অভিষেক

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 05/09/2020 - 17:52

অভিষেক — মাইকেল মধুসূদন দত্ত

 

কনক-আসন ত্যজি, বীরেন্দ্রকেশরী

ইন্দ্রজিৎ, প্রণমিয়া ধাত্রীর চরণে,

কহিলা, — "কি হেতু, মাতঃ, গতি তব আজি

এ ভবনে ? কহ দাসে লঙ্কার কুশল ।"

    শিরঃ চুম্বি, ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা

উত্তরিলা; — "হায় ! পুত্র, কি আর কহিব

কনক-লঙ্কার দশা ! ঘোরতর রণে

হত প্রিয় ভাই তব বীরবাহু বলী !

তার শোকে মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি,

সসৈন্যে সাজেন আজি যুঝিতে আপনি ।"

   জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া; —

"কি কহিলা, ভগবতি ? কে বধিল কবে

প্রিয়ানুজে ? নিশা-রণে সংহারিনু আমি

রঘুবরে ; খন্ড খন্ড করিয়া কাটিনু

বরষি প্রচণ্ড শর বৈরিদলে ; তবে

এ বারতা, এ অদ্ভুত বারতা, জননী

কোথায় পাইলে তুমি, শীঘ্র কহ দাসে ।"

    রত্নাকর রত্নোত্তমা ইন্দিরা সুন্দরী

উত্তরিলা; — "হায় ! পুত্র, মায়াবী মানব

সীতাপতি ; তব শরে মরিয়া বাঁচিল ।

যাও তুমি ত্বরা করি ; রক্ষ রক্ষঃকুল-

মান, এ কালসমরে, রক্ষঃ- চূড়ামণি !

    ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী

মেঘনাথ; ফেলাইলা কনক বলয়

দূরে; পদ-তলে পড়ি শোভিল কুণ্ডল,

যথা অশোকের ফুল অশোকের তলে

আভাময় ! "ধিক মোরে" কহিলা গম্ভীরে 

কুমার , "হা ধিক মোরে ! বৈরিদল বেড়ে 

স্বর্ণলঙ্কা, হেথা আমি বামাদল মাঝে ?

এই কি সাজে আমারে, দশাননাত্মজ 

আমি ইন্দ্রজিৎ, আন রথ ত্বরা করি ;

ঘুচাব ও অপবাদ, বধি রিপুকুলে ।"

      সাজিলা রথীন্দ্রর্ষভ বীর অভরণে 

হৈমবতীসুত যথা নাশিতে তারকে

মহাসুর; কিম্বা যথা বৃহন্নলারূপী

কিরীটি, বিরাটপুত্র সহ, উদ্ধারিতে,

গোধন, সাজিলা শূর, শমীবৃক্ষমূলে ।

মেঘবর্ণ রথ ; চক্র বিজলীর ছটা ;

ধ্বজ ইন্দ্রচাপরূপী ; তুরঙ্গম বেগে

আশুগতি । রথে চড়ে বীর-চূড়ামণি

বীরদর্পে, হেন কালে প্রমিলা সুন্দরী,

ধরি পতি-কর-যুগ ( হায় রে, যেমতি

হেমলতা আলিঙ্গয়ে তরু-কুলেশ্বরে )

কহিলা কাঁদিয়া ধনী; "কোথা প্রাণসখে,

রাখি এ দাসীরে, কহ চলিলা আপনি ?

কেমনে ধরিবে প্রাণ তোমার বিরহে

এ অভাগী ? হায়, নাথ গহন কাননে,

ব্রততী বাঁধিলে সাধে করি-পদ, যদি

তার রঙ্গরসে মনঃ না দিয়া, মাতঙ্গ

যায় চলি, তবু তারে রাখে পদাশ্রমে

যুথনাথ । তবে কেন তুমি, গুণনিধি,

ত্যজ কিকিঙ্করীরে আজি ?" হাসি উত্তরিলা

মেঘনাথ, "ইন্দ্রজিতে জিতি তুমি, সতি,

বেঁধেছ যে দৃঢ় বাঁধে, কে পারে খুলিতে

সে বাঁধে ? ত্বরায় আমি আসিব ফিরিয়া

কল্যাণী, সমরে নাশি তোমার কল্যাণে

রাঘবে । বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী ।"

    উঠিল পবন-পথে, ঘোরতর রবে,

রথবর, হৈমপাখা বিস্তারিয়া যেন 

উড়িলা মৈনাক-শৈল, অম্বর উজলি !

