ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium)

Submitted by arpita pramanik on Sun, 04/07/2013 - 07:41

ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium) :

ম্যাগনেসিয়ামের সংকেত— Mg,  পারমাণবিক সংখ্যা— 12,  পারমাণবিক ভর— 24.3,    যোজ্যতা— 2 ।

উৎস: ম্যাগনেসিয়ামকে প্রকৃতির মধ্যে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না । এর নানা রকম যৌগ প্রচুর পরিমাণে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় ।

ম্যাগনেসিয়ামের প্রধান আকরিকগুলি হল :-[i] ম্যাগনেসাইট (Magnesite) MgCO3 ,    [ii] ডলোমাইট (Dolomite) MgCO3,  CaCO3,  [iii] কার্নালাইট (Carnallite) MgCl2 , KCl,  6H2O  ।

ভারতে তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকে ম্যাগনেসাইট আকরিক পাওয়া যায় । কার্নালাইট এবং ম্যাগনেসাইট আকরিক থেকে ধাতব ম্যাগনেসিয়াম নিষ্কাশন করা হয় । অনার্দ্র MgCl2 -এর গলিত অবস্থায় 700°C -এ তড়িৎ বিশ্লেষণ করলে ক্যাথোডে ম্যাগনেসিয়াম ধাতু মুক্ত হয় ।

রাসায়নিক ধর্ম :-

[১] বায়ুর সঙ্গে বিক্রিয়া (Reaction with air) :-

[i] শুষ্ক বায়ুর সঙ্গে ম্যাগনেসিয়াম কোনো বিক্রিয়া করে না ।

[ii] জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুতে ম্যাগনেসিয়াম রেখে দিলে এর পর ধীরে ধীরে ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইডের (MgO) -এর সুক্ষ্ম আস্তরণ পড়ে, যা ধাতুটিকে বিবর্ণ করে ।

[iii] বায়ুর মধ্যে দহন করলে ম্যাগনেসিয়াম উজ্জ্বল সাদা শিখায় জ্বলে । এই সাদা আলোর রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাবার ক্ষমতা দেখা যায় । বায়ুতে দহনের ফলে ম্যাগনেসিয়াম (Mg) বায়ুর অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যথাক্রমে ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড এবং ম্যাগনেসিয়াম নাইট্রাইড উৎপন্ন করে ।

যথা—  2Mg + O2 = 2MgO ;     3Mg + N2 = Mg3N2

বিশুদ্ধ O2 -এর মধ্যে দহন করলে সাদা ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড উৎপন্ন হয় ।

[২] জলের সঙ্গে বিক্রিয়া (Reaction with water) :-

[i] সাধারণ উষ্ণতায় ম্যাগনেসিয়ামের সঙ্গে জলের বিক্রিয়া হয় না ।

[ii] ফুটন্ত জলের সঙ্গে ম্যাগনেসিয়াম চূর্ণ বিক্রিয়া করে ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে । উত্তপ্ত ম্যাগনেসিয়াম (Mg) -এর ওপর দিয়ে স্টিম চালনা করলেই জ্বলে ওঠে এবং ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড (MgO) এবং হাইড্রোজেন গ্যাস (H2) উৎপন্ন হয় ।

যথা—  Mg + H2O = MgO + H2

[৩] ক্ষারের সঙ্গে ম্যাগনেসিয়ামের কোনো বিক্রিয়া হয় না

ব্যবহার :-

[i] পরীক্ষাগারে বিজারক রূপে এবং জৈব রসায়নে গ্রিগনার্ড বিকারকরূপে ম্যাগনেসিয়াম ব্যবহৃত হয় ।

[ii] বোরন এবং সিলিকন নিষ্কাশনে ম্যাগনেসিয়াম ব্যবহৃত হয় ।

[iii] ফটোগ্রাফির ফ্ল্যাশ বাল্ব ও সাংকেতিক আলো উৎপাদনে, বাজি ও বোমা প্রস্তুতে ম্যাগনেসিয়াম ব্যবহৃত হয় ।

