পরিমাপ ও একক

Submitted by arpita pramanik on Wed, 12/13/2017 - 02:00

পরিমাপ ও একক (Measurements and Units)

ভৌতরাশি (Physical Quantity) : দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন বস্তুর গঠন বা বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা লাভের জন্য আমরা কিছু পরিমাপ করে থাকি । যাদের পরিমাপ করতে পারা যায় তাদের ভৌতরাশি বা রাশি বলা হয় । যেমন – ঘরের দৈর্ঘ্য স্কেল বা ফিতে দিয়ে আমরা পরিমাপ করতে পারি, বাড়ি থেকে স্কুলে আসতে যে সময় লাগে তা ঘড়ি দিয়ে আমরা পরিমাপ করতে পারি বা দেহের উষ্ণতা আমরা থার্মোমিটার দিয়ে পরিমাপ করতে পারি । এখানে দৈর্ঘ্য, সময় এবং উষ্ণতা এরা প্রত্যেকেই ভৌতরাশি ।

ভৌতরাশির সংজ্ঞা : যে সমস্ত প্রাকৃতিক বিষয়কে বা ঘটনা সম্পর্কিত যা কিছুকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিমাপ করা যায় তাদেরকেই ভৌতরাশি বা প্রাকৃতিক রাশি বলা হয় ।

যেমন :- এক টুকরো কাঠের গঠন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা করতে হলে আমরা তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ভর, আয়তন, ঘনত্ব ইত্যাদির পরিমাপ করে থাকি । এখানে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ভর, আয়তন, ঘনত্ব এরা প্রত্যেকেই হল ভৌতরাশি ।

আমরা অনেক সময় বলি এই কাঠের টুকরোটির পরিমাপ 2 মিটার বা 3 মিটার । এখানে পরিমাপের উল্লেখ থাকলেও কাঠ নিজে কিন্তু ভৌতরাশি নয় । কারণ কাঠের পরিমাপ বলতে আমরা কাঠের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ভৌতরাশি যেমন– দৈর্ঘ্য, ভর ইত্যাদির পরিমাপ বুঝি । শুধু কাঠের পরিমাপ বললে নির্দিষ্ট কোনো কিছুর পরিমাপ বোঝায় না । অনুরূপ ভাবে দুধের পরিমাপ বললে তার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ভৌতরাশি যেমন আয়তন, ভর, ইত্যাদির পরিমাপ বোঝায় । তাই দুধের পরিমাপ হলেও দুধ ভৌতরাশি নয় ।

ভৌতরাশিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয় – (i) স্কেলার রাশি এবং (ii) ভেক্টর রাশি ।

স্কেলার রাশি :- যে সকল ভৌতরাশির কেবল মাত্র মান আছে কিন্তু অভিমুখ নেই তাদের স্কেলার রাশি বলে । যেমন -দৈর্ঘ্য, ভর, আয়তন, ঘনত্ব, সময়, প্রবাহমাত্রা, উষ্ণতা ইত্যাদিকে স্কেলার রাশি বলা হয় ।

ভেক্টর রাশি :- যে সকল ভৌতরাশির মান এবং অভিমুখ দুইই বর্তমান তাদের ভেক্টর রাশি বলে ।  যেমন - সরণ, বেগ, ত্বরণ, ভরবেগ, বল ইত্যাদিকে ভেক্টর রাশি বলা হয় ।

 

এককের ধারণা (Concept of Units) : দৈনন্দিন জীবনে এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক কাজে বিভিন্ন ভৌতরাশি পরিমাপ করতে হয় । কোনো ভৌতরাশিকে পরিমাপ করার প্রয়োজন হলে রাশিটির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণকে প্রমাণ ধরে নিয়ে ঐ প্রমাণ পরিমাণটি রাশিটির মধ্যে কতবার আছে দেখে নিয়ে রাশিটির পরিমাপ প্রকাশ করলে তা আমাদের সকলের কাছে একই মানে আসে । ওই প্রমাণ পরিমাণকেই আমরা একক বলি । বিভিন্ন ভৌতরাশির সঠিক পরিমাপ প্রকাশ করতে আমাদের এককের সাহায্য নিতে হয় । উপযুক্ত একক ছাড়া অধিকাংশ ভৌতরাশির পরিমাপ সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা জন্মায় না ।

সংজ্ঞা : কোনো ভৌতরাশি পরিমাপ করার ক্ষেত্রে, ওই ভৌত রাশির একটি নির্দিষ্ট এবং সুবিধাজনক মানকে প্রমাণ ধরে, তুলনামূলকভাবে ওই ভৌতরাশির পরিমাপ করা হয় । ওই নির্দিষ্ট মানকে পরিমাপের একক বলা হয় ।   

যেমন ধরা যাক কোনো ঘরের দৈর্ঘ্যের পরিমাপ করতে হবে । এখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দৈর্ঘ্যকে ( মিটার বা ফুট ) প্রমাণ ধরে ঐ প্রমাণ দৈর্ঘ্য ঘরের দৈর্ঘ্যে কতবার আছে তা দেখে নিয়ে ঘরের দৈর্ঘ্যকে প্রকাশ করা হয় । এখানে ঐ প্রমাণ দৈর্ঘ্যই একক । এককের পরিমাণ সর্বজন স্বীকৃত হওয়া দরকার । যেমন ‘মিটার’ দৈর্ঘ্য সকলের কাছেই সমান ।

 

