এশিয়া মহাদেশের জলবায়ুর বৈচিত্র্যের কারণ

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 12/16/2014 - 17:56

এশিয়া মহাদেশের জলবায়ুর বৈচিত্র্যের কারণ : এশিয়া মহাদেশের মতো জলবায়ুর এত বৈচিত্র্য পৃথিবীর আর কোন মহাদেশে নেই । এশিয়া মহাদেশের জলবায়ুর এই বৈচিত্র্যের মুলে যেসব কারণ রয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— (১) অক্ষাংশের প্রভাব, (২) ভু-প্রকৃতির প্রভাব, (৩) বায়ুপ্রবাহের প্রভাব, (৪) সমুদ্র থেকে দূরত্বের প্রভাব, (৫) সমুদ্র স্রোতের প্রভাব, (৬) সমুদ্র থেকে উচ্চতার প্রভাব ।

(১) অক্ষাংশের প্রভাব : দক্ষিণে ১০° দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে উত্তরে ৭৮° অক্ষাংশ পর্যন্ত এশিয়া মহাদেশের বিস্তৃতি । অক্ষাংশের এত বিরাট ব্যবধানের জন্য সূর্য রশ্মির পতন কোণের পার্থক্যের কারণে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে উষ্ণতার যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ করা যায় । এশিয়ার দক্ষিণ প্রান্ত গ্রীষ্মমণ্ডলে, মধ্য অংশ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে এবং উত্তরাংশ হিমমণ্ডলে অবস্থিত ।

(২) ভুপ্রকৃতির প্রভাব : এশিয়ার মধ্যভাগ পার্বত্য ও মালভূমিময় । মধ্যভাগের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণীগুলির বেশির ভাগই পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত হওয়ায় এদের উত্তর ও দক্ষিণ অংশে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের বিরাট পার্থক্যের ফলে বিভিন্ন রকমের জলবায়ু  দেখা যায় ।

(৩) বায়ু প্রবাহের প্রভাব : বায়ুচাপের ঋতুগত পরিবর্তনের ফলে এশিয়া মহাদেশে গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে সম্পূর্ণ বিপরীত দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় । শীতকালে উত্তরের স্থলভাগ থেকে বয়ে আসা শীতল ও শুষ্ক বায়ু মহাদেশের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় এশিয়া মহাদেশের অভ্যন্তরভাগ যথেষ্ট শীতল ও বৃষ্টিহীন থাকে । আবার গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ দিকের সমুদ্র থেকে ধেয়ে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাত হয় ।

(৪) সমুদ্র থেকে দূরত্বের প্রভাব : বিশাল আয়তনের জন্য এশিয়ার মধ্যভাগের অঞ্চলগুলি সমুদ্র থেকে বহুদূরে অবস্থিত হওয়ায়, সমুদ্রের কোনও রকম প্রভাব এসব অঞ্চলে পড়ে না, তাই সেখানকার জলবায়ুতে শীত ও গ্রীষ্মের চরমভাব দেখা যায় । অন্যদিকে, সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলের জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র থাকে এবং এখানকার শীতকালও মৃদুভাবাপন্ন হয় ।

(৫) সমুদ্র স্রোতের প্রভাব : এশিয়ার পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব উপকূলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের প্রভাবে জাপানের পূর্ব উপকূলভাগ অক্ষাংশগত অবস্থানের কারণে যতটা ঠান্ডা হওয়া উচিত, তা না হয়ে উষ্ণ থাকে । আবার, উত্তর মেরুর দিক থেকে আসা হিমশীতল বেরিং স্রোতের প্রভাবে এশিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলভাগ যথেষ্ট শীতল থাকে ।

(৬) সমুদ্র থেকে উচ্চতার প্রভাব : সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশি উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ায় জন্য এশিয়ার মধ্যভাগের উঁচু পার্বত্য অঞ্চল প্রায় সারাবছর বরফাচ্ছন্ন থাকে । পর্বতবেষ্টিত উঁচু মালভূমিগুলির জলবায়ু শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির হয় । আর, সমুদ্রপৃষ্ঠের সমতলে অথবা অল্প উঁচু স্থানগুলির উষ্ণতা বেশি থাকে ।

*****

Related Items

দ্বীপপুঞ্জ সমূহ (The Islands)

দ্বীপপুঞ্জ সমূহ (The Islands): ভারতের দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরে বহু আগ্নেয় দ্বীপ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে আরব সাগরে অসংখ্য প্রবাল দ্বীপের অবস্থান পরিলক্ষিত হয় । অবস্থান অনুসারে এই দ্বীপপুঞ্জগুলিকে দু'ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (১) বঙ্গোপসাগরের দ্বীপপুঞ্জ এবং (

উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল (The Coastal Plains)

উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল (The Coastal Plains) : দক্ষিণ ভারতের পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমদিকে আরব সাগরের উপকূল বরাবর গড়ে ওঠা সংকীর্ণ সমভূমি অঞ্চল দুটি উপকূলীয় সমভূমি নামে পরিচিত । এই অঞ্চলকে দু-ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (১) পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি

উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল (The Peninsular Plateau)

(গ) উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল (The Peninsular Plateau or The Deccan Plateau): উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের দক্ষিণ দিকে পশ্চিমে আরাবল্লি পর্বত থেকে শুরু করে পূর্বে রাজমহল পাহাড় এবং উত্তরে গঙ্গা সমভূমি থেকে শুরু করে দক্ষিণে উপকূলীয় সমভূমির মধ্যবর্তী অংশে উপদ্ব

উত্তরের সমভূমি অঞ্চল (The Northern Plains)

উত্তরের সমভূমি অঞ্চল (The Northern Plains) : উত্তরে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চলে সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এবং এদের বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীগুলি পলি সঞ্চয় করে যে বিস্তৃত সমতলভূমি গঠন করেছে তাকে উত্তরের সমভূমি

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (The Northern Mountains)

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (The Northern Mountains) : ভারতের সমগ্র উত্তর অংশ জুড়ে উত্তরে তিব্বত মালভূমি এবং দক্ষিণে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের মাঝে অবস্থান করছে উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল । প্রায় নিরবিচ্ছিন্ন পর্বতশ্রেণি নিয়ে গড়ে ওঠা এই অঞ্চলটি পশ্চিমে কাশ