রশিদ আলি দিবস (Rasid Ali Day) :-
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি লালকেল্লার সামরিক আদালতে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন রশিদ আলিকে কোর্ট মার্শাল করে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলে এই অবিচারের প্রতিবাদে ও তাঁর মুক্তির দাবিতে মুসলিম ছাত্র লিগ ও ছাত্র ফেডারেশন ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ই ফেব্রুয়ারি বাংলা জুড়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় । সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু, মুসলমান, যুবক, কর্মচারী প্রভৃতি সব সম্প্রদায়ের মানুষ ও সমস্ত ছাত্র সংগঠন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই ছাত্র ধর্মঘটকে সমর্থন করে ।
কলকাতা জেলা মুসলিম ছাত্র লিগের সম্পাদক মোয়াজ্জম হোসেন এবং সিটি ছাত্র ফেডারেশনের সম্পাদক গৌতম চট্টোপাধ্যায় ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ থেকে ১৩ই ফেব্রুয়ারি কলকাতার ওয়েলিংটন স্কোয়ারে বর্তমানে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করে । আয়োজিত এই জনসভায় কলকাতার বেশিরভাগ কলেজ, মাদ্রাসা এবং স্কুলের হিন্দু-মুসলমান ছাত্রছাত্রীরা যোগ দেয় । প্রখ্যাত গান্ধিবাদী নেতা সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত, মুসলিম লিগ নেতা সুরাবর্দী এবং কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ লাহিড়ী এই সভায় বক্তব্য রাখেন । এছাড়াও অন্নদাশংকর ভট্টাচার্য্য, শাহ আজিজুর রহমান প্রমূখ ছাত্রনেতা এই জনসভায় ভাষণ দেন । সভা শেষে এক বিশাল মিছিল ডালহৌসি স্কোয়ারের দিকে অগ্রসর হলে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সামসুদ্দোর নেতৃত্বে সশস্ত্র গোর্খা সেনাদল এই মিছিলের গতিপথ আটকে দেয় । আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সেনাদলের সংঘর্ষ শুরু হয় । আন্দোলনকারীরা হিংসাত্মক হয়ে ওঠে বাস, লরি, ট্রাম জ্বালাতে শুরু করে । পুলিশ ও মিলিটারিরা মিছিল ছত্রভঙ্গ করার জন্য মিছিলের ওপর গুলি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে ও লাঠি চার্জ করে । এর প্রতিবাদে ছাত্ররা ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ই ফেব্রুয়ারি দিনটিকে রশিদ আলি দিবস হিসাবে পালন করার কথা ঘোষণা করে । ১১ থেকে ১৩ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা তিনদিন সারা বাংলা জুড়ে ধর্মঘট, ব্যারিকেড ও প্রতিরোধ শুরু হয় ও আইন-শৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি পুলিশের আয়ত্বের বাইরে চলে যায় । এই কয়েকদিনের সংঘর্ষে সরকারি হিসেব মতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ৮৪ জন মারা যায় এবং ৩০০ জন আহত হয় । বেসরকারি হিসেবে নিহত ও আহতের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল ।
*****