সমাজ সচেতনতায় বিজ্ঞানের ভূমিকা

Submitted by Nandarani Pramanik on Tue, 11/20/2018 - 14:57

ভূমিকা:-

 "বিজ্ঞান চায় সবার মাঝে প্রাণের কথা বলতে,

         অন্ধ আবেগ সরিয়ে দিয়ে আলোর পথে চলতে ।"

আবেগ দিয়ে উচ্ছ্বাস দিয়ে জগতের সব কাজ সমাধা হয় না । বিশেষ জ্ঞান বা সঠিক জ্ঞানের মধ্য দিয়েই সমস্ত সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব । এই বিশেষ জ্ঞানই হল বিজ্ঞান । একটা আলোকশিখা যেমন সমস্ত অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে দিয়ে আলোকিত করে তেমনি বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয় মানুষের জীবন । বিজ্ঞান চেতনা মানুষকে করেছে যুক্তিবাদী, জীবনকে করেছে বাস্তবমুখী, মুমূর্ষু রোগীকে জীবন দান করেছে বিজ্ঞান ।

মানুষের নানা রকম অসুখের মূলে বিজ্ঞান চেতনার অভাব:- মানুষের অজ্ঞতা, কুসংস্কারের ফলে আগে কিছু কিছু রোগ যেমন কলেরা, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর প্রভৃতি মহামারীর রূপ ধারণ করত । এইসব রোগের প্রকোপে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত । এগুলোকে ভগবানের রুদ্র রোষ বলে বিবেচনা করে ওলাবিবির পূজা করত মানুষ । বসন্ত রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য শীতলার পূজা, সাপের কামড় থেকে বাঁচার জন্য মনসার পূজা দেয়া হতো । দেবতার রোষ কমলে এই সমস্ত ব্যাধির হাত থেকে রেহাই মিলবে —এই বিশ্বাস ছিল মানুষের মনে । কিন্তু এগুলো যে ভ্রান্ত ধারণা, তা প্রমাণিত হল উন্নত বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্যে । এক সময় যে রোগগুলো মহামারী হিসেবে পরিচিত ছিল সেগুলি এখন আর ভয়ংকর মারণ ব্যাধি নয়, সুচিকিৎসায় তা সহজেই নিরাময় হয় । "রোগের প্রতিকার ওষুধে হয়, ওঝার নয় " ।

ভয় ও কুসংস্কার দূর করে বিজ্ঞান চেতনা :- বিজ্ঞান চেতনা শুধুমাত্র রোগ সারায় তা নয় নানা রকম মানসিক রোগও নিরাময় হয়, অনেকের ভূত-প্রেত, মন্ত্র-তন্ত্র, ডাইনিতে অগাধ বিশ্বাস আছে, যে বিশ্বাস সমাজের ক্ষতি বই লাভ হয় না । আবার কেউ কেউ কালো বিড়াল, এক শালিক, হাঁচি, টিকটিকি অশুভ বলে মনে করে । অনেকে মনে করে অশরীরী আত্মা ধরলে মানুষের শারীরিক অবনতি ঘটে বা ভাগ্য খারাপ হয় । নানারকম কুসংস্কারে সমাজ জীবন জর্জরিত । এইসবের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র বিজ্ঞান চেতনা । বিজ্ঞান চেতনা হল যুক্তি তর্কের মাধ্যমে সত্যের প্রতিষ্ঠা ।