[iv] হালকা ধাতু সংকর, যেমন— ম্যাগনেলিয়া (Mg + Al), তুলাদন্ড, এবং যানবাহনের কাঠামো প্রস্তুতে ম্যাগনেসিয়াম ব্যবহৃত হয় । ইলেকট্রন (Mg + Zn), বিমান এবং মোটর গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতিতে ম্যাগনেসিয়াম ব্যবহৃত হয় । ডুরালুমিন (Mg + Al + Cu + Mn), বিমান এবং মোটর গাড়ির যন্ত্রাংশ প্রস্তুতিতে ম্যাগনেসিয়াম ব্যবহৃত হয় ।

[v] ম্যাগনেসিয়ামের কয়েকটি যৌগ ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় ।

ম্যাগনেসিয়াম ধাতুতে আগুন লাগলে সেই আগুন কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) গ্যাস দিয়ে নিভানো যায় না কেন ?

ম্যাগনেসিয়াম ধাতুতে আগুন লাগলে CO2 গ্যাসের সাহায্যে সেই আগুন নেভানো যায় না, কারণ জ্বলন্ত ম্যাগনেসিয়াম CO2 গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড (MgO) ও কার্বন উৎপন্ন করে, যথা— 2Mg + CO2 = 2MgO + C

*****

Related Items

কয়েকটি জারক ও বিজারক পদার্থ

কয়েকটি জারক পদার্থ - ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড, নাইট্রিক অ্যাসিড, অক্সিজেন, পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড, ওজোন, পটাশিয়াম ডাই-ক্রোমেট, হাইড্রোজেন পারক্সাইড, ফ্লুওরিন, রেড লেড, তরল ব্রোমিন, ক্লোরিন, কয়েকটি বিজারকের বিজারণ ক্ষমতার উদাহরণ ...

জারণ বিজারণের ইলেক্ট্রনীয় মতবাদ

জারণ ও বিজারণ রসায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া । সাধারণত কোনো মৌলে বা যৌগে অক্সিজেনের সংযুক্তি বা কোনো যৌগ থেকে হাইড্রোজেনের বিযুক্তিকে জারণ এবং কোনো মৌলে বা যৌগে হাইড্রোজেনের সংযুক্তি বা কোনো যৌগ থেকে অক্সিজেনের বিযুক্তিকে বিজারণ বলা হয় । ...

সমযোজী যৌগগুলির বৈশিষ্ট্য

সাধারণ তাপমাত্রায় বেশির ভাগ সমযোজী যৌগ সাধারণত তরল কিংবা গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে কিন্তু বেশি আণবিক গুরুত্ববিশিষ্ট সমযোজী মৌল বা যৌগগুলি কঠিন বা তরল হয় । সমযোজী যৌগে সমযোজী বন্ধন দৃঢ় প্রকৃতির, তার ফলে অণুগুলি স্থায়ী হয় । ...

ইলেক্ট্রনীয় যোজ্যতা বা তড়িৎ-যোজ্যতা

সাধারণ অবস্থায় পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন এবং প্রোটন সংখ্যা সমান হওয়ার জন্য পরমাণু নিস্তড়িৎ হয় । সাধারণ নিয়মে পরমাণুর সংযোগ হওয়ার সময় ধাতুর পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন এবং অধাতুর পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে । ফলে কোনো পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় ...

সমযোজ্যতা (Covalent)

সমযোজ্যতা: অনেকক্ষেত্রে দুটি পরমাণু সংযোগের সময় প্রত্যেক পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষ থেকে একটি করে ইলেকট্রন এসে ইলেকট্রন জোড় সৃষ্টি করে । এই রকম এক বা একাধিক ইলেকট্রন জোড় উভয় পরমাণুর মধ্যে সাধারণভাবে থেকে যৌগ গঠন করে । এই ধরনের যৌগ তৈরি হওয়ার ...