মধ্যযুগের ঐতিহাসিক উপাদান (Sources of Medieval Indian History) :
সুলতানি যুগ ও মুঘল যুগ মিলে মধ্যযুগ বলা হয় । মধ্যযুগে ইতিহাস গ্রন্থের অভাব নেই । সেজন্য মধ্যযুগে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান অপেক্ষা সাহিত্যিক উপাদান বেশি গুরুত্বপূর্ণ । সুলতানিযুগের ঐতিহাসিক উপাদান দু-ধরনের— (i) সাহিত্যিক উপাদান ও (ii) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান ।
(i) সাহিত্যিক উপাদান (The Literary Elements) আবার দুই ধরনের—
(ক) সমসাময়িক ইতিহাস গ্রন্থ (Contemporary Historical Literature) : ঐতিহাসিক গ্রন্থের মধ্যে মিনহাজ-উস-সিরাজের 'তবাকৎ-ই-নাসিরি' জিয়াউদ্দিন বরাউনির 'তারিখ-ই-ফিরুজশাহী' সামসউদ্দিন সিরাজ আফিকের 'তারিখ-ই-ফিরুজশাহী' প্রভৃতির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । আমির খসরু, ইসামি প্রভৃতি ঐতিহাসিকের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে । 'সিকান্দার-বিন-ই-রসিদি', গোলাম হুসেন সালিম রচিত 'রিয়াজ-উস-সালাতিন' ইত্যাদি গ্রন্থ থেকে প্রাদেশিক ইতিহাস জানা যায় । এইসব গ্রন্থ থেকে তৎকালীন সমাজ, অর্থনীতি ও ধর্মজীবন সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায় ।
(খ) বিদেশী পর্যটকদের বিবরণ (Accounts of Foreign Travelers) : সুলতানি আমলের পর্যটকদের মধ্যে ইবন বতুতা -র নাম উল্লেখযোগ্য । তাঁর বিবরণ থেকে সমসাময়িক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের বহু তথ্য পাওয়া যায় । অন্যান্য পর্যটকদের মধ্যে মার্কো পোলো, নিকলো কন্টি, আবদুর রজ্জাক, নুনিজ পায়েজ প্রভৃতির নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ।
(ii) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান (Archaeological Evidence) : সুলতানি আমলের ইতিহাস রচনায় প্রত্নতত্ত্বের গুরুত্ব কিছুটা কম হলেও কোনো কোনো অঞ্চলের যেমন বাংলা, বাহমনি, গুজরাট ইত্যাদির ইতিহাস রচনায় লিপি বিশেষ ভাবে সাহায্য করে । ইলতুৎমিস, বলবন, আলাউদ্দিন খলজি এবং বিশেষভাবে মহম্মদ-বিন-তুঘলকের মুদ্রা থেকে বহু তথ্য পাওয়া যায় । স্থাপত্য, ভাস্কর্য, শিল্পকলা সুলতানি আমলে সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার পরিচায়ক ।
মুঘলযুগের ঐতিহাসিক উপাদান মূলত ইতিহাসগ্রন্থ; আর এই যুগের ইতিহাস গ্রন্থগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—
(১) সরকারি আনুকুল্য, ও উদ্দ্যোগে রচিত ইতিহাস : আকবরের সভাসদ আবুল ফজল রচিত 'আকবর নামা' ও আইন-ই-আকবরি' এই শ্রেণিতে পড়ে ।
(২) নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক রচনা : নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকদের মধ্যে খাজা নিজামউদ্দিন আহমদ, বদাউনি, ফেরিস্তা, আবদুল, হামিদ লাহোরি, কাফি খান প্রভৃতির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
(৩) আত্মজীবনীমূলক রচনা : জীবনীমূলক রচনার মধ্যে বাবরের 'তুজুক-ই-বাবরি' জাহাঙ্গিরের 'তুজুক-ই-জাহাঙ্গিরি' ও গুলবদন বেগমের 'হুমায়ন নামা' উল্লেখযোগ্য । বৈদেশিক পর্যটকদের মধ্যে রালফ ফিচ, বার্নিয়ের, ট্যাভারনিয়ে, মানুচি, স্যার টমাস রো প্রভৃতির বিবরণ থেকে ইতিহাস রচনার মূল্যবান উপাদান সংগৃহিত হয় ।
*****
- 15961 views