প্রশ্ন : 'দাম' গল্পে সুকুমার কোন উপলব্ধিতে পৌঁছেছে তা আলোচনা কর ।
উঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' একটি অসাধারণ ছোট গল্প । 'দাম' ছোটগল্পের কথক সুকুমার অঙ্কে বরাবরই দুর্বল ছিলেন । সুকুমারের কাছে স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই ছিলেন মূর্তিমান এক বিভীষিকা ।
ম্যাট্রিকুলেশনের পর অঙ্ক ও মাস্টারমশাই দুজনের হাত থেকে রেহাই পেয়েও সুকুমারের অবচেতন মনে সেই বিভীষিকা থেকেই গিয়েছিল । পরবর্তীকালে বাংলার অধ্যাপক লেখক সুকুমার একটি পত্রিকায় ছেলেবেলার সেই স্মৃতি নিয়ে মাস্টারমশাইকে নিয়ে একটি গল্প লিখেছিলেন । তাঁর মনে হয়েছিল অহেতুক তাড়না করে কাউকে শিক্ষা দেওয়া যায় না । এই বাল্যস্মৃতি লিখে সুকুমার পত্রিকার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নগদ দশ টাকা পেয়েছিলেন । এই টাকা পেয়ে তাঁর মনে হয়েছিল সারাজীবনে মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে এইটুকুই তাঁর নগদ লাভ । কিন্তু পরে বাংলাদেশের একপ্রান্তে অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ সেই অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাঁর সব ভুল ভেঙে যায় । তখন সুকুমারের মনে হয় যে, সে যেন স্নেহ-মমতা ক্ষমার এক মহাসমুদ্রের ধারে এসে দাঁড়িয়েছে ।
যে স্নেহের দাম সংসারের সব ঐশ্বর্যের চেয়েও মূল্যবান, তাকে সে দশ টাকায় বিক্রি করেছিল । এজন্য সুকুমারের নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয় । মাস্টারমশাইয়ের কড়া শাসনের আড়ালে যে আসলে পিতার স্নেহই লুকানো ছিল, তা তিনি বুঝতে পারেন নি । আর এই উপলব্ধি হওয়া মাত্রই সুকুমার আত্মগ্লানিতে ভুগেছেন এবং বলেছেন "এ অপরাধ আমি বই কী করে, এ লজ্জা আমি কোথায় রাখব ।"
সমগ্র গল্পটি পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, সুকুমার সৎ, স্পষ্টবক্তা এবং স্বচ্ছ ধারনার মানুষ । নিজের ভুল স্বীকার করা ও নিজেকে শুধরে নেওয়ার সততা তাঁর মধ্যে আছে এবং সর্বোপরি তিনি মাস্টারমশাইয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাও পোষণ করেছেন ।
*****