বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste) : বিভিন্ন কারণে পরিবেশে নানা প্রকারের বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে । বর্জ্য পদার্থ তিন প্রকার, যেমন— (ক) কঠিন বর্জ্য, (খ) তরল বর্জ্য ও (গ) গ্যাসীয় বর্জ্য ।
(ক) কঠিন বর্জ্য (Solid waste) : অব্যবহার্য ও অপ্রয়োজনীয় কঠিন পদার্থগুলিকে কঠিন বর্জ্য বলে । গৃহস্থালির আবর্জনা, পৌর আবর্জনা, ভাঙ্গা প্লাস্টিক, ভাঙ্গা কাচ, ধাতব টুকরো, ওষুধের প্যাকেট, ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ প্রভৃতি হল কঠিন বর্জ্য । এই প্রকার বর্জ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান বেশি থাকলে তা মাটি ও বাস্তুতন্ত্রের সাংঘাতিক ক্ষতি করে ।
(খ) তরল বর্জ্য (Liquid waste) : ব্যবহৃত তরল পদার্থের অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর অবশিষ্টাংশকে তরল বর্জ্য বলে । বর্জ্যজল, গ্রিজ, স্নেহপদার্থ, রান্নার পোড়া তেল, স্নান ও শৌচাগারের জল, প্রাণীর মলমূত্র, সাবান ও ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জল ইত্যাদি হল উল্লেখযোগ্য তরল বর্জ্য । এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পারমাণবিককেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় তরল বর্জ্য পদার্থ নির্গত হয় ।
(গ) গ্যাসীয় বর্জ্য (Gaseous waste) : গ্যাস রূপে নির্গত দূষিত বর্জ্যকে গ্যাসীয় বর্জ্য বলে । কলকারখানা, বিদ্যুৎ শক্তিকেন্দ্র, গাড়ির ইঞ্জিন প্রভৃতির ধোঁয়ায় নিঃসৃত কার্বন ডাইঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাসের মিশ্রিত দূষিত কণা গ্যাসীয় বর্জ্য হিসাবে অতি সহজেই বায়ুদূষণ ঘটায় ।
বিষক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে বর্জ্য পদার্থকে দুভাগে ভাগ করা যায় । যেমন — (ক) বিষাক্ত বর্জ্য ও বিষহীন বর্জ্য ।
(ক) বিষাক্ত বর্জ্য (Toxic waste) : যে সকল বর্জ্য মানুষ ও প্রাণীর স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি করে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে, তাদের বিষাক্ত বর্জ্য বলে । এই প্রকার বর্জ্যগুলি পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়, তাই এই বর্জ্যগুলিকে বিপজ্জনক বর্জ্যও বলা হয় । বিষাক্ত বর্জ্যগুলি কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় প্রকৃতির হয়ে থাকে । যন্ত্রশিল্প, নির্মাণশিল্প, মোটরগাড়ি নির্মাণ, পরীক্ষাগার, হাসপাতাল প্রভৃতি ক্ষেত্র থেকে বিষাক্ত বর্জ্য নির্গত হয় ।
(খ) বিষহীন বর্জ্য (Non-toxic waste) : যে বর্জ্যগুলিকে সঠিকভাবে বিয়োজিত করলে পরিবেশের ওপর অনেক কম ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, তাদের বিষহীন বর্জ্য বলে । অফিস, রেস্টুরেন্ট এবং স্কুল-কলেজের বর্জ্য, পরিতক্ত খাবার, ফলের খোসা, শাকসবজি, ছেঁড়া কাগজ, ছেঁড়া কাপড় প্রভৃতি বিষহীন বর্জ্য ।
*****