এককের প্রয়োজনীয়তা (Utillity of Units) :  কোনো ভৌতরাশির একক থাকলে এবং তার পরিমাপ প্রকাশের সময় একক উল্লেখ না করলে রাশিটির পরিমাপ সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা জন্মায় না ।

(i) যদি বলি ঘরটির দৈর্ঘ্য 10 – এই উক্তি থেকে আমরা ঘরের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা করতে পারি না । কিন্তু যদি বলা হয় ঘরটির দৈর্ঘ্য 10 মিটার তাহলে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি ঘরটি কতটুকু লম্বা । এখানে ভৌতরাশি হল দৈর্ঘ্য । এর পরিমাপ প্রকাশে এখানে মিটার একক ব্যবহার করা হয়েছে । ঘরের দৈর্ঘ্য ঐ এককের 10 গুণ ।

(ii) আবার যদি বলি ‘একটি কাঠের টুকরোর ভর 5’ – এ থেকে টুকরোর ভর সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা জন্মায় না । কিন্তু যদি বলা হয় কাঠের টুকরোটির ভর 5 কি.গ্রা. তবেই আমরা সহজে ভর সম্বন্ধে ধারণা করতে পারি । এখানে ভর ভৌতরাশি এবং এর পরিমাপ প্রকাশে ব্যবহৃত একক কি.গ্রা. ।

(iii) অনুরূপভাবে যদি বলি 'এই কাজ করতে 20 সময় লেগেছে' - এ থেকেও সময়ের সঠিক ধারণা জন্মায় না । কিন্তু ওই সময়কে 20 মিনিট বা সেকেন্ড বলা হলে তাহলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি কাজটি করতে ঠিক কত সময় লেগেছে । এখানে সময় হল ভৌতরাশি এবং এর পরিমাপ প্রকাশের একক হল মিনিট বা সেকেন্ড ।

উপরের এই আলোচনা থেকে বোঝা গেল যে, কোনো ভৌতরাশির পরিমাপে দুটি অংশ থাকে । প্রথমটি হল ভৌতরাশিটির পরিমাপের মান অর্থাৎ, এককের তুলনায় পরিমাপটি কতগুণ এবং দ্বিতীয় অংশটি হল রাশিটির একক । যেমন উপরের উদাহরণে ঘরের দৈর্ঘ্যের পরিমাপ 10 মিটার এখানে 10 সংখ্যাটি হল দৈর্ঘ্যের পরিমাপের মান যা মিটারের 10 গুণ এবং মিটার হল একক ।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন রাশির একই একক থাকা সম্ভব । যেমন – দুরত্ব ও সরণ, দ্রুতি ও বেগ ইত্যাদি । দুরত্বের নির্দিষ্ট অভিমুখ নেই অর্থাৎ, তা স্কেলার রাশি, কিন্তু সরণের অভিমুখ আছে অর্থাৎ, তা ভেক্টর রাশি । অনুরূপে দ্রুতির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অভিমুখ না থাকলেও বেগের ক্ষেত্রে তা বর্তমান ।

*****

Comments

Related Items

কার্য ও কার্যের পরিমাপ

বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের প্রয়োগ বিন্দু স্মরণ এর গুণফল দ্বারা কার্যের পরিমাপ করা হয় । কোন বস্তুর উপর একক বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর স্মরণ বলের অভিমুখে এক একক হয় তাহলে যে কার্য করা হয় তাকে একক কার্য বলে । কার্যের একক, কার্যের ব্যবহারিক একক ...

দ্রবণের প্রকারভেদ

ভৌত অবস্থা অনুযায়ী দ্রবণকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়- কঠিনে কঠিনের দ্রবণ, কঠিনে তরলের দ্রবণ, তরলে কঠিনের দ্রবণ, তরলে তরলের দ্রবণ, তরলে গ্যাসের দ্রবণ, গ্যাসে গ্যাসের দ্রবন ...

দ্রবণের বৈশিষ্ট্য

দ্রবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল -.দ্রবণে কোন নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় না অর্থাৎ দ্রবণে দ্রাবক (Solvent) ও দ্রাবের (Solute) নিজস্ব ধর্ম বজায় থাকে। দ্রবণের প্রতিটি অংশের উপাদান গঠন এবং ধর্ম একই অর্থাৎ দ্রবণ সবসময় সমসত্ব হবে। দ্রবণের মধ্যে দ্রাবের (Solute) কনাগুলিকে খালি চোখে বা খুব শক্তিশালী অণুবীক্ষণ ..

প্রশমন ক্রিয়া (Neutralisation)

অ্যাসিড ও ক্ষারের মধ্যে যে বিক্রিয়ার ফলে অ্যাসিড ও ক্ষারের ধর্ম সম্পূর্ণভাবে লোপ পেয়ে লবণ ও জল উৎপন্ন হয় সেই বিক্রিয়াকে প্রশমন বিক্রিয়া বলে ।যেমন তুল্যাঙ্ক পরিমাণ ক্ষার NaOH এর সঙ্গে তুল্যাঙ্ক পরিমাণ অ্যাসিড HCl এর বিক্রিয়ায় NaCl লবণ ও জল উৎপন্ন হয় ...

লবণ ও লবণের ধর্ম

অ্যাসিডের প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু ধাতু বা অপর কোন ধাতুধর্মী মূলক দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিস্থাপিত হয়ে যে যৌগ উৎপন্ন হয় তাকে লবণ বলে। যেমন- সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, জিংক সালফেট, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি।