ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ

Submitted by arpita pramanik on Wed, 12/26/2012 - 13:12

ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ (Bacteriophage)

ব্যাকটিরিওফাজের সংজ্ঞা:-  যেসব ভাইরাস ব্যাকটিরিয়াকে আক্রমণ এবং ধ্বংস করে, তাদের ব্যাকটিরিওফাজ [Bacteriophage] বা ফাজ-ভাইরাস [Phase Virus] বলে । ফাজ [phase] কথার অর্থ ভক্ষক [eater] ।

ব্যাকটিরিওফাজের উদাহরণ :- 1917 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী দ্য হেরেলী [d'Herelle] ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী (ভক্ষণকারী) ভাইরাসদের ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ [Bacteriophage] বা ফাজ [phase] নামে অভিহিত করেন । এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাকটিরিওফাজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভালো করে জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে 'T' শ্রেণির [T-series] অন্তর্গত ব্যাকটিরিওফাজই প্রধান । এই শ্রেণির ব্যাকটিরিওফাজদের 1—7 সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে । দেখা গিয়েছে যে, T শ্রেণির সমস্ত ভাইরাস এসিরিকিয়া কোলাই [E. coli] ব্যাকটিরিয়াকে আক্রমণ করে । T শ্রেণির সমস্ত [1—7] ব্যাকটিরিওফাজ এক-তন্ত্রী DNA ও প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত ।  T3 এবং T7 ছাড়া সমস্ত ফাজ ষড়ভূজ আকারের মস্তক এবং দীর্ঘ পুচ্ছবিশিষ্ট এবং দেখতে অনেকটা ব্যাঙের লার্ভার মতো হয় । T3 এবং T7 ফাজের পুচ্ছ খুবই ছোটো । T3 এবং T7 ছাড়া অন্যান্য ফাজের পুচ্ছটি দৃঢ় ও সংকোচনশীল আবরণ বিশিষ্ট অথবা নমনীয় ও সংকোচনশীল আবরণবিহীন হতে পারে । এসিরিকিয়া কোলাই ব্যাকটিরিয়াকে আক্রমণকারী T-ফাজ তাদের শেষপ্রান্তে অবস্থিত কাঁটাওয়ালা [Spike] পাদফলক থেকে উদ্ভুত পুচ্ছতন্তুর সাহায্যে পোষকের (ব্যাকটিরিয়ার) দেহে অবস্থান করে এবং কাঁটার সাহায্যে নিজেকে পোষকের দেহে শক্ত করে আটকে থাকে । নীলাভ সবুজ শৈবাল আক্রমণকারী ভাইরাসদের সায়ানোফাজ বলা হয়, এরা DNA ভাইরাস । এদের দেহে একটি বহু-পার্শ্ববিশিষ্ট মস্তক এবং একটি দীর্ঘ ও প্যাঁচানো পুচ্ছ থাকে ।

 

ব্যাকটিরিওফাজের গুরুত্ব :- ব্যাকটিরিওফাজ [T2] কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় প্রভৃতি রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দেহে পরজীবী হিসেবে বসবাস করার মাধ্যমে এবং ওই সব ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াদের ধ্বংস করার মাধ্যমে ওই সমস্ত রোগ আক্রমণের হাত থেকে পরোক্ষভাবে আমাদের রক্ষা করে —তাই ব্যাকটিরিওফাজকে উপকারী ভাইরাস বলা হয় ।

*****

Related Items

ছত্রাক (Fungi)

ক্লোরোফিলবিহীন পরভোজী পুষ্টিসম্পন্ন ও ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদদের ছত্রাক বলা হয় । ছত্রাকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম । মানবজীবনে ছত্রাকের উপকারিতা ও অপকারিতা । পেনিসিলিয়াম, ঈস্ট প্রভৃতি উপকারী ছত্রাক । পেনিসিলিয়াম এক রকমের বহুকোশী মৃতজীবী ...

জীবাণু বা মাইক্রোবস (Microbes)

যে সমস্ত অতি ক্ষুদ্র এবং এককোশী বা বহুকোশী জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কেবলমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়, তাদেরই সাধারণভাবে জীবাণু বলে । অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবদের এককথায় জীবাণু বা অণুজীব বা মাইক্রোবস বলা হয় ।

রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাসের রোগ সংক্রমণ প্রক্রিয়া

ভাইরাস বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে, যেমন - ইনফ্লুয়েঞ্জা, AIDS, পোলিও, জল বসন্ত, মাম্পস, হাম, এনকেফালাইটিস, জলাতঙ্ক, পা ও মুখের ঘা, জন্ডিস, ডেঙ্গু জ্বর প্রভৃতি । ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রধানত মানুষের শ্বসনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে রোগীর হাঁচি, কাশি ও নির্গত মিউকাসের মাধ্যমে ...

ভাইরাসে জড়ের ও প্রাণের লক্ষণ

ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে না । ভাইরাস কোনো বহিঃস্থ উদ্দীপকে সাড়া দেয় না । ভাইরাসের চলন ক্ষমতা নেই । ভাইরাসের দেহে কোনোরকম বিপাক ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না । পোষকের দেহ-কোশে ভাইরাস বংশবিস্তারে সক্ষম । ভাইরাসের দেহে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিডের ...

ভাইরাস ও ভাইরাসের বৈশিষ্ঠ্য

ভাইরাস কথার শব্দতত্ত্বগত অর্থ বিষ। 1796 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার সর্বপ্রথম ভাইরাস আক্রান্ত বসন্ত রোগের কথা উল্লেখ করেন । 1936 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের ব্যাডেন এবং পিরী পরীক্ষা করে দেখান যে, ভাইরাসে নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন আছে এবং ভাইরাসগুলো নিউক্লিও ...