শিঞ্জিনী আকর্ষি রোষে, টঙ্কারিলা ধনুঃ

বীরেন্দ্র, পক্ষীন্দ্র যথা নাদে মেঘ মাঝে 

ভৈরবে । কাঁপিলা লঙ্কা, কাঁপিলা জলধি !

     সাজিছে রাবণরাজা, বীরমদে মাতি; —

বাজিছে রণ-বাজনা; গরজিছে গজ;

হ্রেষে অশ্ব; হুঙ্কারিছে পদাতিক রথী;

উড়িছে কৌশিক-ধ্বজ; উঠিছে আকাশে

কাঞ্চন-কঞ্চুক-বিভা । হেন কালে তথা

দ্রুতগতি উতরিলা মেঘনাদ রথী ।

    নাদিলা কর্বূরদল হেরি বীরবরে

মহাগর্বে । নমি পুত্র পিতার চরণে,

করজোড়ে কহিলা;—" হে রক্ষঃ-কুল-পতি,

শুনেছি, মরিয়া নাকি বাঁচিয়াছে পুনঃ

রাঘব ? এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি !

কিন্তু অনুমতি দেহ; সমূলে নির্মূল

করিব পামরে আজি ! ঘোর শরানলে

করি ভস্ম, বায়ু-অস্ত্রে উড়াইব তারে;

নতুবা বাঁধিয়া আনি দিব রাজপদে ।"

    আলিঙ্গি কুমারে , চুম্বি শিরঃ, মৃদুস্বরে 

উত্তর করিলা তবে স্বর্ণ-লঙ্কাপতি;

"রাক্ষস-কুল-শেখর তুমি, বৎস; তুমি 

রাক্ষস-কুল-ভরসা । এ কাল সমরে,

নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা

বারংবার । হায়, বিধি বাম মম প্রতি ।

কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা জলে,

কে কবে শুনেছে, লোক মরি পুনঃ বাঁচে ?"

    উত্তরিলা বীরদর্পে অসুরারি-রিপু ;—

" কি ছার সে নর, তারে ডরাও আপনি,

রাজেন্দ্র ? থাকিতে দাস, যদি যাও রণে

তুমি, এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে ।

হাসিবে মেঘবাহন; রুষিবেন দেব

অগ্নি । দুই বার আমি হারানু রাঘবে;

আর এক বার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে;

দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে !"

       কহিলা রাক্ষসপতি; — "কুম্ভকর্ণ বলী 

ভাই মম,— তায় আমি জাগানু অকালে

ভয়ে; হায়, দেহ তার, দেখ, সিন্ধু তীরে 

ভুপতিত, গিরিশৃঙ্গ কিম্বা তরু যথা 

বজ্রাঘাতে ! তবে যদি একান্ত সমরে

ইচ্ছা তব, বৎস, আগে পূজ ইষ্টদেবে,—

নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ কর, বীরমণি !

সেনাপতি-পদে আমি বরিণু তোমারে ।

দেখ, অস্তাচলগামী দিননাথ এবে;

প্রভাতে যুঝিও, বৎস, রাঘবের সাথে ।"

     এতেক কহিয়া রাজা, যথাবিধি লয়ে

গঙ্গোদক, অভিষেক করিলা কুমারে ।

****

Comments

Related Items

Madhyamik Examination (WBBSE) - 2022 Bengali (First Language)

২০২২

বাংলা - প্রথম ভাষা

সময় — ৩ ঘন্টা 15 মিনিট

বৃক্ষরোপণ-উপযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা কর ।

প্রশ্ন : বৃক্ষরোপণ-উপযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা কর

 উত্তর:- 

নারী-স্বাধীনতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ রচনা কর ।

নারী-স্বাধীনতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ রচনা কর 

উত্তর:-

বঙ্গানুবাদ (Translate into Bengali)

ইংরেজি ভাষা থেকে বাংলা ভাষাতে অনুবাদ করাকে বঙ্গানুবাদ বলে । মাধ্যমিক পরীক্ষায় আগত বিভিন্ন বঙ্গানুবাদ নিচে তুলে ধরা হলো --

"পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য ।" — লেখকের এমন মন্তব্যের কারণ কী ?

প্রশ্ন:- "পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য ।" — লেখকের এমন মন্তব্যের কারণ কী ?