Submitted by arpita pramanik on Mon, 04/08/2013 - 10:45

লোহা বা আয়রন (Iron) :

এর সংকেত— Fe,  পারমাণবিক সংখ্যা— 26,  পারমাণবিক ভর— 55.85,   যোজ্যতা— 2 এবং 3,    ঘনত্ব —7.85 গ্রাম/সিসি,  গলনাঙ্ক— 1530°C,   স্ফুটনাঙ্ক —2450°C  ।

উৎস : আয়রনের প্রধান আকরিকগুলি হল :  [i] ম্যাগনেটাইট (Magnetite) Fe3O4,   [ii]  রেড হেমাটাইট (Red Haematite) Fe2O3,    [iii] আয়রন পাইরাইটিস (Iron Pyrites) FeS2    [iv] সিডারাইট (Siderite) FeCO3

আয়রনকে প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না । পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রচুর আয়রনের আকরিক পাওয়া যায় । ভারতের বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশে লোহার আকরিক পাওয়া যায় । ভূ-ত্বকে আয়রনের পরিমাণ 4.12 শতাংশ ।

আয়রনের রাসায়নিক ধর্ম :

[১] বায়ুর সঙ্গে বিক্রিয়া (Reaction with air) :-

[i] শুষ্ক বায়ুর সঙ্গে লোহা বিক্রিয়া করে না ।

[ii] আর্দ্র বায়ুর মধ্যে লোহা রাখলে কিছু দিনের মধ্যে লোহার ওপরে হলুদ রঙের আস্তরণ পড়ে । একে মরচে (rust) বলে । মরচে হল জলযুক্ত ফেরিক অক্সাইড, 2Fe2O3, 3H2O । আয়রনের সঙ্গে বায়ুর অক্সিজেন এবং জলীয় বাষ্পের বিক্রিয়ায় মরচে উৎপন্ন হয় । বিশুদ্ধ লোহায় মরচে পড়ে না । 

[iii] বায়ু বা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে লোহাকে তীব্রভাবে উত্তপ্ত করলে জ্বলে ওঠে এবং ফেরোসোফেরিক অক্সাইড (Fe3O4) উৎপন্ন হয় ।

  3Fe + 2O2 = Fe3O4

[২] জলের সঙ্গে বিক্রিয়া (Reaction with water) :-

[i] সাধারণ উষ্ণতায় বিশুদ্ধ লোহার সঙ্গে জলের কোনো বিক্রিয়া হয় না ।

[ii] লোহিত তপ্ত লোহার উপর দিয়ে স্টিম চালনা করলে ফেরোসোফেরিক অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় ।

   3Fe + 4H2O = Fe3O4 + 4H2

[৩] ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া (Reaction with alkalis) :- সাধারণ অবস্থায় ক্ষারের সঙ্গে আয়রনের বিক্রিয়া হয় না । কিন্তু গাঢ় সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের সঙ্গে আয়রন বিক্রিয়া করে সোডিয়াম ফেরাইট এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে ।

    2Fe + 2NaOH + 2H2O = 2NaFeO2 + 3H2

কাস্ট আয়রন বা ঢালাই লোহা :- এটি একটি অশুদ্ধ লোহা । এর মধ্যে 2 থেকে 4.5 শতাংশ কার্বন থাকে । এছাড়া সামান্য পরিমাণে সিলিকন (Si),  ম্যাঙ্গানিজ (Mn),  সালফার (S) এবং ফসফরাস (P) থাকে ।

কাস্ট আয়রনের ব্যবহার : ছাঁচে ঢালাই করা দ্রব্য, যেমন— লোহার নল, আলোকস্থম্ভ, উনুনের শিক প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয় । এছাড়া রট আয়রন এবং ইস্পাত প্রস্তুতিতে কাস্ট আয়রনের বেশির ভাগ অংশ ব্যবহৃত হয় ।

স্টিল : এর মধ্যে কার্বনের পরিমাণ 0.15 থেকে 1.5 শতাংশ থাকে । স্টিলকে লোহিত তপ্ত করে জলে ডুবিয়ে আবার 200°C — 350°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে এর নমনীয়তা ও দৃঢ়তা বাড়ে । এই পদ্ধতিকে ইস্পাতের পানদান বলা হয় ।

স্টিলের ব্যবহার : রেল এবং ট্রামলাইন, গাড়ি, জাহাজ, কড়ি, নানরকম যুদ্ধাস্ত্র, যন্ত্রপাতি, ছুরি, কাঁচি, ব্লেড, চাষের জন্য লাঙ্গলের ফলা, ট্রাক্টর প্রভৃতি প্রস্তুত করা হয় । করাত, স্থায়ী চুম্বক, সেতু, গাড়ির স্প্রিং প্রভৃতিতে স্টিল ব্যবহৃত হয় । এছাড়া স্টিলের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ অন্য ধাতু মিশিয়ে নানারকম সংকর স্টিল (alloy steel) উৎপন্ন করা হয় । যেমন :

[i] নিকেল স্টিল : নিকেল (Ni) 3.25% — রেলের পাটি এবং বিভিন্ন গাঠনিক কার্যে ব্যবহৃত হয় ।

