হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসের ধর্ম

Submitted by arpita pramanik on Sun, 02/24/2013 - 21:53

হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসের ধর্ম (Properties of Hydrogen Chloride) :

ভৌত ধর্ম:-

[i] হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) বর্ণহীন, শ্বাসরোধী, ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত, অম্লস্বাদ বিশিষ্ট গ্যাস ।  

[ii] হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস বাতাসের চেয়ে প্রায় 1.3 গুণ ভারী, এর বাষ্পীয় ঘনত্ব 18.25 ।

[iii] এই গ্যাস জলে অত্যন্ত দ্রাব্য, 0°C উষ্ণতায় এবং প্রমাণ চাপে 1 সিসি জলে 450 সিসি হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস (HCl) দ্রবীভূত হয় ।

[iv] হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড আর্দ্র বাতাসে সাদা ধোঁয়া উৎপন্ন করে ।

[v] 40 বায়ুমণ্ডলের চাপে ও 10°C উষ্ণতায় HCl গ্যাস তরলে পরিণত হয় ।  

[vi] তরল HCl গ্যাসের স্ফুটনাঙ্ক হল 83°C এবং  হিমাঙ্ক হল 113°C  ।

রাসায়নিক ধর্ম :-

[i] হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস (HCl) দাহ্য নয় বা দহনে সহায়ক নয় ।

[২] অ্যাসিড ধর্ম :- হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস সমযোজী যৌগ বলে, শুষ্ক অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে না, কিন্তু জলে দ্রবীভূত হয়ে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডে পরিণত হয় । কারণ HCl জলীয় দ্রবণে বিয়োজিত হয়ে H+ এবং Cl- আয়ন উৎপন্ন করে । সেইজন্য HCl -এর জলীয়দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করে ।

   [tex] HCl \rightleftharpoons {H^ + } + C{l^ - } [/tex] ; এটি একটি তীব্র একক্ষারী অ্যাসিড । হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসের জলীয় দ্রবণ নীল লিটমাসকে লাল করে । ক্ষারক বা ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্লোরাইড লবণ ও জল উত্পন্ন করে ।

     NaOH + HCl = NaCl + H2O

ধাতুর উপর ক্রিয়া :-

[i] Ca,  Zn,  Mg,  Fe, Al,  Sn প্রভৃতি ধাতুর সঙ্গে (তড়িৎ রাসায়নিক শ্রেণিতে যে ধাতুগুলি H2 -এর ওপরে আছে ) বিক্রিয়া ঘটে অ্যাসিডের হাইড্রোজেন প্রতিস্থাপিত করে এবং ক্লোরাইড লবণ উৎপন্ন করে ।

     Fe + 2HCl = FeCl2 + H2 ↑,   Mg + 2HCl = MgCl2 + H2 ↑,    2Al + 6HCl = 2AlCl3 + 3H2 ↑ 

[ii] লেড, কপার এবং সিলভারের সঙ্গে লঘু HCl -এর বিক্রিয়া হয় না, তবে বাতাস বা O2 -এর উপস্থিতিতে গাঢ় এবং উত্তপ্ত HCl -এর বিক্রিয়া ঘটে ক্লোরাইড লবণ এবং জল উৎপন্ন হয় ।   2Cu + 4HCl + O2 = 2CuCl2 + 2H2O

[iii] সোনা, প্লাটিনাম প্রভৃতি ধাতুর সঙ্গে কোনো অবস্থায় বিক্রিয়া হয় না ।

কার্বনেট লবণের সঙ্গে ক্রিয়া :- ধাতব কার্বনেট এবং বাই-কার্বনেটের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্লোরাইড লবণ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস (CO2) উৎপন্ন করে ।

     CaCO3 + 2HCl = CaCl2 + CO2 ↑+ H2O

     NaHCO3 + HCl = NaCl + CO2 ↑+ H2

অ্যামোনিয়ার সঙ্গে ক্রিয়া :-  হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস (HCl) অ্যামোনিয়ার সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের ঘন সাদা ধোঁয়া উৎপন্ন করে । এই বিক্রিয়া হল দুটি বর্ণহীন গ্যাসের বিক্রিয়ায় একটি কঠিন পদার্থ (NH4Cl) উৎপন্ন হওয়ার উদাহরণ ।

