জীবাণু বা মাইক্রোবস (Microbes)
যে সমস্ত অতি ক্ষুদ্র এবং এককোশী বা বহুকোশী জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কেবলমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়, তাদেরই সাধারণভাবে জীবাণু বলে ।
জীবাণুর সংজ্ঞা (Definition of Microbes):- অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবদের এককথায় জীবাণু বা অণুজীব বা মাইক্রোবস বলা হয় ।
জীবাণুর প্রকারভেদ:- জীবাণু নানান রকমের হয়, যেমন : ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক, প্রোটোজোয়া, শৈবাল, রিকেটসি, অ্যাকটিনোমাইসিটিস, স্পাইরোকিটিস, মাইকোপ্লাজমা ইত্যাদি ।
ব্যাকটিরিয়া (Bacteria):- ব্যাকটিরিয়া (এক বচনে ব্যাকটিরিয়াম) এক রকমের সরল ও অতিক্ষুদ্র এককোশী জীব । 1676 খ্রিস্টাব্দে অ্যানটনি ভ্যান লিভেনহিক [A. Van Leeuwenhoek] নামে হল্যান্ড দেশীয় এক লেনস ও অনুবীক্ষণযন্ত্র প্রস্তুতকারক নিজের তৈরি অণুবীক্ষণ যন্ত্রে সর্বপ্রথম ব্যাকটিরিয়ার অস্তিত্ব প্রমাণ করেন । পরবর্তীকালে ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর এবং জার্মান বিজ্ঞানী রবার্ট কক্ নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে বিভিন্ন রোগের কারণ হল ব্যাকটিরিয়া ।
ব্যাকটিরিয়ার সংজ্ঞা [Definition of Bacteria]:- সর্বত্র বিরাজমান, মাইক্রোব্স নামে পরিচিত, উদ্ভিদ-বৈশিষ্ট সম্পন্ন, আদি-নিউক্লিয়াস যুক্ত, সরল এককোশী আণুবীক্ষণিক জীবদের ব্যাকটিরিয়া বলে ।
ব্যাকটিরিয়ার গুরুত্ব (Significance of Bacteria):- ব্যাকটিরিয়া মানুষসহ উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিভিন্ন উপকার ও অপকার করায় ব্যাকটিরিয়ার গুরুত্ব অসীম ।
[A] উপকারী ব্যাকটিরিয়া [Beneficial Bacteria]:- জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে এবং বিভিন্ন শিল্পজাত বস্তু উত্পাদনে ব্যাকটিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ।
কয়েক রকম উপকারী ব্যাকটিরিয়ার ভুমিকা
[১] ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটিরিয়াম ল্যাকটোব্যাসিলাস ট্রাইকোডেস [Lactobacillus trichodes] অবাত প্রক্রিয়ায় শর্করা থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড উত্পন্ন করে । এই ব্যাকটিরিয়ামের সাহায্যে দুধ থেকে দই, পনির, মাখন ইত্যাদি প্রস্তুত হয় ।
[২] শিম্বী গোত্রীয় উদ্ভিদের অর্বুদে বসবাসকারী ব্যাকটিরিয়াম রাইজোবিয়াম [Rhizobium] বায়ু থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন শোষণ করে মাটিতে মিশিয়ে দেয়, ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও মাটি উর্বর হয় ।
[B] অপকারী ব্যাকটিরিয়া [Pathogenic Bacteria]:- মানবদেহে এবং বিভিন্ন প্রাণীদেহে ব্যাকটিরিয়া নানা রকম রোগ সৃষ্টি করে, যেমন :
মানবদেহে রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটিরিয়া :-
[১] ভিব্রিও কলেরি [Vibrio cholerae]:- এই ব্যাকটিরিয়া কলেরা রোগ সৃষ্টি করে ।
[২] মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি [Mycobacterium leprae]:- এই ব্যাকটিরিয়া কুষ্ঠ বা লেপ্রোসি রোগ সৃষ্টি করে ।
[৩] মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস [Mycobacterium tuberculosis]:- এই ব্যাকটিরিয়া যক্ষ্মা বা টিউবারকিউলোসিস রোগ সৃষ্টি করে ।
[৪] সালমোনেলা টাইফোসা [Salmonella typhosa] বা সালমোনেলা টাইফি [Salmonella typhi] :- এই ব্যাকটিরিয়া টাইফয়েড রোগ সৃষ্টি করে ।
ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়ার প্রধান পার্থক্য
ভাইরাস | ব্যাকটিরিয়া |
১. এদের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে না এবং এরা অকোশীয় । | ১. এদের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে এবং এরা কোশীয় । |
২. এদের দেহে অবস্থিত নিউক্লিক অ্যাসিড যে-কোনো এক রকমের হয়, যেমন : DNA অথবা RNA । | ২. এদের কোশে DNA এবং RNA উভয় ধরণের নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে । |
৩. এদের কোশপ্রাচীর থাকে না । | ৩. এদের কোশপ্রাচীর থাকে । |
৪. এরা কেবল পোষক কোশেই প্রজননক্ষম । | ৪. এরা পোষক কোশের বাইরেও প্রজননক্ষম । |
*****
- 2938 views