বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও । বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন ?

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 01/29/2022 - 18:25

প্রশ্ন : বিদ্যাসাগরের নেতৃত্বে বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও । বিদ্যাসাগর কতটা সাফল্য অর্জন করেছিলেন ?

উঃ রাজা রামমোহন রায়ের উদ্যোগ ও আন্দোলনের ফলে ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা ডিসেম্বর সতীদাহ প্রথা আইনত নিষিদ্ধ হলেও বিধবাদের ভবিষ্যৎ কী এ সম্পর্কে তেমন কোন উদ্যোগ তাঁর পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি । এ বিষয়ে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করেন ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ।

(i) বিধবা বিবাহের পক্ষে জনমনে চেতনার প্রসারে বিদ্যাসাগর ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে 'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকায় প্রথম বিধবা বিবাহের পক্ষে প্রবন্ধ লেখেন, পরের বছর ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে "বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব" নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন । পরাশর সংহিতা থেকে উদ্ধৃতি তুলে বিদ্যাসাগর বলেন—  বিধবা বিবাহ সম্পূর্ণভাবে শাস্ত্রসম্মত ।

(ii) বিদ্যাসাগর বিধবার পুনর্বিবাহ নিয়ে আন্দোলন শুরু করলে তাঁর বিরোধিতায় নেমে পড়েন শোভাবাজার রাজবাড়ির রাধাকান্ত দেব ও তাঁর ধর্মসভা । বিদ্যাসাগরের বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে এসময় কমপক্ষে তাঁরা ৩০টি পুস্তিকা প্রকাশ করেন । ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এই বিরোধ নিয়ে ছড়া লিখলেন—

       "বাঁধিয়াছে দলাদলি লাগিয়াছে গোল

            বিধবার বিয়ে হবে বাজিয়াছে ঢোল ।"

(iii) সমালোচনার ও বিদ্রুপের জবাব দিতে বিদ্যাসাগরও পিছপা হলেন না । ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে প্রকাশ করলেন 'বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব' নামে দ্বিতীয় পুস্তিকা । শুধু তাই নয় বিধবা বিবাহকে আইন সিদ্ধ করার জন্য ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ৯৮৭ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত এক আবেদন পত্র ভারতীয় আইন সভায় পেশ করেন ।

(iv) রাধাকান্তদেবও চুপচাপ বসে রইলেন না, তিনি বিদ্যাসাগরের বিরোধিতা করে বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে ৩৬,৭৬৩ জনের স্বাক্ষরিত এক দরখাস্ত সরকারের কাছে পাঠালেন । শান্তিপুরের তাঁতিরা এ সময় বিদ্যাসাগরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কাপড়ে লিখলেন—

           "সুখে থাকুক বিদ্যাসাগর চিরজীবী হয়ে,

               সদরে করেছে রিপোর্ট বিধবাদের হবে বিয়ে ।"

(v) রাধাকান্তদেব ও রক্ষণশীলদের শত বিরোধিতা সত্ত্বেও বড়লাট ক্যানিং ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জুলাই ১৫ নং রেগুলেশন জারি করে বিধবা বিবাহকে আইন সিদ্ধ করেন ।

সাফল্য : বিধবা বিবাহ সংক্রান্ত আন্দোলন এবং এ বিষয়ে সরকারের আইন পাশ বিদ্যাসাগরের এক বড় সাফল্য । তবে কেবল আইন পাশ করে নয়, বিধবা বিবাহকে বাস্তবে কার্যকরী করতেও তিনি উদ্যোগী হন ।

(i) রক্ষণশীলদের শত বিরোধিতা সত্ত্বেও বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে প্রথম বিধবা বিবাহ সংঘটিত হয় সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের সঙ্গে বিধবা পাত্রী কালীমতি দেবীর । এছাড়াও বিদ্যাসাগর নিজ উদ্যোগে ৬০টি বিধবা বিবাহ দেন, এমনকি নিজ পুত্র নারায়ণ চন্দ্রকেও ভবসুন্দরী নামে এক বিধবার সঙ্গে বিবাহ দেন । বিধবাদের বিবাহের জন্য বিদ্যাসাগর ১৮৭২ সালের ১৫ই জুন 'হিন্দু ফ্যামিলি অ্যানুইটি ফান্ড' তৈরি করেন ।

(ii) বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলনে প্রভাবিত হয়ে দক্ষিণ ভারতের সমাজ সংস্কারক বীরশালিঙ্গম পানতুলু বিধবা বিবাহকে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে 'বিধবা বিবাহ সমিতি' গড়ে তোলেন । এই কাজের জন্য তাঁকে 'দক্ষিণ ভারতের বিদ্যাসাগর' বলা হয় ।

(iii) বিধবা বিবাহের ব্যাপক সাফল্য আসত এর সামাজিক গ্রহণ যোগ্যতা ও প্রসারের মাধ্যমে, কিন্তু রক্ষণশীলদের বিরোধিতায় বিধবা বিবাহের তেমন কোন প্রসার ঘটেনি ।

*****

Comments

Related Items

'বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা' -কে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন ?

প্রশ্ন : 'বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা' -কে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন ?

হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল ?

প্রশ্ন : হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উনিশ শতকে নারীশিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ?

প্রশ্ন : উনিশ শতকে নারীশিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ?

'নীলদর্পণ' নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায় ?

প্রশ্ন : 'নীলদর্পণ' নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায় ?

বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা কর ।

প্রশ্ন : বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা কর ।