ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের বহির্গঠন (Morphology of Eukaryotic Cromosome)
যে-কোনো কোশের প্রতিটি ক্রোমোজোমের দুটি প্রধান অংশ থাকে, যথা : (ক) ক্রোমাটিড এবং (খ) সেন্ট্রোমিয়ার ।
(ক) ক্রোমাটিড [Chromatid]:- প্রত্যেক ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হওয়ার পর (মেটাফেজ দশায়) যে দুটি সমান আকৃতির সুতোর মতো অংশ গঠন করে, তাদের প্রত্যেকটিকে ক্রোমাটিড বলে ।
[i] ক্রোমোনিমা:- প্রতিটি ক্রোমাটিড দৈর্ঘ্য বরাবর দুটি সুক্ষ্ম সুতোর মতো অংশ নিয়ে গঠিত, এদের ক্রোমোনিমা বলে । ক্রোমোজোমের অন্যান্য অংশগুলো হল :
[ii] ক্রোমোমিয়ার [Chromomere]:- ক্রোমোজোমের ক্রোমোনিমার রাসায়নিক পদার্থগুলির ঘনত্ব এক রকমের হয় না, স্থানে স্থানে এই ঘনত্ব ঘুব বেশি হয় । ক্রোমোনিমার পুঁতির মতো দেখতে বেশি ঘন অংশগুলোকে ক্রোমোমিয়ার বলে ।
[iii] মুখ্য খাঁজ [Primary Constriction]:- প্রতিটি ক্রোমোজোমের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে এক রকমের খাঁজ দেখা যায় । কোনও রঞ্জকে রঞ্জিত না হওয়া ওই স্থানটিকে মুখ্য খাঁজ বলে ।
[iv] গৌণ খাঁজ [Secondary Constriction]:- প্রাথমিক খাঁজ ছাড়া অপর একটি খাঁজ, থাকে, একে গৌণ খাঁজ বলে । নিউক্লিওলাস পুনর্গঠনে এই অংশটি অংশগ্রহন করে বলে একে নিউক্লিওলার অরগ্যানাইজার [Nucleolar organiser] বলে ।
[v] স্যাটেলাইট বডি [Satelite Body]:- কোনও কোনও ক্ষেত্রে গৌণ খাঁজের শেষ প্রান্তে যে ছোটো অংশটি থাকে, তাকে স্যাটেলাইট বডি বলে । স্যাটেলাইট বডি সজ্জিত ক্রোমোজোমকে স্যাট ক্রোমোজোম [Sat chromosome] বলে ।
[vi] টেলোমিয়ার [Telomere]:- ক্রোমোজোমের দু'দিকের শেষ প্রান্তকে টেলোমিয়ার বলে ।
[vii] পেলিকল এবং ধাত্র:- আগে ধারণা ছিল ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড সুতো দুটি একটি তরল সান্দ্র পদার্থের মধ্যে থাকে, ওই জেলির মতো তরল সান্দ্রকে ধাত্র [matrix] বলে । ওই ধাত্র আবার বাইরের দিকে পেলিকল নামে একটি আবরণী দিয়ে ঢাকা থাকে । কিন্তু ইলেকট্রন অনুবীক্ষণ যন্ত্রে এদের অস্তিত্ব ধরা না পড়ায় আধুনিক বিজ্ঞানীরা এদের অস্তিত্বকে স্বীকার করেন না ।
(খ) সেন্ট্রোমিয়ার [Centromere]:- প্রত্যেক জোড়া ক্রোমাটিড একটি নির্দিষ্ট খাঁজে পরস্পর আটকে থাকে, একে মুখ্য খাঁজ [Primary constriction] বা সেন্ট্রোমিয়ার বলে । সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমোজোম নানান রকমের হয়, যেমন :
[i] মেটাসেন্ট্রিক:- এই ধরনের ক্রোমোজোমে দুটি ক্রোমাটিডের মধ্যবর্তী অঞ্চলের কাছে সেন্ট্রোমিয়ার অবস্থান করে । এক্ষেত্রে ক্রোমোজোমটির বাহু দুটির দৈর্ঘ্য প্রায় সমান হয় ।
[ii] সাব-মেটাসেন্ট্রিক:- এই ধরনের ক্রোমোজোমে দুটি ক্রোমাটিডের প্রায় শেষের দিকে সেন্ট্রোমিয়ারটি অবস্থান করে । এর ফলে ক্রোমোজোমটির একটি বাহু অপর বাহুটির তুলনায় কিছুটা লম্বা হয় ।
[iii] অ্যাক্রোসেন্ট্রিক:- এই ধরনের ক্রোমোজোমে, ক্রোমাটিড দুটির একেবারে নীচের দিকের কিছুটা ওপরে সেন্ট্রোমিয়ার অবস্থান করে । এক্ষেত্রে ক্রোমোজোমের দুটি বাহুর একটি অনেকটা লম্বা এবং অপরটি লম্বায় অনেকটা ছোটো হয় ।
[iv] টেলোসেন্ট্রিক:- এই ধরনের ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমাটিড দুটির একেবারে শেষে অবস্থান করে ।
ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের উপাদান (Composition of Eukaryotic Cromosome)
ক্রোমোজোমের প্রধান দুটি উপাদান হল — (ক) নিউক্লিক অ্যাসিড ও (খ) প্রোটিন ।
নিউক্লিক অ্যাসিড:- ক্রোমোজোমে DNA ও RNA -এই দু'রকমের নিউক্লিক অ্যাসিড পাওয়া গেলেও DNA -এর পরিমাণ RNA -র তুলনায় অনেক বেশি । ক্রোমোজোমের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে 45% DNA এবং 1.2% —1.4% RNA ।
প্রোটিন:- ক্রোমোজোমে দু'রকমের প্রোটিন পাওয়া যায়, যথা : ক্ষারীয় প্রোটিন ও আম্লিক প্রোটিন । ক্রোমোজোমে প্রোটিনের পরিমাণ 55% ।
ধাতব আয়ন:- নিউক্লিক অ্যাসিড এবং প্রোটিন ছাড়াও ক্রোমোজোমে কয়েকটি ধাতব আয়ন (Ca, Mg, Fe ইত্যাদি) থাকে ।
*****
- 6693 views