[ii] ইনভার : নিকেল (Ni) 3.5% — পেন্ডুলামের রড, মিটার স্কেল, প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয় ।

[iii] ম্যাঙ্গানিজ স্টিল : ম্যাঙ্গানিজ (Mn) 12 - 14% — রেল লাইন, সিন্দুক, পাথর চূর্ণ করার মেশিন, হেলমেট ইত্যাদি প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয় ।  

[iv] কলংকহীন ইস্পাত বা স্টেইনলেস স্টিল : ক্রোমিয়াম (Cr) 10% - 15% — অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ছুরি, কাঁচি, এবং বাসন প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয় ।

[v] ডুরায়রন : সিলিকন (Si) 16% — অ্যাসিড রাখার পাত্র রূপে ব্যবহৃত হয় ।

[vi] টাংস্টেন স্টিল : টাংস্টেন (W) 18% এবং ক্রোমিয়াম (Cr) 5% — যেসব যন্ত্র দ্রুত ঘোরানো হয়, সেসব যন্ত্র প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয় ।

রট আয়রন বা পেটা লোহা : এই জাতীয় লোহা অনেকটা বিশুদ্ধ । এর মধ্যে 0.1 থেকে 0.15 শতাংশ কার্বন থাকে ।

রট আয়রন বা পেটা লোহার ব্যবহার : তড়িৎচুম্বকের মজ্জা, তার, শিকল, পেরেক, ডায়নামো ও মোটরের ভিতরের অংশ, তালা-চাবি, ঢালাই করার জন্য লোহার রড প্রভৃতি প্রস্তুতিতে এবং ওয়েল্ডিং -এর কাজে ব্যবহৃত হয় ।

আয়রন পাইরাইটিসকে লোহার আকরিক বলা হয় না— কারণ : আয়রন পাইরাইটিস (Iron Pyrites) FeS2 থেকে সুলভে ও সহজে আয়রন নিষ্কাশন করা যায় না । পক্ষান্তরে, সালফিউরিক অ্যাসিডের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আয়রন পাইরাইটিস SO2 প্রস্তুত করতে ব্যবহার করা হয় । FeS2 -কে অতিরিক্ত বায়ুতে পোড়ালে SO2 উৎপন্ন হয় ।

যথা: 4FeS2 + 11O2 = 2Fe2O3 (ফেরিক অক্সাইড) + 8SO2↑ । অতএব, আয়রন পাইরাইটিস (FeS2) লোহার একটি খনিজ, কিন্তু লোহার আকরিক নয় ।

*****

Related Items

জীবনক্রিয়ায় জৈব যৌগের ভুমিকা

প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহের বেশির ভাগ অংশ জৈব যৌগ দিয়ে গঠিত । তাই জীব জগতে জৈব যৌগের দান অতুলনীয় । জীবন ক্রিয়ার সঙ্গে জৈব যৌগ গভীর ভাবে জড়িত । জীবদেহের জীবনক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য জৈব যৌগের ভূমিকা অপরিসীম । জীবজগতে প্রত্যেক জৈবিক ক্রিয়ার কারণ ...

জৈব যৌগ ও জৈব রসায়ন

কার্বনের যে সমস্ত যৌগ প্রধানত জীবজগতে উত্পন্ন হয় এবং যে সমস্ত যৌগে কার্বন পরমাণুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এবং বৃত্তাকার শৃঙ্খলে যুক্ত থেকে বিভিন্ন সমধর্মী যৌগের শ্রেণি গঠন করতে পারে, সেই সমস্ত যৌগকে সামগ্রিকভাবে জৈব যৌগ বলে ...

কয়েকটি বিশিষ্ট ধাতু-সংকর ও তার ব্যবহার

পিতল, কাঁসা, ব্রোঞ্জ, অ্যালুমিনিয়াম-ব্রোঞ্জ, জার্মান সিলভার, ডুরালুমিন, ম্যাগনেলিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল, বাসনপত্র, নল, টেলিস্কোপ, মূর্তি, ব্যারোমিটার, বিভিন্ন যন্ত্রের অংশ, তুলাদন্ড, বিমানের কাঠামো, জলের কল প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয় । ...

ধাতু সংকর (Alloy)

দুই বা ততোধিক ধাতু পরস্পর মিশে যে সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ উত্পন্ন করে, সেই কঠিন ধাতব পদার্থকে ধাতু সংকর বা সংকর ধাতু বলে । যেমন - তামা ও টিনের মিশ্রণে উত্পন্ন কাঁসা হল একটি সংকর ধাতু । অনেক ক্ষেত্রে ধাতু-সংকরে অধাতু থাকতে পারে । ...

তামা বা কপার (Copper)

অতি প্রাচীন কাল থেকে তামা বা কপারের ব্যবহার চলে আসছে । কানাডার লেক সুপিরিয়রের কাছে এবং সাইবেরিয়ার পর্বতে মুক্ত অবস্থায় তামা বা কপার পাওয়া যায় । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কপারকে বিভিন্ন যৌগরূপে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় । কপারের প্রধান আকরিকগুলি হল ...