ভারতীয় কৃষিতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব : ভারতীয় কৃষিতে মৌসুমি বায়ুর বিরাট প্রভাব রয়েছে । মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে প্রচুর পরিমাণে ধান, গম, পাট, আখ, তুলা বিভিন্ন ধরনের ডাল, নানান রকম তৈলবীজ, চা, কফি তামাক প্রভৃতি উৎপন্ন হয় ।
মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা — খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব : ভারতে মৌসুমি বায়ুর ফলেই প্রধানত বৃষ্টিপাত ঘটে । দেশের মোট বৃষ্টি পাতের প্রায় ৯০ শতাংশ দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘঠিত হয় । কিন্তু এই মৌসুমি বায়ু খুবই অনিশ্চিত । কারণ প্রতি বছর এই মৌসুমি বায়ু সমপরিমাণে জলীয় বাস্প নিয়ে আসে না । আবার এই মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন প্রতি বছর একই সময়ে ঘটে না । এর ফলে কোন বছর কম জলীয় বাস্প আমদানি ও দেরিতে আসার ফলে ভারতে অনাবৃষ্টি বা খরা দেখা দেয় । আবার কোনও বছর অতিরিক্ত পরিমাণ জলীয় বাস্প আমদানি এবং দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহের খাম খেয়ালিপণার জন্য ভারতে প্রায়ই খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায় ।
(ক) ভারতে খরার প্রধান কারণ :
(১) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ভারতে খরার প্রধান কারণ ।
(২) ভারতের কোনও স্থানে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্ষা দেরিতে আসা সেই স্থানের খরার অন্যতম কারণ
(৩) স্বাভাবিক সময়ের আগে মৌসুমি বায়ু প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে খরা সৃষ্টি হয় ।
(৪) কোন স্থান বর্ষাকালের মধ্যেও বেশ কিছুদিন বৃষ্টিহীন অবস্থায় থাকলে খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ।
(৫) বনভুমির অভাবের জন্য সূর্যের প্রচন্ড তাপে গ্রীষ্মকালে প্রচুর পরিমাণে ভৌম জল বাষ্পীভূত হয়ে যায় এবং মাটি ফেটে চৌচির হয়ে খরার সৃষ্টি করে ।
(৬) পরিবেশ দূষণের জন্য বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে মৌসুমি বায়ু ঘনীভূত না হতে পারলে খরার সৃষ্টি হয় ।
(খ) ভারতে বন্যার প্রধান কারণ :-
(১) কোনও স্থানে একটানা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ঘটলে সেই স্থানে বন্যার দেখা দেয় ।
(২) মৌসুমি বৃষ্টিপাত দীর্ঘায়িত হলে অতিবৃষ্টির ফলেও বন্যার সৃষ্টি হয় ।
(৩) নদীর বহন ক্ষমতা কমে এলে বা জলনিকাশী ব্যবস্থা বুজে এলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত না হলেও বন্যার সৃষ্টি হতে পারে । ২০০০ সালে এই কারণে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে বন্যার সৃষ্টি হয় ।
(৪) বর্ষাকালে বাঁধ বা জলাধার থেকে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত জল ছাড়লে বন্যার সৃষ্টি হয় । এটিও পশ্চিমবঙ্গে বন্যা হওয়ায় অন্যতম প্রধান কারণ ।
(৫) কখনও কখনও ভূমিক্ষয়ও বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে দেখা দেয় । ভূমিক্ষয়ের ফলে ক্ষয়ে যাওয়া মাটি নদী গর্ভে জমা হয় এবং নদীর গভীরতা কমিয়ে দেয় । এর ফলে নদীর জল বহন ক্ষমতা কমে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে ।
ভারতে খরা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় :
(১) ভারতের বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলি নির্দিষ্ট ও উপযুক্ত স্থানগুলিতে ছোটো ছোটো বাঁধ ও জলাশয় তৈরি করে, প্রধান নদী ও উপনদীগুলির ওপর বড়ো বড়ো বাঁধ ও জলাশয় তৈরি করে বন্যার জলকে ধরে রেখে তার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ভারতের বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলির অধিবাসীদের রক্ষা করা যায় ।
(২) গ্রীষ্মকালে খরা জনিত পরিস্থিতির সময় বাঁধ ও জলাশয়ে ধরে রাখা জলকে আধুনিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে জলসেচের কাজে লাগিয়ে বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের বহুদূরবর্তী খরা প্রবণ অঞ্চলকে খরার প্রকোপ মুক্ত করা সম্ভব ।
(৩) কখনও কখনও ভুমিক্ষয়ও বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে দেখা দেয় । ভুমিক্ষয়ের ফলে ক্ষয়ে যাওয়া মাটি নদীগর্ভে জমা হয়ে নদীর গভীরতা কমিয়ে দেয়, ফলে নদীগর্ভ আর বর্ষার জল বহন করতে পারে না বলে বর্ষাকালে নদীতে বন্যা দেখা দেয় । নদীগর্ভ বুঁজে গেলে বর্ষাকালে জল নিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয় । নদীগর্ভে নিয়মিতভাবে ড্রেজিং করে তাদের নাব্যতা বাড়িয়ে বন্যার প্রকোপ অনেকটা কমানো যায় ।
(৪) বনভুমির অভাবের জন্য বৃষ্টিপাত কম হলে বৃক্ষরোপণ প্রকল্পের সাহায্যে প্রচুর গাছ লাগিয়ে আংশিক ভাবে খরা নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
*****
- 25371 views