উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল (The Coastal Plains) : দক্ষিণ ভারতের পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমদিকে আরব সাগরের উপকূল বরাবর গড়ে ওঠা সংকীর্ণ সমভূমি অঞ্চল দুটি উপকূলীয় সমভূমি নামে পরিচিত । এই অঞ্চলকে দু-ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (১) পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি ও (২) পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ।
(১) পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি (The Eastern Coastal Plains) : ভারতের পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগরের তীর বরাবর বিস্তৃত পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০০ কিমি. এবং প্রস্থ গড়ে ১০০ কিমি. । পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলকে দু-ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন— (i) উত্তর সরকার উপকূল ও (ii) করমণ্ডল উপকূল ।
(i) উত্তর সরকার উপকূল (The Northern Circars): উত্তরে সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা থেকে দক্ষিণে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ অঞ্চল পর্যন্ত উত্তর সরকার উপকূল বিস্তৃত । এই অঞ্চলটি ওড়িশা রাজ্যে ওড়িশা উপকূলীয় সমভূমি এবং অন্ধ্রপ্রদেশে অন্ধ্র উপকূলীয় সমভূমি নামে পরিচিত । পূর্ব উপকূলীয় সমভূমিতে অনেকগুলি হ্রদ আছে এর মধ্যে ওড়িশা উপকূলের চিল্কা ও কোলেরু এবং অন্ধ্র উপকূলের পুলিকট উল্লেখযোগ্য হ্রদ ।
(ii) করমণ্ডল উপকূল (Coromondal Coast) : উত্তরে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারীকার মধ্যে অবস্থিত এই উপকূলীয় সমভূমিটি করমণ্ডল উপকূল নামে পরিচিত । এর দক্ষিণে রয়েছে কুমারিকা অন্তরীপ ।
(২) পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি (The Western Coastal Plains) : ভারতের পশ্চিমে আরব সাগরের সমান্তরালে বিস্তৃত সংকীর্ণ ও বন্ধুর উপকূলীয় সমভুমিকে পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি বলা হয় । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬০০ কিমি. এবং প্রস্থ ১০ কিমি থেকে ৮০ কিমি. । এই উপকূলীয় সমভূমিকে চার ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (i) গুজরাট উপকূলীয় সমভূমি, (ii) কঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি, (iii) কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি, (iv) মালাবার উপকূলীয় সমভূমি ।
(i) গুজরাট উপকূলীয় সমভূমি (The Gujarat Plains) : এই অঞ্চলটি উত্তরে গুজরাট রাজ্যের কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের উপকূল থেকে দক্ষিণে মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমা পর্যন্ত গুজরাট উপকূলীয় সমভূমি বিস্তৃত । এই অঞ্চলের উত্তরে কচ্ছ উপদ্বীপের লবণাক্ত জলাভূমি কচ্ছের রণ নামে পরিচিত । এই অংশে গিরনার ও গির নামে দুটি রেঞ্জ আছে । গিরনার পাহাড়ের গোরক্ষনাথ কাথিয়াবাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ।
(ii) কঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি (The Konkan Coast) : মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমা থেকে গোয়া উপকূল পর্যন্ত কঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি বিস্তৃত । এই অঞ্চলটি প্রায় ৫০০ কিমি. দীর্ঘ ।
(iii) কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি (The karnataka Coast) : উত্তরে গোয়া থেকে দক্ষিণে কর্ণাটকের দক্ষিণ সীমা পর্যন্ত কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি বিস্তৃত । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২৫ কিমি. । ম্যাঙ্গালোরের কাছে নেত্রবতী নদীর মোহনায় এই উপকূলের একমাত্র বদ্বীপ দেখতে পাওয়া যায় ।
(iv) মালাবার উপকূলীয় সমভূমি (The Malabar Coast) : কেরালা রাজ্যের উপকূলে গড়ে ওঠা সমভূমি অঞ্চলটি মালাবার উপকূলীয় সমভূমি নামে পরিচিত । এই সমভূমি অঞ্চলে অসংখ্য জলাভূমি বা কয়াল ও উপহ্রদ বা লেগুন দেখা যায় । উপকূলের নিস্তরঙ্গ লবণাক্ত জলাভূমি ব্যাকওয়াটার্স নামে পরিচিত । উপকূলের বালিয়াড়িগুলিকে স্থানীয় অধিবাসীরা থেরিস এবং উপহ্রদগুলিকে কয়াল বলে ।
কয়াল — ভূ-আলোড়নের ফলে মালাবার উপকূলভাগ বহুবার উত্থিত এবং নিমজ্জিত হয়েছে । এর চিহ্নস্বরূপ এখানে স্থলভাগের মধ্যে সমুদ্রের জল আটকে পড়ে বিশাল জলাভূমি বা ব্যাকওয়াটার্স -এর সৃষ্টি হয়েছে । এই জলাভূমিগুলি স্থানীয়ভাবে কয়াল নামে পরিচিত । কয়ালগুলির মধ্যে কোচিনের কাছে অবস্থিত ভেম্বনাদ কয়াল ভারতের বৃহত্তম কয়াল ও কোল্লমের কাছে অবস্থিত অষ্টমুদি কয়াল খুব বিখ্যাত ।
পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি ও পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমির তুলনা :
পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি | পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি | ||
১. | এই উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল বেশ প্রশস্ত । | ১. | এই উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল বেশ সংকীর্ণ । |
২. | সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই উপকূলের উচ্চতা কম । | ২. | সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই উপকূলের উচ্চতা বেশি । |
৩. | এই উপকূলের সর্বত্র বালিয়াড়ি দেখা যায় । | ৩. | এই উপকূলের কেবল দক্ষিণ ভাগে বালিয়াড়ি দেখা যায় । |
৪. | এই উপকূলের নদী মোহানায় বড় বড় বদ্বীপ দেখা যায় । | ৪. | এই উপকূলের নেত্রাবতী নদী মোহানায় একটি মাত্র ছোটো বদ্বীপ ছাড়া আর কোনো বদ্বীপ নেই । |
৫. | এই উপকূলের বিভিন্ন অংশে হ্রদ ও উপহ্রদ দেখা যায় । | ৫. | এই উপকূলের কেবলমাত্র দক্ষিণাংশে কয়াল দেখা যায় । |
৬. | এই উপকূলের দক্ষিণভাগ ছাড়া উপকূলরেখা অভগ্ন । এই জন্য বন্দরের সংখ্যা কম । | ৬. | এই উপকূলের উপকূলরেখা সর্বত্রই ভগ্ন বলে বন্দরের সংখ্যা বেশি । |
৭. | এই উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাঝারি । | ৭. | এই উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি । |
৮. | এই উপকূলীয় সমভূমির মাটি যথেষ্ট উর্বর । | ৮. | এই উপকূলীয় সমভূমির মাটির উর্বরতা কম । |
******
উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের গুরুত্ব :
(১) উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের মৃত্তিকা উর্বর হওয়ায় এই অঞ্চল কৃষিকাজের সহায়ক ।
(২) এই অঞ্চল নারিকেল, সুপারি, কাজুবাদাম ও রবার চাষে অত্যন্ত সমৃদ্ধ ।
(৩) উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে লবণ ও কার্পাস বয়ন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে ।
(৪) মৎস্য আহরণের সুবিধা, উন্নত কৃষিকাজ ও শিল্পব্যবস্থার কারণে এই অঞ্চল অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ ।
(৫) এই অঞ্চলের স্থানাবিশেষে সমুদ্র বন্দর গড়ে ওঠায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটেছে ।
*****