গম (Wheat) : খাদ্যশস্য হিসাবে ভারতে ধানের পরেই গমের স্থান । বর্তমানে পৃথিবীর মোট গম উৎপাদনের প্রায় শতকরা ১২ ভাগ গম ভারতে উৎপন্ন হয় । গম উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে । চিন পৃথিবীতে প্রথম স্থান অধিকার করে ।
গম উৎপাদনের অনুকুল পরিবেশ :
(১) জলবায়ু :
(i) আর্দ্রতা— পরিমাণ মতো আর্দ্রতার ওপর গম বীজের অঙ্কুরোদ্গমের সংখ্যা নির্ভর করে, এই জন্য গম চাষের প্রথম অবস্থায় আর্দ্র জলবায়ুর প্রয়োজন হয় । কারণ যত বেশি সংখ্যক বীজ থেকে অঙ্কুর বের হবে, হেক্টর প্রতি গম উৎপাদনও ততই বেশি হবে ।
(ii) গম চাষের দ্বিতীয় অবস্থায় অর্থাৎ যখন গাছ থেকে শিষ বের হয় তখন উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ুর প্রয়োজন হয় । কারণ এই সময় বৃষ্টি হলে গমের শিষ পচে যেতে পারে বা শিষে পোকা লাগতে পারে ।
(iii) গম কেটে নেওয়ার কিছু দিন আগে অর্থাৎ গম চাষের তৃতীয় অবস্থায়, হাল্কা বৃষ্টিপাত হলে ভালো হয়, কারণ এই বৃষ্টিপাতের ফলে গমের শিষ পরিপুষ্ট হয় ।
(iv) গম উৎপাদনে চতুর্থ পর্যায়ে গম পাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সূর্যের তাপের প্রয়োজন হয় ।
(v) উত্তাপ : গম বীজের অঙ্কুরোদগম এবং গম চাষের বৃদ্ধির সময় ১৫° থেকে ১৬° সেন্টিগ্রেড উত্তাপ এবং গম পাকার সময় ১৮° থেকে ২০° সেন্টিগ্রেড উত্তাপ প্রয়োজন । ভারতে এই উত্তাপ কেবলমাত্র শীতকালেই সম্ভব বলে শীতকালে গম চাষ করা হয় ।
(vi) বৃষ্টিপাত : গম চাষের জন্য মাঝারি অর্থাৎ ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয় । এর বেশি বৃষ্টিপাতে গম চারার ক্ষতি হয় । এই জন্য ভারতে শীতকালে সাধারণত জলসেচের সাহায্যে গম চাষ করা হয় ।
(vii) তুষারপাত : তুষারপাত গম চাষের পক্ষে ক্ষতিকর ।
(২) ভূপ্রকৃতি : গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে তা গম চাষের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হয় বলে অতিরিক্ত জল জমি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ভালো জলনিকাশী ব্যবস্থাসম্পন্ন প্রায় সমতল বা অল্প ঢালু জমি গম চাষের পক্ষে আদর্শ । এতে ট্র্যাক্টর বা পাওয়ার টিলার জাতীয় আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি চালাতেও সুবিধা হয় । পার্বত্য অঞ্চলে ধানের মতো ধাপ কেটে গম চাষ খুব অল্পই দেখতে পাওয়া যায় ।
(৩) মৃত্তিকা : উর্বর ভারী দোআঁশ মাটি বা হাল্কা কাদা মাটি গম চাষের আদর্শ । পলিমাটি ও কৃষ্ণ মৃত্তিকাতেও গম চাষ ভালো হয়, এছাড়া উপযুক্ত সেচ ব্যবস্থা থাকলে উর্বর বেলেমাটি বা খড়িমাটিতেও গম চাষ ভালো হয় ।
(৪) সার প্রয়োগ : গম চাষে জমির উর্বরতা দ্রুত কমে যায় বলে গম চাষের জমিতে বিশেষত নাইট্রোজেন, ফসফেট এবং পটাশ জাতীয় রাসায়নিক সার দেওয়া প্রয়োজন ।
(৫) সুলভ শ্রমিক : গম চাষে প্রচুর দক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিকের প্রয়োজন হয় । যান্ত্রিক উপায়ে গম চাষে অনেক কম শ্রমিক লাগে ।
(৬) মূলধন বিনিয়োগ ও আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার : বর্তমানে একই জমিতে একাধিকবার ও বেশি পরিমাণ গম উৎপাদন করার জন্য বেশি মূলধন বিনিয়োগ করে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় ।
ভারতের গম উৎপাদক অঞ্চল :
(১) উত্তরপ্রদেশ : বর্তমানে ভারতে গম উৎপাদনে উত্তরপ্রদেশ প্রথম স্থান অধিকার করে । ভারতের মোট উৎপন্ন গমের প্রায় ৩৭ শতাংশ এই রাজ্যে উৎপাদিত হয় । উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর, মিরাট, মোরাদাবাদ, মজফফরনগর, দেরাদুন, শাহাজানপুর, এটাওয়া, বুদাউন, নৈনিতাল এবং গোরখপুর জেলায় অধিকাংশ গম উৎপন্ন হয় ।
(২) পাঞ্জাব : পাঞ্জাব রাজ্য গম উৎপাদনে ভারতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে । ভারতে মোট উৎপন্ন গমের প্রায় ২৪ শতাংশ গম এই রাজ্যে উৎপাদিত হয় । প্রতি হেক্টরে ২৭১৫ কেজি গম উৎপাদন করে হেক্টর প্রতি গম উৎপাদনে পাঞ্জাব ভারতে শীর্ষস্থান অধিকার করে । এই রাজ্যের লুধিয়ানা, পাতিয়ালা, ফিরোজপুর প্রভৃতি জেলায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গম উৎপন্ন হয় ।
(৩) হরিয়ানা : হরিয়ানা রাজ্য গম উৎপাদনে তৃতীয় স্থান অধিকার করে । হরিয়ানার হিসার, আম্বালা প্রভৃতি জেলায় প্রচুর পরিমাণে গম উৎপন্ন হয় ।
*****
- 11221 views