পদার্থের জাড্য ধর্ম (Inertia of Matter)

Submitted by arpita pramanik on Fri, 09/04/2020 - 14:14

পদার্থের জাড্য ধর্ম (Inertia of Matter) :- নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে দেখা যায় কোন জড় বস্তু যদি স্থির অবস্থানে থাকে তবে তার ধর্ম হল চিরকাল স্থির অবস্থায় থাকা। আবার কোন বস্তু যদি গতিশীল হয় তাহলে তার ধর্ম হল চিরকাল সমবেগে একই সরলরেখায় চলা।  কোন বস্তুর নিজে থেকে তার স্তিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে না ।

 

জাড্যের সংজ্ঞা (Definition of Inertia) :- জড়বস্তু যে ধর্মের জন্য নিজের স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তনে বাধা দেয় বা জড়বস্তু যে ধর্মের জন্য নিজে যে অবস্থায় থাকে সেই অবস্থায় থাকতে চায় সেই ধর্মকে পদার্থের জাড্য ধর্ম বা জড়তা (Inertia) বলে । এজন্য নিউটনের প্রথম গতিসূত্রকে জাড্যের সূত্র ( Law of Inertia) বলে। বস্তুর ভর যত বেশি হয় ওর জাড্যও তত বেড়ে যায় । বস্তুর ভর দিয়ে বস্তুর জাড্য মাপা হয় । 

পদার্থের জাড্য ধর্ম দুই রকমের হতে পারে --

  1. স্থিতি জাড্য (Inertia of rest)
  2. গতিজাড্য (Inertia of Motion)

 

স্থিতি জাড্য (Inertia of rest) : বাস্তবে দেখা যায় কোন জড় বস্তুকে কোথাও রেখে দিলে বস্তুটি সেই জায়গায় স্থির অবস্থায় পড়ে থাকে। বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করলে বস্তুটির চিরকাল স্থির অবস্থায় থেকে যায় । নিজে থেকে গতিশীল হয় না । পদার্থের এই ধর্মকে স্থিতি জাড্য বলে ।

কোন স্থির জড় বস্তুর চিরকাল স্থির অবস্থায় থাকার প্রবণতাকে পদার্থের স্থিতি জাড্য (Inertia of rest) বলে ।

 

স্থিতি জাড্যের উদাহরণ :

inertia at restএকটি পোস্টকার্ড গ্লাসের উপর রেখে ওর উপর একটি এক টাকার কয়েন রাখা হলো ।  বাইরে থেকে আঙ্গুল দিয়ে টোকা মেরে কার্ডটিকে আঘাত করলে দেখা যাবে কার্ডটি সরে গেল কিন্তু এক টাকার কয়েনটি গ্লাসের মধ্যে পড়ে গেল ।  কারণ এক টাকার কয়েনটি স্থিতি জাড্য ধর্মের জন্য আগের জায়গাতেই স্থির থাকতে চায় কিন্তু ওর নিচে কোন অবলম্বন না পেয়ে মুদ্রাটি গ্লাসের মধ্যে পড়ে যায় ।

 

Inera at restস্থির অবস্থান থেকে হঠাৎ চলতে শুরু করলে গাড়ির আরোহী পিছন দিকে হেলে যায় কারণ গাড়িটি যখন স্থির ছিল তখন আরোহী স্থির ছিল । গাড়িটি চলতে শুরু করলে গাড়ির সংলগ্ন আরোহীর দুটি পা প্রথমে গতিশীল হয় এবং গাড়ির সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু আরোহীর দেহের উপরের অংশ স্থিতি জাড্য ধর্মের জন্য আগের জায়গাতেই স্থির থাকতে চায় ।  ফলে কোন অবলম্বন না পেয়ে আরোহী পিছন দিকে হেলে যায় বা ধাক্কা খায় ।

 

গতিজাড্য (Inertia of Motion):

বাস্তবে দেখা যায় একটি মার্বেলকে মাটিতে গড়িয়ে দিলে মার্বেলটি কিছুদূর গিয়ে থেমে যায় । পদার্থের জাড্য ধর্ম অনুযায়ী কোন বস্তু যদি গতিশীল হয় তাহলে তার ধর্ম হল চিরকাল সমবেগে একই সরলরেখায় চলা । গতিশীল মার্বেলটি কিছুদূর গিয়ে  থেমে যায় কারণ এখানে মার্বেলের উপর বাইরে থেকে পৃথিবীর অভিকর্ষজ বল, মাটির সঙ্গে ঘর্ষণজনিত এবং বাতাসের প্রতিরোধ বল মার্বেলের গতির বিপরীত দিকে কাজ করে । ফলে মার্বেলের গতি বাধা পায়  । এই জন্য মার্বেল কিছুদূর গিয়ে থেমে যায় । মসৃন মেঝের ঘর্ষণজনিত বল অনেক কম হওয়ায় মার্বেল মেঝেতে করিয়ে দিলে মার্বেল টি আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে গতিশীল অবস্থায় থাকে এবং বেশ অনেক দূর গড়িয়ে গিয়ে থেমে যায় । এই সকল বাহ্যিক বল  মার্বেলের উপর ক্রিয়া না করলে মার্বেলটি চিরকাল সমবেগে সরলরেখায় চলতে দেখা যেত । গতিশীল বস্তুর সরলরেখা ধরে চলার ধর্মকে পদার্থের গতিজাড্য (Inertia of Motion) বলে ।

