ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 12/16/2014 - 11:19

ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলতে বিদ্যুৎ, কৃষি ও শিল্পে ব্যবহৃত ছোট-বড়ো ও হালকা ও ভারী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে পরিবহণের যানবাহনসহ সমস্ত শিল্পকে বোঝায় । বিভিন্ন ধরনের সূক্ষ্ম ও ভারী যন্ত্রপাতি, রেল ইঞ্জিন ও ওয়াগন, জাহাজ, মোটরগাড়ি, মোটর সাইকেল ও স্কুটার, সাইকেল, ঘড়ি, পাখা প্রভৃতি ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের উদাহরণ ।   

যানবাহন শিল্প : যানবাহন নির্মাণ শিল্প চার ভাগে বিভক্ত, যেমন— (ক) রেল ইঞ্জিন ও রেল বগি নির্মাণ শিল্প, (খ) মোটর গাড়ি নির্মাণ শিল্প, (গ) বিমানপোত (এরোপ্লেন) শিল্প এবং (ঘ) জাহাজ নির্মাণ শিল্প ।

(ক) রেল ইঞ্জিন নির্মাণ শিল্প : ১৯৪৩ সালে তৎকালীন বিহারের জামসেদপুরে টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাণ্ড লোকোমোটিভ কোম্পানি ভারতের প্রথম রেল ইঞ্জিন তৈরি করে । বর্তমানেও এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রেল ইঞ্জিন তৈরি করা হয় । বর্তমানে দুটো সরকারি সংস্থা ভারতের অধিকাংশ রেল ইঞ্জিন তৈরি করে, যথা— (১) চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস ও (২) ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস, বারাণসী ।

(১) চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস : পশ্চিমবঙ্গের চিত্তরঞ্জনে প্রতিষ্ঠিত এই রেল ইঞ্জিন কারখানায় আগে বাস্পীয় ইঞ্জিন তৈরি হত । ১৯৭১ সালের পর এখানে বাষ্পীয় ইঞ্জিন তৈরি করা হয় না । বর্তমানে এই কারখানায় বৈদ্যুতিক এবং ডিজেল রেল ইঞ্জিন তৈরি হয় ।

(২) ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস, বারাণসী :  উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে অবস্থিত এই রেল ইঞ্জিন কারখানায় ডিজেল রেল ইঞ্জিন তৈরি হয় ।

রেল বগি নির্মাণ শিল্প : (i) তামিলনাড়ুর পেরাম্বুরে অবস্থিত সরকারি সংস্থা ‘ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি’ তে ভারতের অধিকাংশ যাত্রিবাহী রেল বগি তৈরি হয় । এছাড়া (ii) কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোরে ‘ভারত আর্থ মুভারস’ এবং (iii) পশ্চিমবঙ্গের ‘জেপস অ্যান্ড কোং’ নামে দুটো সরকারি সংস্থায়ও মালগাড়ি ও যাত্রিবাহী গাড়ি তৈরি হয় । বেসরকারিভাবে পশ্চিমবঙ্গের টেক্সম্যাকো কোম্পানিতেও রেল বগি তৈরি হয় ।

(খ) মোটর গাড়ি নির্মাণ শিল্প : ভারতে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের মোটর গাড়ি, বাস, মিনিবাস, ট্রাক, জীপ, স্কুটার, মোটর সাইকেল প্রভৃতি তৈরি হয়, যথা— (১) কলকাতার কাছে হিন্দ মোটরে ‘হিন্দুস্থান মোটরস লিমিটেড’ -এর কারখানায় অ্যামবাসাডার (পেট্রোল ও ডিজেল) ও কনটেসা গাড়ি এবং ট্রাক বাস, মিনিবাস তৈরি হয় । (২) মুম্বই শহরে “প্রিমিয়ার অটোমোবাইলস লিমিটেড” প্রিমিয়ার পদ্মিনী (ফিয়াট - পেট্রোল ও ডিজেল) ও NE 118 গাড়ি এবং (৩) মাহিন্দ্রা অ্যাণ্ড মাহিন্দ্রা লিমিটেড জীপ গাড়ি ও ছোট ট্রাক তৈরি করে ; (৪) তামিলনাড়ুর চেন্নাই -এ “অশোক লেল্যান্ড লিমিটেড” বৃহদায়তন ট্রাক ও বাস তৈরি করে । (৫) ঝাড়খন্ডের জামসেদপুরে অবস্থিত “টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড লোকোমোটিভ কোং” (টেলকো) ভারতের বিখ্যাত ট্রাক ও বাস তৈরির প্রতিষ্ঠান । সম্প্রতি টেলকো ডিজেল চালিত মোটর গাড়ি ও জীপ গাড়িও তৈরি করছে; (৭) হরিয়ানার কেন্দ্রীয় সরকার ও জাপানের সুজুকি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত মারুতি উদ্যোগ -এ মারুতি ৮০০, জেন, অল্টো এস্টিম প্রভৃতি গাড়ি এবং জিপসি নামে দ্রুত গামি জীপ গাড়ি তৈরি হচ্ছে; (৮) এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে ইন্দো জাপান সহযোগিতায় উত্তরপ্রদেশের সুরজপুরে (ডি.সি.এম. টয়োটা লিমিটেড) হালকা ধরনের মালবাহি ট্রাক তৈরি হছে ।, (৯) উত্তরপ্রদেশের লখনৌ (স্কুটারস ইণ্ডিয়া লিমিটেড), (১০) কানপুর (লোহিয়া লিমিটেড) (১১) হরিয়ানার ফরিদাবাদ (১২) মহারাষ্ট্রের পুনে (বাজাজ লিমিটেড) (১৩) কর্ণাটকের ব্যাঙ্গালোর এবং (১৪) সরকারি উদ্যোগে অন্ধ্রপ্রদেশে (পি.এল. ১৭০) এবং গুজরাটে (নর্মদা ১৫০) স্কুটার তৈরি হয় । ভারত সরকারের উদার আর্থিক নীতির সুবাদে বর্তমানে ভারতে অত্যাধুনিক বিদেশি প্রযুক্তির সাহায্যে হোন্ডা, ওপেল, ফোর্ড, সিয়েলো, ল্যান্সার, হোন্ডাই, মার্টিজ এমনকি মার্সেডিজ বেঞ্জ গাড়িও তৈরি হছে ।

*****

Related Items

কাবেরী নদী (The Kaveri)

কাবেরী নদী (The Kaveri) : কর্ণাটক রাজ্যের তালাকাভেরি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । কাবেরী নদীর দৈর্ঘ্য ৭৬৫ কিমি.

কৃষ্ণা নদী (The Krishna)

কৃষ্ণা নদী (The Krishna) : পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের শৃঙ্গের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষ্ণা নদী দক্ষিণ-পূর্বে তেলেঙ্গানা ও অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি করে

গোদাবরী নদী (The Godavari)

গোদাবরী নদী (The Godavari) : গোদাবরী নদী 'দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা' নামে পরিচিত । মহারাষ্ট্রের ব্রম্ভগিরি পাহাড়ের ত্র্যম্বক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে এবং পরে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে গোদাবরী নদী মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ

মহানদী (The Mahanadi)

মহানদী (The Mahanadi) : ছত্তিসগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়া মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্য অতিক্রম করার পর বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । মহানদী

তাপী নদী (The Tapti)

তাপী বা তাপ্তি নদী (The Tapti) : মধ্যপ্রদেশের মহাদেব পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমির প্রায় ৭৭০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে তাপী নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের ওপর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে সাতপুরা ও অজন্তার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত