সমাসের শ্রেণিবিভাগ :- বাংলা ভাষায় সমাস মূলত ছয় প্রকার— (১) তৎপুরুষ, (২) কর্মধারয়, (৩) দ্বন্দ্ব, (৪) দ্বিগু, (৫) বহুব্রীহি, (৬) অব্যয়ীভাব । এছাড়াও (৭) নিত্য সমাস, (৮) বাক্যাশ্রয়ী সমাস ও (৯) অলোপ সমাস আছে ।
(১) তৎপুরুষ সমাস:- যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি বা অনুসর্গ লোপ পায় এবং পরপদ বা উত্তরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন— গোলায় ভরা = গোলাভরা । বধুকে দেখা = বধু দেখা । জল থেকে আতঙ্ক = জলাতঙ্ক । এখানে 'য়' 'কে' হল দুটি বিভক্তি এবং 'থেকে' হল অনুসর্গ ।
(২) কর্মধারয় সমাস :- যে সমাসে বিশেষ্য বা বিশেষণ জাতীয় পূর্বপদের সঙ্গে বিশেষ্য বা বিশেষণ জাতীয় পরপদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে । যেমন— নব যে অন্ন = নবান্ন । যিনি কর্তা তিনি মশায় = কর্তামশায় ।
(৩) দ্বন্দ্ব সমাস :- যে সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের অর্থ সমানভাবে গুরুত্ব পায়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে । যেমন রাত ও দিন = রাতদিন । ভাই ও বোন = ভাইবোন ইত্যাদি ।
(৪) দ্বিগু সমাস :- দ্বি = দুই, গো < গো শব্দের অর্থ গরু । অর্থাৎ দুটি গরুর সমাহার । দ্বিগু শব্দটি বিশ্লেষণ করলে এরূপ অর্থ পাওয়া যায় । যে সমাসে পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য এবং ব্যাসবাক্যে সমাহার শব্দটি থাকে তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে । যেমন— অষ্ট ধাতুর সমাহার = অষ্টধাতু । শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী । সপ্ত অহের (দিন) সমাহার = সপ্তাহ । তিন মাথার সমাহার = তেমাথা । পঞ্চ নদের সমাহার = পঞ্চনদ । নব রত্নের সমাহার = নবরত্ন । সাত সমুদ্রের সমাহার = সাতসমুদ্র ইত্যাদি ।
(৫) বহুব্রীহি সমাস :- যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির কোনোটির অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে নতুন অর্থ প্রকাশ করে তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে । যেমন— চন্দ্র চূড়ায় যার = চন্দ্রচূড় (শিব) । পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ (বিষ্ণু) । বীনা পাণিতে যার = বীনাপাণি (সরস্বতী) ।
বি: দ্র: :- এই সমসের ব্যাসবাক্যে একটি যদ্ শব্দের অর্থ যিনি, যার বা যে থাকবে ।
(৬) অব্যয়ীভাব সমাস :- যে সমাসে পূর্বপদ অব্যয় ও পরপদ বিশেষ্য এবং সমস্ত পদে অব্যয়ের অর্থ প্রাধান্য পায় সেই সমাসকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে । যেমন— ভাতের অভাব = হাভাত । ফুলের সমীপে = উপকূল । কূলের বিপরীত = প্রতিকূল । দানের সদৃশ = অনুদান । দানের বিপরীত = প্রতিদান । ক্ষুদ্র বন = উপবন । গ্রহণের যোগ্য = অনুগ্রহ ইত্যাদি ।
(৭) নিত্য সমাস :- যে সমাসে ব্যাসবাক্য হয় না, ব্যাসবাক্যের জন্য অন্য কোনো পদের সাহায্য নিতে হয় তাকে নিত্য সমাস বলে । যেমন— অন্য দেশ = দেশান্তর । অন্য দ্বীপ = দ্বীপান্তর । অন্য যুগ = যুগান্তর । কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র । অন্য মনু = মন্বন্তর । কেবল জ্ঞান = জ্ঞানমাত্র ইত্যাদি ।
(৮) অলোপ সমাস :- যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি বা অনুসর্গ কিছুই লোপ পায় না তাকে অলোপ সমাস বলে । যেমন— তেলেভাজা = তেলেভাজা । মেঘে ঢাকা = মেঘেঢাকা । মামার বাড়ি = মামার বাড়ি । দুধে আলতা = দুধেআলতা ইত্যাদি ।
(৯) বাক্যাশ্রয়ী সমাস :- হাইফেন (-) চিহ্ন ব্যবহার করে কোনো বাক্য বা বাক্যাংশ সমাসবদ্ধ একটি পদ রূপে প্রযুক্ত হয়, তখন তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে । যেমন— 'সবুজ-বাঁচাও কমিটি', 'সব-পেয়েছির দেশ', 'বসে-আঁকো প্রতিযোগিতা', 'পণপ্রথা-বিরোধী আন্দোলন', 'ভারত-ছাড়ো ডাক', 'ফেলে-আসা দিনগুলি', ইত্যাদি ।
*****