     NH3 + HCl = NH4Cl

জারক পদার্থের উপর ক্রিয়া :- MnO2, KMnO4, K2Cr2O7 প্রভৃতি জারক পদার্থ দ্বারা গাঢ় HCl জারিত হয়ে সবুজাভ হলুদ বর্ণের ক্লোরিন গ্যাস উৎপন্ন করে । এই বিক্রিয়াগুলিতে HCl জারক পদার্থগুলিকে বিজারিত করে । বিক্রিয়াগুলি HCl -এর বিজারণ ধর্মের উদাহরণ ।

     MnO2 + 4HCl = MnCl2 + Cl2 + 2H2O

নাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে ক্রিয়া :- তিনভাগ আয়তনের গাঢ় HCl -এর সঙ্গে একভাগ আয়তনের গাঢ় HNO3 মেশালে, উৎপন্ন অ্যাসিড মিশ্রণকে অম্লরাজ (aqua regia) বলে । বিক্রিয়ার ফলে নাইট্রোসিল ক্লোরাইড এবং জায়মান ক্লোরিন উৎপন্ন হয় । এতে সোনা এবং প্লাটিনাম দ্রবীভূত হয় ।

     3HCl + HNO3 = NOCl + 2Cl + 2H2O

ক্ষারকের সঙ্গে ক্রিয়া :- ক্ষারকের সঙ্গে বিক্রিয়ায় লবণ ও জল উৎপন্ন হয় ।

     NaOH + HCl = NaCl + H2O ;  Ca(OH)2 + 2HCl = CaCl2 + 2H2O

*****

Related Items

জীবনক্রিয়ায় জৈব যৌগের ভুমিকা

প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহের বেশির ভাগ অংশ জৈব যৌগ দিয়ে গঠিত । তাই জীব জগতে জৈব যৌগের দান অতুলনীয় । জীবন ক্রিয়ার সঙ্গে জৈব যৌগ গভীর ভাবে জড়িত । জীবদেহের জীবনক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য জৈব যৌগের ভূমিকা অপরিসীম । জীবজগতে প্রত্যেক জৈবিক ক্রিয়ার কারণ ...

জৈব যৌগ ও জৈব রসায়ন

কার্বনের যে সমস্ত যৌগ প্রধানত জীবজগতে উত্পন্ন হয় এবং যে সমস্ত যৌগে কার্বন পরমাণুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এবং বৃত্তাকার শৃঙ্খলে যুক্ত থেকে বিভিন্ন সমধর্মী যৌগের শ্রেণি গঠন করতে পারে, সেই সমস্ত যৌগকে সামগ্রিকভাবে জৈব যৌগ বলে ...

কয়েকটি বিশিষ্ট ধাতু-সংকর ও তার ব্যবহার

পিতল, কাঁসা, ব্রোঞ্জ, অ্যালুমিনিয়াম-ব্রোঞ্জ, জার্মান সিলভার, ডুরালুমিন, ম্যাগনেলিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল, বাসনপত্র, নল, টেলিস্কোপ, মূর্তি, ব্যারোমিটার, বিভিন্ন যন্ত্রের অংশ, তুলাদন্ড, বিমানের কাঠামো, জলের কল প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয় । ...

ধাতু সংকর (Alloy)

দুই বা ততোধিক ধাতু পরস্পর মিশে যে সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ উত্পন্ন করে, সেই কঠিন ধাতব পদার্থকে ধাতু সংকর বা সংকর ধাতু বলে । যেমন - তামা ও টিনের মিশ্রণে উত্পন্ন কাঁসা হল একটি সংকর ধাতু । অনেক ক্ষেত্রে ধাতু-সংকরে অধাতু থাকতে পারে । ...

তামা বা কপার (Copper)

অতি প্রাচীন কাল থেকে তামা বা কপারের ব্যবহার চলে আসছে । কানাডার লেক সুপিরিয়রের কাছে এবং সাইবেরিয়ার পর্বতে মুক্ত অবস্থায় তামা বা কপার পাওয়া যায় । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কপারকে বিভিন্ন যৌগরূপে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় । কপারের প্রধান আকরিকগুলি হল ...