প্রশ্ন :- "বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোল আনাই বজায় আছে ।" — বাবুটি কে ? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও ।
উত্তর:- কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা "পথের দাবী" উপন্যাসে যে বাবুটির কথা বলা হয়েছে তিনি হলেন গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশধারী রাজবিদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিক ।
♦ গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশধারী সব্যসাচী মল্লিককে পুলিশ থানায় ধরে আনেন । কারণ রাজবিদ্রোহী সব্যসাচীর নামে ওয়ারেন্ট ছিল । তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের পদস্থ পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু রেঙ্গুনে এসেছেন । এই সময় পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু ও অপূর্ব থানায় উপস্থিত ছিলেন । নিমাইবাবু এসেছেন সব্যসাচী মল্লিককে গ্রেপ্তার করার জন্য আর অপূর্ব এসেছেন তার বাড়িতে চুরি হয়ে যাওয়া বিষয়ে পুলিশকে জানাতে । গিরীশ মহাপাত্রের শরীর-স্বাস্থ্য দেখে তাঁর জীবনের মেয়াদ বেশি দিন নেই বলে অপূর্বর মনে হয়েছিল । গিরীশ মহাপাত্রের চেহারা সাধারণ মানুষের মতো হলেও অদ্ভুত ছিল তার চোখ দুটো । শরীর রুগ্ন, দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত, বয়স ত্রিশ-বত্রিশের বেশি নয় । রুগ্ন ও দুর্বল শরীর হলেও তার চোখের দৃষ্টি ছিল অত্যন্ত গভীর জলাশয়ের মতো । তার বেশভূষা ও ছিল অদ্ভুত । মাথার সামনের দিকে চুল বড়ো আর ঘাড়ে কানের দিকে খুব ছোট করে ছাঁটা । মাথার চুলে জবজবে করে নেবুর তেল মাখা । যার উৎকট গন্ধে ঘর ভরে উঠেছিল । গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি, বুক পকেটে ছিল বাঘ আঁকা রুমাল । পরনে ছিল বিলেতি মিলের মখমল পাড়ের সুক্ষ্ম শাড়ি । পায়ে ছিল সবুজ রঙের ফুল মোজা । পায়ে ছিল বার্নিশ করা পাম-শু যার তলাটা টেকসই করার জন্য লোহার নাল দিয়ে বাঁধা, হাতে ছিল এক গাছি হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি । তবে সবকিছুই ছিল নোংরা । কয়েকদিনের জাহাজ যাত্রার ধকলে এগুলো নোংরা হয়ে গিয়েছিল । সবকিছু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় যে গিরিশ মহাপাত্র বেশ ভালোরকম শখের মানুষ ছিলেন ।
****