প্রশ্ন :- বায়ুমণ্ডল কী ? গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের শ্রেণিবিন্যাস কর ।
বায়ুমণ্ডল: পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দশ হাজার কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত যে অদৃশ্য বায়বীয় পদার্থের আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে রয়েছে, সেই গ্যাসীয় পদার্থের আবরণ কে বায়ুমণ্ডল বলে । সৌরজগতে পৃথিবী হল একমাত্র গ্রহ, যা অদৃশ্য বায়ুর আবরণ দ্বারা বেষ্টিত । বায়ুমণ্ডলকে চোখে দেখা যায় না, শুধু এর অস্তিত্ব আমরা অনুভব করতে পারি । গাছের পাতা যখন নড়ে, যখন ঝড় হয়, তখন বায়ুকে অনুভব করা যায় । বর্ণ বা গন্ধ না থাকলেও বায়ুর ওজন, আয়তন ও প্রবাহ আছে । পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে এই বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে আবর্তিত হয় ।
(i) বিভিন্ন ধরনের গ্যাস, যেমন: নাইট্রোজেন (৭৮.১%), অক্সিজেন (২০.৯%) এবং ওজোন, কার্বন ডাই-অক্সাইড (০.০০৩%) প্রভৃতি বিভিন্ন গ্যসের মিশ্রণ, (ii) জলীয় বাষ্প এবং (iii) নানা রকম সূক্ষ্ম জৈব ও অজৈব কণিকা , যেমন -ধুলো, ধোঁয়া, বালি প্রভৃতি নিয়ে বায়ুমণ্ডল গঠিত ।
আবহবিদ হিডোর ও অলিভার -এর মতে বায়ুমণ্ডলের উর্ধ্বসীমা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০,০০০ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত ধরা হয়ে থাকে । আবহবিজ্ঞানী স্ট্রলার -এর মতে বায়ুমণ্ডলের ৯৭% ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩০ কিমি. উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে । এছাড়া ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তর পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ুকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে ।
গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের শ্রেণিবিন্যাস : গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে দুই ভগে ভাগ করা যায়, যথা— (১) হোমোস্ফিয়ার এবং (২) হেটেরোস্ফিয়ার ।
(১) হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) :- ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের রাসয়নিক গঠন, বিশেষত বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই রকম থাকে । এই জন্য বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে সমমণ্ডল বা হোমোস্ফিয়ার বলা হয় । হোমোস্ফিয়ার প্রধানত বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ, যেমন— নাইট্রোজেন (৭৮.১%), অক্সিজেন (২০.৯%), কার্বন ডাই-অক্সাইড, আর্গন, নিওন, হিলিয়াম, ক্রিপটন, জেনন, হাইড্রোজেন, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজন প্রভৃতি গ্যাসের মিশ্রণ দ্বারা গঠিত । এছাড়া জলীয় বাষ্প, ধুলিকণা এবং জৈব ও অজৈব কণিকা যেমন— অতি ক্ষুদ্র খনিজ, লবণ, সমুদ্রতীরের বালুকণা, কয়লার গুঁড়ো বা ধোঁয়া প্রভৃতি দিয়ে গঠিত । এই স্তরটি আবার (i) ট্রপোস্ফিয়ার, (ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, (iii) মেসোস্ফিয়ার ও (iv) নিম্ন থার্মোস্ফিয়ার —এই চার ভাগে বিভক্ত ।
(২) হেটেরোস্ফিয়ার : বায়ূমণ্ডলের হোমোস্ফিয়ার স্তরের ওপরের অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত এবং বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো একই রকম থাকে না বলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে ৮০ কিলোমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে হেটেরোস্ফিয়ার বলা হয় ।
স্তরবিন্যাস: হেটেরোস্ফিয়ারের বায়ুমণ্ডল মোটামুটী চারটি স্তরে বিভক্ত, যথাঃ (i) আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (৮০-২০০ কিমি), (ii) পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (২০০-১,১০০ কিমি), (iii) হিলিয়াম স্তর (১,১০০-৩,৫০০ কিমি) এবং (iv) হাইড্রোজেন স্তর (৩,৫০০-১০,০০০ কিমি) ।
*****