(১) ব্যঞ্জনসংগতি বা সমীভবন :— কোনো শব্দের মধ্যে যদি দুটি ভিন্ন বা আলাদা ব্যঞ্জনধ্বনি পাশাপাশি থাকে, তবে উচ্চারণের সুবিধার জন্য দুটি ধ্বনিকে একই ধ্বনিতে পরিণত করা হয় । এইভাবে বিভিন্ন অসদৃশ ব্যঞ্জনধ্বনিকে সদৃশ ব্যঞ্জনধ্বনিতে পরিণত করার নাম সমীকরণ বা সমীভবন । সমীভবন তিন প্রকার— (i) প্রগত সমীকরণ বা সমীভবন, (ii) পরাগত সমীভবন ও (iii) অন্যোন্য সমীভবন ।
(i) প্রগত সমীকরণ বা সমীভবন :— পূর্ববর্তী ব্যঞ্জন পরবর্তী ব্যঞ্জনকে প্রভাবিত করে যেমন — গল্দা > গল্লা, চন্দন > চন্নন, বাক্য > বাক্ক, পদ্ম > পদ্দ ইত্যাদি । এখানে দুটি ভিন্ন ব্যঞ্জন একটি ব্যঞ্জন ধ্বনিতে পরিণত হয়েছে ।
(ii) পরাগত সমীভবন:— যে সমীভবনে পরবর্তী ব্যঞ্জন পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনকে প্রভাবিত করে পরবর্তী একই ব্যঞ্জনে রূপান্তরিত হয় । যেমন— ভক্ত > ভত্ত, কতদিন > কদ্দিন, দুর্গা > দুগ্গা, কর্তা > কত্তা, যতদূর > যদ্দূর, ধর্ম > ধম্ম, জন্ম > জম্ম ইত্যাদি ।
(iii) অন্যোন্য সমীভবন:— শব্দে পাশাপাশি বা যুক্ত অবস্থায় অসম ব্যঞ্জন দুটি পরস্পর পরস্পরকে প্রভাবিত করে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের দুটি ব্যঞ্জন এক জাতীয় ব্যঞ্জনে পরিণত হয় তখন তাকে অন্যোন্য সমীভবন বলা হয় । যেমন — বৎসর > বচ্ছর, কুৎসিৎ > কুচ্ছিৎ, উৎ + শ্বাস > উচ্ছ্বাস ইত্যাদি ।
(২) ধ্বনি বিপর্যয় : — অসতর্ক উচ্চারণে একটি শব্দের মধ্যে অবস্থিত দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি যখন পরস্পর স্থান বিনিময় করে সেই প্রক্রিয়াকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে । যেমন— রিক্সা > রিস্কা, মাস্ক > মাক্স, হ্রদ > দহ, তলোয়ার > তরোয়াল, মুকুট > মুটুক ইত্যাদি ।
(৩) ব্যঞ্জনলোপ :— কোন শব্দের প্রথমে, মধ্যে বা অন্তে অবস্থিত ব্যঞ্জন ধ্বনিগুলি উচ্চারণের তারতম্যের জন্য, উচ্চারণ সহজ করার জন্যে অথবা গ্রাম্য উচ্চারণের ফলে লোপ পায় । এই প্রক্রিয়াকে ব্যঞ্জনলোপ বলে । যেমন — মহাশয় > মশায়, ফলাহার > ফলার, শিয়ালদহ > শিয়ালদা, সিপাহি > সিপাই, বরাহনগর > বরানগর ইত্যাদি ।
*****