বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

Submitted by Nandarani Pramanik on Fri, 11/30/2018 - 14:24

ভূমিকা :- প্রাচীনকালে গৃহবন্দী মানুষ আত্মরক্ষার জন্য এবং প্রকৃতির রোষ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছে । নিজের অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি এবং বিচারবোধ থেকে সে ক্রমশ প্রকৃতির স্বরূপ উপলব্ধি করতে পেরেছে । জানতে পেরেছে প্রত্যেকটি ঘটনার পিছনে কিছু কারণ থাকে । এই কারণগুলো বোঝার মতো মেধা ও মানসিকতা সবার থাকে না । যাদের থাকে না তাদের মধ্যে অজ্ঞতার অন্ধকার বা অন্ধ বিশ্বাসের জন্ম হয় । সেখান থেকেই শুরু হয় বিজ্ঞান চেতনা ও কুসংস্কারের সংঘাত ।

আধুনিকতা ও বিজ্ঞান চেতনা :- দীর্ঘদিন ধরে অনলস অনুশীলনের ফলে মানুষ জগৎ ও জীবনের অনেক রহস্যের সমাধান সূত্র জানতে পেরেছে । বহু বিবর্তনের মধ্য দিয়েই নতুন অবস্থার সৃষ্টি হয় । বিজ্ঞান সত্য নির্ভর জ্ঞান । বিজ্ঞান আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মত । তার কাছে যা চাওয়া যায়, তাই পাওয়া যায় । প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বিদ্যুৎ । যে বিদ্যুতের সাহায্যে উৎপাদনে, শিল্পে, চিকিৎসায় সর্বত্র ঘটিয়েছে বিপ্লব । বিজ্ঞান নির্ভর প্রযুক্তি বিদ্যার সাহায্যে নিত্যনতুন যানবাহন তৈরি হয়েছে যেমন মোটরগাড়ি, ট্রেন, এরোপ্লেন যা দুরকে করেছে নিকট । আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বিজ্ঞান নির্ভর । কিন্তু এখনও অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার সমাজ থেকে একেবারে দূর হয়নি । অদৃষ্টবাদী, অলৌকিকে বিশ্বাসী মানুষের কাছে বিজ্ঞান অপেক্ষা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার বেশি প্রাধান্য পেয়েছে ।

কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস কি :- কুসংস্কার হল মানুষের যুক্তি-বিচারহীন অন্ধবিশ্বাস, মিথ্যা ধারণা ইংরেজিতে যাকে বলা হয় superstition । আজকের যুগে বাস করেও মানুষের তন্ত্রমন্ত্র, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ, মাদুলি, ভুত-প্রেত, ডাইনি, জিন ইত্যাদিতে অগাধ বিশ্বাস । এখনও গ্রামেগঞ্জে অনেক নারী-পুরুষকে ডাইন অপরাধে পুড়ে মরতে হচ্ছে । অনেক শিক্ষিত মানুষের মনে টিকটিকির পতন, কালো বেড়ালের রাস্তা পার হওয়া, এক শালিক দেখা মানে খারাপ কিছু ঘটবে এরূপ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে । বহু মানুষ রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঝাড়ফুঁক, মাদুলি ধারণ করে । ব্যবসায় উন্নতির জন্য বা সহজে ভাগ্য ফেরানোর জন্য জ্যোতিষীদের কাছে গিয়ে রত্ন ধারণ করে । এইসব অন্ধবিশ্বাস বা কুসংস্কার একমাত্র দূর করতে পারে প্রকৃত শিক্ষা ।

কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতা :- ধর্মান্ধতার সহায়ক শক্তি হল কুসংস্কার । বিজ্ঞানী কোপারনিকাস ও গ্যালিলিও প্রমাণ করে ছিলেন যে, পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে কিন্তু খ্রিষ্টধর্মের শাস্ত্রের সঙ্গে এই সত্যের মিল ছিল না বলে খ্রিস্টান যাজকেরা এই দুই বিজ্ঞানীর উপর অকথ্য নির্যাতন চালান । ঊনবিংশ শতাব্দীতে যে সকল ভারতীয় সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইংল্যান্ড, আমেরিকায় যেতেন তাদের ধর্মচ্যুত ও জাতিচ্যুত হতে হয়েছে । এখনও অনেক জায়গায় এই ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কার সমানভাবে রয়েছে ।

পথের দিশা:-  বিজ্ঞান ও কুসংস্কার দুটোই মানব মনের ফসল । যুক্তিবাদী প্রকৃত সত্যান্বেষী সংস্কারমুক্ত মানুষ সঠিক পথের দিশা দিতে পারে । ছাত্র সমাজেরও এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা আছে । চির নতুনের পূজারী ছাত্রছাত্রীরা বৈজ্ঞানিক সত্যের মধ্য দিয়ে সমাজের সর্বস্তরে প্রচারে নেমে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস থেকে মানুষকে সত্যের আলোয় আনতে পারে । বিভিন্ন সেমিনার করে, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ছোটখাটো পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনটি সত্য আর কোনটি সত্য নয় তা বোঝাতে হবে । তাহলে কাজটি সহজ হবে । কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাস মানুষকে নিম্নগামী করে, কখনো ঊর্ধ্বগামী করে না —সেটা আমাদের বুঝতে হবে তাহলেই পৃথিবীর মঙ্গল হবে ।

***

Comments

Related Items

মহামানব যীশুখ্রীষ্ট

সবলদের অত্যাচারে দুর্বলদের জীবন যখন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, যখন সাধারণ মানুষের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় তখনই কোনো এক মহামানবের আবির্ভাব ঘটে ।

সমাজ সচেতনতায় বিজ্ঞানের ভূমিকা

"বিজ্ঞান চায় সবার মাঝে প্রাণের কথা বলতে, অন্ধ আবেগ সরিয়ে দিয়ে আলোর পথে চলতে ।"

প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও তার প্রতিকার

"মন্বন্তরে মরিনি আমরা, মারি নিয়ে ঘর করি"— বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, মহামারী মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে । অথচ বিজ্ঞানের বলে বলিয়ান আমরা সদর্পে বলে চলেছি যে, প্রকৃতি আমাদের হাতের মুঠোয়, প্রকৃতি আমাদের কাছে বশীভূত । কিন্তু এ দর্প বা ধারণা সত্য নয় । মাঝে মধ্যেই প্রকৃতির রুদ্ররোষের কাছে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে । প্রাকৃতিক বিপর্যয় ।

দেশ ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা

"হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি ।" মানুষ চির যাযাবর । মানুষের রক্তে রয়েছে ভ্রমণের নেশা । অজানাকে জানার অদেখাকে দেখার কৌতুহল মানুষের চিরন্তন ।

অরণ্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

Ofমানুষের জন্ম থেকেই অরণ্য তার পরম আত্মীয়, অকৃত্রিম বন্ধু । অরণ্যের ডাকেই ধরিত্রীর প্রথম ঘুম ভেঙ্গে ছিল । দিকে দিকে প্রচারিত হয়েছিল জীবনের মহিমা । ভারতীয় সভ্যতা অরণ্য কেন্দ্রিক সভ্যতা, অরণ্যের কোলেই মানুষ গড়ে তুলেছিল তার প্রথম বাসস্থান । অরণ্য দিয়েছে বেঁচে থাকার রসদ, প্রাণের নিঃশ্বাস, আশ্বাস ।