কাঁকর, কাদামাটি, শিলাচূর্ণ, পলিমাটি

মন্থকূপ (pot Hole)

মন্থকূপ (pot Hole) : উচ্চগতি বা পার্বত্যপ্রবাহে বন্ধুর গতিপথের কারণে নদীর প্রবল স্রোতের সঙ্গে বাহিত প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি প্রভৃতি পাক খেয়ে ঘুরতে ঘুরতে নীচের দিকে অগ্রসর হয় । এর ফলে পরিবাহিত নুড়ি ও প্রস্তরখণ্ডের দ্বারা অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নদীর তলদেশে ছোটো ছো

প্রপাত কূপ (Plunge pool)

প্রপাত কূপ [Plunge pool] : নদীর গতিপথের যে অংশে জলপ্রপাতের জলধারা সজোরে এসে পড়ে সেখানে এই জলধারা সজোরে এসে পড়ার ফলে এবং জলধারাবাহিত শিলাখণ্ডের আঘাতে জলপ্রপাতের পাদদেশে হাঁড়ির মতো গোলাকার গর্তের সৃষ্টি হয়, তাকে প্রপাতকূপ বা প্লাঞ্জপুল

জলপ্রপাত (Waterfalls)

জলপ্রপাত (Waterfalls) : পার্বত্য প্রবাহে নদীর গতিপথে উলম্ব বা আড়াআড়িভাবে কঠিন ও নরম শিলাস্তর অবস্থান করলে নদী কঠিন শিলা অপেক্ষা নরম শিলাস্তরকে অধিক ক্ষয় করে ও কালক্রমে উঁচু হয়ে থাকে এবং গতিপথে খাড়া ঢাল গড়ে তোলে । নদীর গতিপথের ঢাল হঠাৎ খাড়াভাবে নেম

খরস্রোত (Rapids)

খরস্রোত (Rapids) : নদীর উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলির মধ্যে অন্যতম হল খরস্রোত বা র‍্যাপিডস । পার্বত্য প্রবাহে নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলা পরস্পর আড়াআড়িভাবে অবস্থান করলে কঠিন শিলা অপেক্ষা কোমল শিল