বিভিন্ন প্রকার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও বিজ্ঞান চেতনা :-  আজকের সভ্যতা বিজ্ঞান নির্ভর সভ্যতা । বিভিন্ন ক্ষেত্রে কি চিকিৎসা শাস্ত্রে, কি কৃষিবিজ্ঞানে, কি মহাকাশ গবেষণায়, কি কৃষিপণ্য সংরক্ষণে নিত্য নতুন যন্ত্র, ওষুধ আবিস্কার করে মানব সভ্যতাকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিচ্ছে - তা কেউ অস্বীকার করতে পারে না । মানবদেহের দুরারোগ্য জটিল ব্যাধিকে নিমেষে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের সাহায্যে নির্ণয় করে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে রোগকে নিরাময় করা হচ্ছে সহজেই । মহাকাশে নতুন নতুন উপগ্রহ পাঠানো হচ্ছে । যার সাহায্যে মহাকাশের রহস্য মানুষের হাতের মুঠোয় । নিত্যনতুন যানবাহন আবিষ্কারের ফলে মানবজীবনে এসেছে গতি । দূর আর দূর নেই, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মানুষ অনায়াসে চলে যাচ্ছে । সমুদ্রের গভীরে কি আছে, কেমন করে উত্তাল সমুদ্রকে বশে আনা যায়, তার মন্ত্রও মানুষ শিখে ফেলেছে বিজ্ঞানের আবিষ্কারে । টেলিফোন, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, কম্পিউটার আধুনিক সভ্যতার এক একটি অস্ত্র যা দিয়ে সব অজানাকে জানতে, সব অদেখাকে দেখতে এবং বুঝতে পারছে এবং জটিল সমস্যার সমাধানও সহজে করা যাচ্ছে । বিজ্ঞান আমাদের সমস্ত অন্ধ বিশ্বাসকে ভেঙ্গে দিয়েছে এবং শিক্ষার উৎকর্ষ সাধন করে মনের প্রসারতা বাড়িয়েছে ।

উপসংহার :- বিজ্ঞান চেতনা আমাদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের চাবিকাঠি যা দিয়ে সভ্যতার সব দিক উন্মোচন করতে পারি । আগুনের আবিষ্কার একদিন যেমন মানুষকে শিখিয়েছিল অন্ধকার দূর করতে, হিংস্র পশুর হাত থেকে বাঁচতে, তেমনি বিজ্ঞান চেতনা আমাদের সমস্ত অন্ধকার, কুসংস্কার দূর করতে ও অজ্ঞতার অবসান ঘটাতে সাহায্য করেছে । বিজ্ঞানে বলিয়ান মানুষ আজ আর অসহায় নয়, এখন সে স্বমহিমায় উজ্জ্বল ।

***

Comments

Related Items

অরণ্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

Ofমানুষের জন্ম থেকেই অরণ্য তার পরম আত্মীয়, অকৃত্রিম বন্ধু । অরণ্যের ডাকেই ধরিত্রীর প্রথম ঘুম ভেঙ্গে ছিল । দিকে দিকে প্রচারিত হয়েছিল জীবনের মহিমা । ভারতীয় সভ্যতা অরণ্য কেন্দ্রিক সভ্যতা, অরণ্যের কোলেই মানুষ গড়ে তুলেছিল তার প্রথম বাসস্থান । অরণ্য দিয়েছে বেঁচে থাকার রসদ, প্রাণের নিঃশ্বাস, আশ্বাস ।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান / বিজ্ঞান ও মানব সভ্যতা

ভূমিকা:- বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ । বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার মানুষের জীবনধারাকে আমূল পাল্টে দিয়েছে । মানুষের ব্যবহারিক জীবনে এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন । প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষ আর মন্দিরে গিয়ে মাথা ঠোকে না

প্রতিবন্ধীদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য

সূচনা :- মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যাদের মধ্যে রয়েছে তাদেরকে আমরা প্রতিবন্ধী বলি । প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ মানুষ । যে মানুষের মধ্যে অস্বাভাবিকতা কিছু বেশি থাকে অর্থাৎ চলাফেরায় বা কথাবার্তায় যে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয় সেই প্রতিবন্ধী

জাতীয় শিশু দিবস

সূচনা :- প্রতি বছরই ১৪ই নভেম্বর দেশের সর্বত্র শিশু দিবস পালিত হয় । বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে নানা রকম দিবস পালিত হয় —যেমন ১২ই জানুয়ারী যুব দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, শ্রমদিবস, স্বাধীনতা দিবস...

জীবনে সময়ানুবর্তিতার মূল্য

ভূমিকা:- ‘সময় চলিয়া যায় / নদীর স্রোতের প্রায়’ -- সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না অথচ মানুষের জীবন সীমিত পরিসরের গন্ডিতে বাঁধা । নানা স্বপ্ন, আশা-প্রত্যাশার নানা কল্পনা