নিউক্লীয় সংযোজন (Nuclear fusion)

Submitted by arpita pramanik on Tue, 02/12/2013 - 21:26

নিউক্লীয় সংযোজন (Nuclear fusion)

 

যে নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় কয়েকটি হালকা পরমাণুর নিউক্লিয়াস সংযোজিত হয়ে অপেক্ষাকৃত ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং সেই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ শক্তির উদ্ভব ঘটে, তাকে নিউক্লীয় সংযোজন বলে ।

4টি হাইড্রোজেন পরমাণুকে সংযোজিত করে 1টি হিলিয়াম পরমাণুর গঠন নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার উদাহরণ । সমীকরণটি হল— [tex]{}_1{H^1} + {}_1{H^1} + {}_1{H^1} + {}_1{H^1} \to {}_2H{e^4} + 2{}_{ + 1}{e^0} + [/tex] শক্তি

হিসাব করে দেখা যায় যে, উত্পন্ন শক্তির পরিমাণ প্রায় 26 Me V  । আপাতদৃষ্টিতে এই শক্তি খুব কম মনে হতে পারে কিন্তু সামান্য পরিমাণ হাইড্রোজেনে যে লক্ষ লক্ষ পরমাণু থাকে তাদের কথা বিবেচনা করলে এই শক্তির পরিমাণ অপরিমিত— প্রতি কেজি হাইড্রোজেন থেকে প্রাপ্ত শক্তির পরিমাণ প্রায় 20 কোটি কিলোওয়াট ঘন্টার মতো । নিউক্লীয় সংযোজন প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে হাইড্রোজেন বোমা তৈরি হয়েছে । একটি সংযোজন বোমা একটি বিভাজন বোমার তুলনায় প্রায় 30 গুণ শক্তিশালী ।

☼ দেখা গেছে, নিউক্লীয় সংযোজন ঘটাতে প্রায় 107 কিংবা 108 ডিগ্রী সেলসিয়াস উষ্ণতার প্রয়োজন হয় । যে কারণে, 'নিউক্লীয় সংযোজন থেকে শক্তি পেতে গেলে নিউক্লীয় বিভাজন আগে ঘটাতে হয়' । নিউক্লীয় সংযোজন প্রক্রিয়ায় ধনাত্মক তড়িৎযুক্ত প্রোটনগুলি পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এবং সংযোজন প্রক্রিয়াকে বাধা দেয় । দেখা গেছে, কণাগুলির প্রাথমিক শক্তি 0.1 MeV হলে, এরা পারস্পরিক বিকর্ষণ বল কাটিয়ে সংযোজিত হতে পারে । এর জন্য উচ্চ উষ্ণতা সৃষ্টির প্রয়োজন হয় । প্রায় 107 কিংবা 108 ডিগ্রী সেলসিয়াস উষ্ণতাতেই সংযোজন পদ্ধতি সম্ভব । একমাত্র নিউক্লীয় সংযোজনের দ্বারা এত উচ্চ উষ্ণতা সৃষ্টি সম্ভব হয় । যে কারণে, নিউক্লীয় সংযোজন থেকে শক্তি পেতে গেলে আগে নিউক্লীয় বিভাজন ঘটানোর প্রয়োজন হয় ।

উচ্চ উষ্ণতায় সংঘটিত এই নিউক্লীয় বিক্রিয়াকে তাপজ-নিউক্লীয় বিক্রিয়া (thermo-nuclear reaction) বলা হয় । বিজ্ঞানীরা মনে করেন এরূপ তাপজ-নিউক্লীয় বিক্রিয়ার ফলেই সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রের অভ্যন্তরে বিপুল পরিমাণ শক্তি উত্পন্ন হয় ।

*** 

 

Related Items

পর্যায় সারণির বর্ণনা

বিভিন্ন মৌলগুলিকে বিভিন্ন পর্যায়ে কীভাবে সাজানো যায় তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় নীচে দেওয়া হল । প্রথম পর্যায়- এই পর্যায়ে মাত্র দুটি মৌল H এবং He জায়গা পেয়েছে । সাধারণ উষ্ণতায় দুটি মৌলই গ্যাসীয় । এই পর্যায়কে অতি হ্রস্ব পর্যায় বলে । দ্বিতীয় পর্যায়- এই পর্যায়ে মোট আটটি মৌল আছে ...

পর্যায়, শ্রেণি ও উপশ্রেণি

আধুনিক পর্যায়-সারণিতে মেন্ডেলিফ, ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলিকে পর পর কতকগুলি অনুভূমিক সারিতে রাখেন । এর ফলে একই ধর্মের মৌলগুলি এক একটি উলম্ব স্তম্ভের মধ্যে পড়ে যায় । আবার মৌলগুলিকে এইভাবে সাজাবার ফলে যে অনুভূমিক সারিগুলি পাওয়া যায় ...

মেন্ডেলিফের পর্যায়সূত্র ও আধুনিক পর্যায়সূত্র

1869 খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ান বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ এবং পৃথকভাবে জার্মান বিজ্ঞানী লোথার মেয়ার মৌলগুলিকে তাদের ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ভর অনুসারে সাজিয়ে প্রায় একই সময়ে পর্যায়-সূত্র প্রকাশ করেন । বিভিন্ন মৌলের ভৌত এবং রাসায়নিক ধর্মগুলি ওদের পারমাণবিক ভর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ...

পর্যায় সারণির ত্রয়ী সূত্র ও অষ্টক সূত্র

জল, বায়ু, আকাশ, মাটি নিয়ে এই যে অসীম বিশ্বপ্রকৃতি - এর মাঝে কত না বৈচিত্র্য, কিন্তু এই বিভিন্ন বৈচিত্র্যের মাঝেও সেই অনাদিকাল থেকেই মানুষ খুঁজতে চেয়েছে ছন্দ খুঁজতে চেয়েছে মিল । পর্যায় সারণিও মানুষের বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টার একটি ফসল । রসায়ন বিজ্ঞানের ক্রমান্বয়ে ...

নিউক্লীয় বিভাজন (Nuclear fission)

যে নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় কোনো ভারী পরমাণু নিউক্লিয়াসকে উপযুক্ত শক্তিসম্পন্ন নিউট্রন কণা দ্বারা আঘাত করলে, ভারী পরমাণুর নিউক্লিয়াসটি বিভাজিত হয়ে দুটি প্রায় সমভর বিশিষ্ট টুকরায় পরিণত হয় এবং সেই সঙ্গে কয়েকটি নিউট্রন এবং প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হয়, সেই ঘটনাকে নিউক্লীয় ...