গতিশীল বস্তুর চিরকাল সমবেগে একই সরলরেখায় চলার প্রবণতাকে পদার্থের গতিজাড্য বলে

গতি জাড্যের উদাহরণ :

কোন চলন্ত গাড়ি বা বাস হঠাৎ থেমে গেলে গাড়ির আরোহী সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে বা হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায় । কারণ গাড়িটি গতিশীল থাকার সময় আরোহীর সমস্ত দেহ গতিশীল ছিল । গাড়িটি হঠাৎ থেমে যাওয়ায় গাড়ি সংলণ্ড আরোহী দুটি পা হঠাৎ স্থির হয়ে যায় কিন্তু দেহের উপরের অংশে গতিজাড্য ধর্মের জন্য তখন গতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে চায় এবং সামনের দিকে এগিয়ে যায় ফলে আরও সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে বা হুমরি খেয়ে পড়ে যায় ।

কোন চলন্ত বাস থেকে নামতে হলে পিছন দিকে হেলে নামতে হয় তা না হলে সামনের দিকে হুমরি খেয়ে পড়ার ভয় থাকে এর কারণ হলো চলন্ত গাড়িতে যাত্রীর সমস্ত দেহ গতিশীল থাকে । গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর পা দুটি মাটির সংস্পর্শে স্থির অবস্থায় আসে কিন্তু দেহের উপরের অংশ গতিজাড্য ধর্মের জন্য তখনও গতিশীল থাকে ফলে সামনের দিকে এগিয়ে যায় । তাই যাত্রী পিছন দিকে হেলে নামলে দেহের উপরের অংশ কিছুদূর এগিয়ে আসে  তাই  হুমড়ি খেয়ে পড়ার ভয় থাকে না ।

লাফ  দেওয়ার সময় কোন খেলোয়ার কিছু দূর থেকে দৌড়ে এসে লাফ দেয় এর কারণ হলো দৌড়ে আসার ফলে খেলোয়াড় যে গতি লাভ করে গতিজাড্য ওই গতি বজায় রাখতে চেষ্টা করে ফলে বেশি দূর লাফ দেওয়া সহজ হয় ।

*****

Comments

Related Items

কার্য ও কার্যের পরিমাপ

বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের প্রয়োগ বিন্দু স্মরণ এর গুণফল দ্বারা কার্যের পরিমাপ করা হয় । কোন বস্তুর উপর একক বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর স্মরণ বলের অভিমুখে এক একক হয় তাহলে যে কার্য করা হয় তাকে একক কার্য বলে । কার্যের একক, কার্যের ব্যবহারিক একক ...

দ্রবণের প্রকারভেদ

ভৌত অবস্থা অনুযায়ী দ্রবণকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়- কঠিনে কঠিনের দ্রবণ, কঠিনে তরলের দ্রবণ, তরলে কঠিনের দ্রবণ, তরলে তরলের দ্রবণ, তরলে গ্যাসের দ্রবণ, গ্যাসে গ্যাসের দ্রবন ...

দ্রবণের বৈশিষ্ট্য

দ্রবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল -.দ্রবণে কোন নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় না অর্থাৎ দ্রবণে দ্রাবক (Solvent) ও দ্রাবের (Solute) নিজস্ব ধর্ম বজায় থাকে। দ্রবণের প্রতিটি অংশের উপাদান গঠন এবং ধর্ম একই অর্থাৎ দ্রবণ সবসময় সমসত্ব হবে। দ্রবণের মধ্যে দ্রাবের (Solute) কনাগুলিকে খালি চোখে বা খুব শক্তিশালী অণুবীক্ষণ ..

প্রশমন ক্রিয়া (Neutralisation)

অ্যাসিড ও ক্ষারের মধ্যে যে বিক্রিয়ার ফলে অ্যাসিড ও ক্ষারের ধর্ম সম্পূর্ণভাবে লোপ পেয়ে লবণ ও জল উৎপন্ন হয় সেই বিক্রিয়াকে প্রশমন বিক্রিয়া বলে ।যেমন তুল্যাঙ্ক পরিমাণ ক্ষার NaOH এর সঙ্গে তুল্যাঙ্ক পরিমাণ অ্যাসিড HCl এর বিক্রিয়ায় NaCl লবণ ও জল উৎপন্ন হয় ...

লবণ ও লবণের ধর্ম

অ্যাসিডের প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু ধাতু বা অপর কোন ধাতুধর্মী মূলক দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিস্থাপিত হয়ে যে যৌগ উৎপন্ন হয় তাকে লবণ বলে। যেমন- সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, জিংক সালফেট, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি।